ভালো আছো তো ? ভাল থেকো
প্রচ্ছদ
খবরের কাগজটি রেখে ছাদে উঠে এসে দেখে শ্রীমতি দ্বিধা সেনগুপ্ত যোগা করছেন। স্বামী দেবদূত
সেনগুপ্ত একটি ব্যাংকের এম.ডি।বেশিরভাগ সময় ভারতের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান।মিসেস সেনগুপ্ত এখানে
একটি কলেজে অধ্যাপনার কাজ করেন । সুখী পরিবার । কষ্টের মধ্যে শুধু ছোটমেয়েটি চাকরীসূত্রে
দিল্লিতে একা থাকে।প্রথম সাক্ষাতের দিন প্রচ্ছদ যখন তাকে ম্যাডাম বলে ডাকা শুরু করেছিল
তখন তিনি একগাল মিষ্টি হেসে বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু তোমায় প্রচ্ছদ বলেই ডাকব।বয়সে আমি তোমার চেয়ে বড়ই হবো,অনেক বড়’। প্রচ্ছদের উত্তর ছিল,’ শুধু
বয়সে নয়,বিদ্যাবুদ্ধি
সবকিছুতেই আপনি আমার চেয়ে বড় তাই তুমি তো ডাকতেই পারেন।তাছাড়া তুমির মাঝে একটি আন্তরিক
টান আছে’ । সেনগুপ্ত গালে টোল ফেলে হাসির ঝঙ্কার তুলে বলেছিলেন ‘তাই’ ? তারপর সিড়ি দিয়ে নেমে যেতে যেতে বলেছিলেন, ‘সময় হলে বাসায় আসবেন।গল্প করা যাবে’।
মিসেস সেনগুপ্তের ব্যক্তিত্ব,শিক্ষারদ্যুতি,কথাবলার ধরণ,কন্ঠস্বর আর নিখুঁত বাংলা উচ্চারণ প্রচ্ছদকে সেদিনই একটি অজানা অচেনা
মুগ্ধতার ঘোরে ফেলে দিয়েছিল।প্রচ্ছদ একপলক দেখেনিল দ্বিধা সেনগুপ্ত যোগায় সম্পূর্ন
মগ্ন চোখ বন্ধ করে প্রাণায়াম করছেন। প্রচ্ছদ যে ছাদে উঠেছে তিনি খেয়াল করলেও যোগা শেষ
না করে যে কোনরকম কথা বলবেন না প্রচ্ছদ জানে । প্রচ্ছদ কে তিনি বহুদিন বলেছেন যোগা
করতে কিন্তু প্রচ্ছদ ঐ পথ মাড়ায়নি আজো। ইদানীং মিসেস সেনগুপ্তের সাথে প্রচ্ছদের প্রায়ই
ফোনালাপ হয় । অনেকক্ষণ কথা হয় । দেশ,সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি কোন আলাপই বাদ যায় না কখনো কখনো ধর্ম কিংবা খেলাও
ফোনালাপের বিষয় হয়ে ওঠে ।
ভাবনার ঘোর কেটে গতে, কানে ভেসে আসে মিসেস সেনগুপ্তের
কন্ঠ,’চলো চা খাবে আজ আমার সাথে’। প্রচ্ছদ কিছুটা ইতস্ততা করলেও লাবন্যময়ী মিসেস সেনগুপ্তের
পেছন পেছন মিসেস সেনগুপ্তের ফ্লাটে গিয়ে হাজির।সাদা টাওয়ালে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,‘বাব্বাহ!এলে তাহলে!বসো,বসো।আমি
জাষ্ট ওয়াশ হয়ে আসচ্ছি’। প্রচ্ছদ সোফায় বসতে যাবে অমনি তিনি হা হা করে উঠলেন , ওখানে
না । ওখানে না । এই দিকটায় বসো তাহলে তোমায় ভালো করে দেখা যাবে’।প্রচ্ছদ তার ইশারায়
বোবামুখে জানালার দিকে মুখ করা একটি সোফায় গিয়ে বসে।তিনি স্মিত হেসে চলে যান।প্রচ্ছদ
উঠে গিয়ে লাইব্রেরীর বইগুলো দেখতে থাকে । কিছুক্ষণ পরেই একটা ট্রেতে দুটি কফি মগ নিয়ে
এসে মিসেস সেনগুপ্ত হাজির । বসলেন প্রচ্ছদের উল্টোদিকে ।
-কফিতে অরুচি নেই নিশ্চয়?
নাও,খাও । আমি তো বেশ সশব্দ, প্রচুর কথা বলি । তুমি দেখি পুরো উল্টো,প্রায় নিঃশব্দ । প্রচ্ছদের মুখে এক চিলতে হাসি খেলে গেলো।মিসেস সেনগুপ্ত
বলে চলেন,-তুমি
খুব পড়ালেখা করো।কী ধরনের বই পড়ো ? প্রচ্ছদের বিনয়ী উত্তর,না না তেমন খুব আর পড়া হয় কোথায়?ধরনের কথা বলতে গেলে যখন যা পাই তাই পড়ি । আপনার সংগ্রহে বেশ কিছু না
পড়া ভাল বই আছে।বঙ্কিম রচনা সমগ্র'র দ্বিতীয় খন্ডের পাতায় 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি'১২দফা নিবেদন পেশ করা আছে । পড়েছেন নিশ্চয় ? বঙ্কিমের চতুর্থ দফায় তিনি বলছেন-'যাহা সত্য,ধর্মবিরুদ্ধ,পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা স্বার্থ সাধন যাহার উদ্দেশ্য,সে সকল প্রবন্ধ কখনো হিতকর হইতে পারে
না,সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য্
। সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য । অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী ধারণ মহাপাপ।' –‘তুমিও তো লেখালেখি কর। মুক্তধারার লেখা,ধর্মের কুসংস্কার আর মৌলবাদ নত্সাতের লেখা!
-আরেব্বা,আপনি তো দেখছি আমার ঠিকুজি পর্যন্ত জেনে বসে আছেন।তবে তাই বলে লেখক
ভাবলে ভুল করবেন । যেমন অনেকেই বঙ্কিম সত্য ও ধর্ম এই দুটো শব্দকে পাশাপাশি ব্যবহার
করে যে বার্তাটি দিতে চেয়েছেন তা যে ধর্ম বলতে রিলিজিয়ন বলেননি তা বুঝতে যেমন ভুল করে
আমি তেমনি লেখক মিথ ভাঙার,মুক্তচেতনার লেখালেখির চেষ্টা করি আর কি। হা হা করে হেসে উঠলেন
মিসেস সেনগুপ্ত । -তাই
বা কম কী ? আমার
সৌভাগ্য একজন লেখকের সঙ্গে অন্তত সখ্যতা হয়ে গেল।
কফির
মগ কখন যে শেষ,দুজনের
কেউ খেয়াল করেনি । সেদিনকার সাক্ষাৎ পর্বও শেষ।
এরপর
দুজনের দেখা সাক্ষাৎ,টেলিফোনে
গল্পগুজব প্রায় দৈনিক রুটিনের মধ্যে চলে আসে । গল্পগুজবের সবটা জুড়ে থাকে কে কী বই
পড়েছে, প্রচ্ছদ
কি লিখলো তা পড়ে শোনানো । মতামত, আলোচনা,সমালোচনা এইসব চলতে থাকে ।
মাসখানেক
পর দ্বিধা একদিন বললেন প্রচ্ছদ একটা উপকার করবে ?
-কী উপকার ? শুনেছি এইসময়টায় জাতিংগায় পাখিরা নাকি সুইসাইড করে । যেতে মনটা খুব
টানছে । কিন্তু একা একা..সঙ্গে যাওয়ার মতো তো নির্ভরযোগ্য কেউ নেই।
-ঠিক আছে ।কবে যেতে চান ?
-তোমার যেদিন সময় হয় । সপ্তাহের মধ্যে মিসেস সেনগুপ্তকে
নিয়ে প্রচ্ছদ ট্রেনে রওনা হয়ে যায় । প্রচ্ছদ নিজ হাতে দ্বিধা সেনগুপ্তের বিরাট ব্যাগটা
স্কুটারে টেনে তোলে। দুজন পাশাপাশি বসে। প্রচ্ছদ একটু দুরত্বে রেখে সিটিয়ে বসে আছে
। তিনি বলেন,এদিকে
সরে এসো।আরাম করে বসো।প্রচ্ছদ সহজ হতে চেষ্টা করে । ট্রেনের বার্থ রিজার্ভেশনসহ টিকিট
সে কেটে নিয়ে গিয়েছিল । দুজন গৌহাটি প্ল্যাটফর্মের একটি জায়গায় গিয়ে বসে।প্রচ্ছদ জিজ্ঞেস
করে, ব্যাগে এতকিছু কী নিয়েছেন?মিসেস সেনগুপ্তর উত্তর,আর বলো কেন ?
মেয়েদের যে অনেক কাপড় চোপড় লাগে । বলেই তিনি ব্যাগের ভেতর
থেকে একটা টিফিনের বাটি বের করলেন । বাটির মুখ খুলে প্রচ্ছদের সামনে ধরে বললেন,তোমার জন্য একটু খাবার এনেছি।জানি তুমি
সাড়ে আটটা,নয়টার
মধ্যে ডিনার সারো । আমি তো সন্ধ্যা লাগতেই সে পর্ব শেষ করে ফেলি । তোমার ডিনার টাইম
চলছে এখন এটা খেয়ে নাও।প্রচ্ছদ এক পলক তাকিয়ে থেকে বলল,আপনি আবার এই কষ্ট করতে গেলেন কেন ?
ট্রেনেই তো খাবার পাওয়া যেত । দ্বিধার ঠোঁটে মুচকি
হাসি । প্রচ্ছদ সলজ্ব হয় ।
পরদিন জাতিংগা পৌঁচ্ছে দুজনের জন্য দুটি সিঙ্গেল
রুম । তারপর ফ্রেশ হয়ে বিকালে ওরা বের হলো।ঠান্ডা বেশ আজ এখানে । রাতের আঁধারে উড়ে
আসা পাখিদের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখতে দেখতে দ্বিধাসেনগুপ্ত বললেন, ‘এই যে একে একে ঝাঁপিয়ে পড়ছে একে তুমি
কিভাবে বিশ্লেষণ করবে’ ? প্রচ্ছদ কি বলবে বুঝে পায়না আনমনে বলে ‘হয়ত প্রেম কিংবা আত্মসমর্পন’।
মিসেস সেনগুপ্ত হেসে বললেন সব প্রেম কিংবা আত্মসমর্পনেই কি আগুন থাকে?নাকি পাখিগুলো তার সঙ্গীটিকে বোঝাতে না
পেরে অব্যক্ত কথা বুকে মরে যায় ? কে জানে? প্রচ্ছদের উত্তর, ‘চলুন ফেরা যাক রাত অনেক হলো’ । রাতে খেতে বসে দ্বিধাই কথা পাড়ে ঊণকুটি
যাবে প্রচ্ছদ ? এসেছি যখন এতদূর আগরতলা,কৈলাশহর,ঊণকুটি ঘুরে যাই’।
পরদিন
আগরতলা পৌঁচ্ছে বিলাসী রেষ্ট হাউজে উঠল দুজন তারপর সারাদিন আগরতলা ঘুরে রাতে রওনা হলো
কৈলাশহর।কৈলাশহর যখন পৌঁচ্ছালো তখন মাঝদুপুর ঊনকুটি রেষ্ট হাউজে কোন সিঙ্গেল রুম নেই
অগত্যা একটি ডবলরুম নিলো ওরা দুজন । হোটেলের লবি থেকে যেদিকে তাকানো যায় কাঁটাতার ।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর কামরায় বসে অনেকক্ষণ গল্পগুজব হলো।তিনি বিছানায় বসে আর প্রচ্ছদ
কাছাকাছি একটি চেয়ারে । হালকা গল্পগুজবই হচ্ছিল । প্রচ্ছদ যে উগ্রবাদী আর মৌলবাদ নিয়ে
কাজ করছে তা নিয়ে হাসিঠাট্টাও চলছিল।
সহসা
গল্পের মাঝে মিসেস সেনগুপ্ত আত্মজীবন ও মেয়েটিকে একা এত দূরে ফেলে রাখার কথা উঠতেই
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।সে কান্না আর থামে না।প্রচ্ছদ নিজ আসনে বসে বিব্রত । বিছানায় উঠে
আসে হাত দিতে গিয়েও সরিয়ে নেয় । ব্যাপারটা দ্বিধার চোখ এড়ায় না । প্রচ্ছদ ফিরে যায়
চেয়ারে । নানা কথায় সান্ত্বনা দিয়ে অবশেষে তাকে নিবৃত্ত করতে পারল । বিছানায় শুয়ে প্রচ্ছদের
ঘুম আসেনা। এক ঘরে এক বিছানায় , হাত বাড়ালেই প্রিয় মানবী, নিয়ন আলোয় গোটা ঘর জুড়ে
মায়াবী রাত । বুকের ভেতরে ধস নামার শব্দ শুনে প্রচ্ছদ । রাতের আঁধারে উড়ে আসা পাখিদের
আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার শব্দ শুনে যেন বুকের ভেতর । নিয়ন রাত,আগুন,পাখি –গলা শুকিয়ে
কাঠ ।
-‘তুমি
উগ্রপন্থী, মৌলবাদ নিয়ে লেখা ছেড়ে দাও প্রচ্ছদ’। আধো আঁধারে দ্বিধার কণ্ঠস্বর ভেসে
এলো ।‘কেন ? আপনি তো জানেন আমি কোন ধমকির
কাছেই মাথা নিচু করি না ‘। কানের কাছে ক্যাঁতরানো বুকের ফিসফাস; ‘আমার ভয় করে ।
তোমাকে হারাতে চাই না প্রচ্ছদ’।প্রচ্ছদ চমকে উঠে। ঘর জুড়ে কেবল পাখিদের দাপাদাপি ।
আকাশ ছোঁয়া আগুণ ও রঙ –বেরঙ এর হাজারো পাখি ।এই শীত রাতে প্রচ্ছদ ঘেমে উঠে ।কানের
কাছে কার যেন গরম শ্বাস ।-‘আমি মরতে ভয় পাই না’। প্রচ্ছদ বলার চেষ্টা করে । কিন্ত
তার আগেই একটি কোমল উষ্ণ হাত তার ঠোঁট চেপে ধরে ।-‘ না বোলো না । তোমার কিছু হলে
আমার...।।‘
কথা
শেষ হয় না । রাত গভীর হয় ।
রাত
না পোহাতেই প্রচ্ছদের শরীরে মিসেস সেনগুপ্তের হাত।চোখটা সবেই লেগেছে প্রচ্ছদের দ্বিধার
পরশে ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে প্রচ্ছদ হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপার?মিসেস সেনগুপ্ত কোনো ভূমিকা না করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন । প্রচ্ছদ ঠিক
কি ঘটতে যাচ্ছে ভাবতে থাকে তক্ষুনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে দ্বিধা,চলো একটু মর্নিং ওয়াক হয়ে যাক।প্রচ্ছদ
ঘোর কাটিয়ে থতমত করে বলে হ্যাঁ চলুন । কিন্তু কয়টা বাজে ঘড়ির কাটা তখন জানান দিচ্ছে
ভোর পাঁচটা বেজে দশ।প্রচ্ছদ একটা শার্ট গলিয়ে নিয়ে দরজায় তালা মেরে মিসেস সেনগুপ্তের
সাথে বেরিয়ে পড়ে। রেষ্ট হাউজের সামনের রাস্তায় দুজন পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।দুপাশে সীমান্তের
কাঁটা তার পাশে একটি বড় পুকুর,কালী মন্দির । হাঁটতে হাঁটতে প্রাতঃকালীন স্নিগ্ধতায় মিসেস সেনগুপ্ত
আবার কলকলিয়ে ওঠেন,খুব
সুন্দর তাই না প্রচ্ছদ । কী যে ভাল লাগছে হাঁটতে!প্রচ্ছদ তুমি খুব ভালো । চিরটাকাল এমন ভাল থেকো । কাল রাতের জন্য আই
এম সরি । ইট ওকে । কিন্তু আপনি তাড়া না দিলে এমন সকাল মিস করতাম । মিসেস সেনগুপ্তের
দ্রুতলয়ের হাঁটার সাথে সে যে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছেনা তা দ্বিধা ঠিকই হয়তো বুঝতে পেরেছেন
। তিনি আলতো করে প্রচ্ছদের একটা হাত নিজের হাতের মুঠিতে টেনে নেন । হাত ধরাধরি করে
হাঁটতে থাকেন । তার হাতের ওম পেয়ে প্রচ্ছদের শীতল হাত উষ্ণতায় ভরে ওঠে । মিসেস সেনগুপ্তের
এত সহজ সরল ব্যবহারে সে প্রায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে । ঊনকুটি ঘুরে দুদিন পর গৌহাটি ফিরে
আসে দুজন । স্টেশন থেকে স্কুটারে বাসায় । মিসেস সেনগুপ্তের আবার সেই কথা,অত জড়সড় করে দূরে কেন ? এদিকে সরে এসে আরামে বসো না।বাসার কাছাকাছি
আসতেই তিনি বললেন,আমি
মোড়ে নেমে রিক্সা নিয়ে নেবো।মোড়ে এসে স্কুটার থামল । প্রচ্ছদ একটা রিকশা ডেকে তার ব্যাগ
তুলে দিয়ে বলল, এবার
তুমি উঠো । সরি,আপনি
উঠুন । স্মিত হেসে তিনি রিকশায় উঠে বসলেন । হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে ভ্রুকুটি মেশানো
গলায় বললেন,তুমি
আমায় আজো কোন সম্বোধনে ডাকোনি তুমি চাইলে তুমি আমায় দ্বিধা ডাকতে পারো আর সেদিন একজন
লেখককে যে সসন্মানে নিয়ে গিয়েছিলাম আর আজ তাকে সেই সসন্মানে ফেরত দিয়ে গেলাম । তাই
না?ভালো থেকো বন্ধু । রিকশা
চলতে লাগলো স্কুটারের ভাড়া মিটিয়ে ফিকে হেসে হাঁটতে লাগলো প্রচ্ছদ ।
রিকশা
থেকে নামতেই লোকজনের দৌঁড়াদৌঁড়ি দেখলো । দ্বিধা কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন চিৎকার করে
করে দৌঁড়াচ্ছে প্রচ্ছদ কে কে যেন মেরে ফেলেছে । শালারা এই দিকেই দৌঁড়েছে তাড়াতাড়ি আয়
। দ্বিধা কিছু না ভেবেই দৌঁড়াতে লাগলো । অফহোয়াইট জামদানীর আঁচল ধুলোয় লুটায়।হাঁপাতে
হাঁপাতে যখন মোড়ে এলো দ্বিধা তখন মানুষের জটলা।মানুষ ঠেলে ভেতরে ঢুকে দ্বিধা দেখলো
রাজপথ প্রচ্ছদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে । প্রচ্ছদ কাতরাচ্ছে । দ্বিধা চিৎকার করতে থাকে
প্রচ্ছদ! প্লীজ
কেউ এম্বুলেন্স ডাকুন । ধুলো মাখা জামদানীর আঁচল টেনে ধরে প্রচ্ছদ অফহোয়াইট জামদানী
লাল হয়ে উঠছে পুলিশ এম্বুলেন্সের আওয়াজে প্রচ্ছদ আঁকড়ে ধরে দ্বিধাকে অস্ফুটে কি বলতে
চায় । এম্বুলেন্সে যখন তুলছে হাউমাউ করছে দ্বিধা প্রচ্ছদ তখন অনেক কষ্টে তর্জনীটা দ্বিধার
ঠোঁটে রাখে আর অনেক কষ্টে কন্ঠের গহীন থেকে অস্ফুটে বলে ব..ন্ধু তু..মি..ব..ড়..ভা..লো..থে..কো..লাল
বাতি জ্বলতে থাকে,দূর
থেকে দূরে হারিয়ে যায় আর হঠাৎ যেন ঝুপ করে গভীর অন্ধকার নেমে আসে । মোড়ে আর সাংবাদিকদের
ক্যামেরা আর পিচে কেবল ভাসছে 'মুক্তমনা লেখক মৌলবাদ ও উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ ও সুলেখক
প্রচ্ছদ দত্ত এইমাত্র এইখানে আততায়ীদের হাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন বাঁচা মরার
এই লড়াইয়ে প্রচ্ছদ কি ফিরবেন'।