সেদিন যা ঘটেছিলো
ট্রেন
ছুটছে । মানুষটাও ছুটছে সমান তালে । আতঙ্কে মুখ নীল হয়ে গেলেও সে ছুটেই চলেছে
সামনের দিকে । উপায় নেই থেমে যাবার । মানুষটার বুকের ভিতরটা হাঁকপাঁক করছে একমুঠো
বাতাসের জন্য । উপায় নেই একটু থেমে দম নেয় । সে এখন ছুটছে এক বিন্দু আশার পিছনে ।
আরও ক’টা দিন বেশী বেঁচে থাকার আশায় ।
বাপ-মা মরা
মানুষটা সেদিনই ছুটতে শুরু করেছিলো ওকে যেদিন বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো ।
মানুষটা তারপর থেকে কেবলই ছুটে চলেছে বেঁচে থাকার একবুক ইচ্ছে নিয়ে । ছুটে চলেছে
দু’মুঠো ভাতের পিছনে । ছুটে চলেছে আরও একটা নিশ্চিন্তের রাত কাটানোর আশায় ।
আজও তেমনই
এক নিশ্চিন্তের রাত কাটাতে চেয়ে ট্রেনের সাথে ছুটতে শুরু করেছে । ট্রেন তাকে
প্রলুব্ধ করে নিজের গতি বাড়িয়ে দেয় । মানুষটাও ছাড়বে না । লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সমান
তালে । না লড়াই করে যে টিকে থাকা যায় না এই নির্মম দুনিয়ায় । ট্রেনের সাথে ছুটতে
ছুটতে মানুষটা একসময় হারিয়ে গেল ভুগর্ভস্থ ট্যানেলের অন্ধকারে । তারপর চিরতরে
মুছেও গেল পৃথিবীর বুক থেকে । যেখানে গিয়ে পৌঁছুলো সেখানে বাঁচার জন্য আর লড়াই
করতে হবে না তাকে । জাহির করতে হবে না নিজের অস্তিত্ব । ভুগতে হবে না অস্তিত্বের
সংকটে ।
হাতের কাজ
গুছিয়ে শেষ করে ট্রেনটা এবার দম ফেলার জন্য দুম করে দাঁড়িয়ে পড়লো প্রায়ান্ধকার
ট্যানেলের ভিতর । ট্যানেলের বাইরে অর্থাৎ মেট্রোস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তখন কয়েকশো
মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ছোটাছুটি জুড়ে দিয়েছে । এবং সেই সুযোগে রাত
ক্রমশ গভীর হয়ে চলেছে ।