গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৪

ডঃ সুজাতা ঘোষ

মেছো কোথাকার


       রাত প্রায় এগারোটা। ইন্দ্রজিতবাবু সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গ্রামের প্রায় অন্ধকার মাটির রাস্তা, দুপাশে নিচু জমিতে  বাঁশ আর আম বন। মাঝে মাঝে দু একটা বাড়ি। খড়দা ইষ্টিশন থেকে অনেকটা ভেতরে চলে এসেছেন উনি আর একটু গেলেই ফিশারি, তার পরে আর কিছুটা এগিয়ে গেলে পাতুলিয়া হাই স্কুল। সেখানেই মাঠের পাশে ওনার বাড়ি। 

গ্রামের দিকে সবাই তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরে। ফাঁক ফোকর দিয়ে হাল্কা আলো দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু একটা কুকুর দৌড়ে  আসছে পায়ের কাছে দাঁত বেড় করে। অন্ধকার আর কুকুর তাড়িয়ে সাইকেল চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। অফিসের পরে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য আরও কিছুক্ষণ  কাজ করে যখন বাড়ি ফেরার সময় হয়, তখন শেষ ট্রেনটা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কোলকাতা থেকে প্রায় দু ঘণ্টা লাগে এই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে এসে পৌঁছতে। কুকুরের   জন্য কখনো জোরে  আবার কখনো বা আস্তে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় দেখেন একজন মহিলা সামনে হেঁটে যাচ্ছেন। আগে খেয়াল হয় নি, ফিশারির রাস্তায় পড়তেই খেয়াল হয়েছে। যতই বেল বাজাচ্ছেন, মহিলা সরছেন না এক পা ও। সাইকেল থেকে এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে চলেছেন, সাদা শাড়ি পরা এই মহিলা। এবার বিরক্ত হয়ে স্পিড বাড়ালেন। তাতেও একই দূরত্ব বজায় রেখে একই গতিতে চলেছেন। আবার স্পিড কমিয়েও একই জিনিস লক্ষ্য করলেন। এ তো মহা বিপদ!

       এমন ঝামেলায় আগে কখনো পড়েননি ইন্দ্রজিতবাবু। এভাবে কিছুটা দূর গিয়ে বাঁদিকের মাঠের কাছে আসতেই মহিলাটি মাঠের মধ্যে নেমে যান। এত রাতে একা এক মহিলা এখানে কি করছেন? এই সন্দেহ মনে আসতেই ইন্দ্রজিতবাবু সাইকেল থামিয়ে মাঠে নেমে হাতের টর্চ জ্বেলে   ভাল করে দেখেন। না কোথায়ও কোন ঘর-বাড়ি নেই। মহিলাটি গেলেন কোথায়? কোন মানুষেরই চিহ্ন নেই কোথায়ও। এবারে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলেন উনি। জীবনে প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল। আর সময় নষ্ট না করে, তাড়াতাড়ি সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে গেলেন।
        বাড়ি ফিরে তাঁর বুড়ি পিসিমাকে সমস্ত ঘটনা বলতেই, পিসিমা আর কথা না বাড়িয়ে এক গ্লাস  জলে গরম লোহার ছ্যাকা দিয়ে ঐ জল খেতে দিলেন, আর বললেন আজ রাতে এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আজ আর অন্য কিছু খাবার দরকার নেই। ইন্দ্রজিতবাবু বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, এদিকে খিদেতে আমার অবস্তা খারাপ আর আমায় কিনা ঘুমতে হবে জল খেয়ে! কেন? বুড়ি পিসিমা বেশ সাবধানে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, ও হোল “মেছো ভূত”। ভগবান সহায় তাই তুমি বাড়ি ফিরেছ বাপু, না হলে যে কি হত --------।        রাম  - রাম  – রাম। 
 
       ইন্দ্রজিতবাবু বিছানায় শুয়ে রাতে স্ত্রীকে বললেন, আগে খাবার খেয়ে পরে ঘটনাটা বললে ভাল হত। খিদেতে আমার অবস্থা একদম খারাপ। আর এক গ্লাস জল খেয়ে ঘুমতে হবে ঐ মহিলার জন্য। ওনার স্ত্রী মজা করে নাকি সুরে বলে উঠলেন, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়, না হলে এসে ঘাড় মটকাবে। ইন্দ্রজিতবাবু রাগের ভাঙ্গি করে স্ত্রিকেই বললেন “ মেছো কোথাকার”।।