নদীর গল্প
যে গল্পই বলি সবই কেমন দুঃখে সেলাইকরা। দুঃখের গল্প শুনতে চায় কে?
শোনাব বলে নদীর কোলে পা ছড়িয়ে বসতেই সে বললে---
আমার কাছে শোন।
গল্প বলে নদী। সেসব গল্পে নদীর
ওপর রেলের ব্রিজ আছে, বালিবোঝাই
ট্রাক গেছে একের পর এক, বিধবা
জোছনার মাথায়-জটা বুড়ি
মা এক আছে, সিমেন্ট
কারখানার লম্বা দেয়ালের পশ্চিম হাতায় নিশিন্দাগাছগুলি পেরিয়ে একটা ভাঙা জায়গাও
আছে।
অন্ধকার জড়িয়ে ধরলে ঘরের দিকে
যাই। পেছনে দেখি নদী। সে বলে--- আরও গল্প আছে। তখন তার পায়ের কাছে মাথা রাখতে হয়।
নদী বলতে থাকে---
গেঁড়িগুগলি কুড়িয়ে নিয়ে বলাই মাইতির পুকুরধার থেকে রাধুর মা
মাজার ব্যথা সামলে যখন ওঠে, সন্ধে হবে
হবে, আহাম্মক চাঁদ একখান আকাশে। তার
আলো পালং শাকের খেতের ওপর, আর অচেনা
কটা লোক যেদিকটায় কুঁদরুর ফুল সেদিনমাত্র ধরেছে তার থেকে দুহাত দূরে হিমেভেজা
ধনেপাতার চাদরের ওপর জোছনার বোবা মেয়েকে আছাড় দিয়ে ফেলল।
বলাই মাইতির ক্ষেত থেকে শসা আর
পালং চুরি করবে বলে মেয়েটা এসেছিল। লোকগুলোর পরনে লুঙ্গি,
গায়ে ছেঁড়া সোয়েটার, মাথা অব্দি বালি লেগে।
আমি অধীর হই---
কীসব গল্প বলিস!
--- শুনে নে। বেশিদিন শ্বাস নিতে পারব না। হাজার হাজার গল্প পেটের নিচে হারিয়ে যাবে কাল। হাটে যাবার সুবিধে নেবে বলে শীতের সময় জল শুকিয়ে যাওয়ায় আমার বুকে রাস্তা হচ্ছে দেখিস নি?
--- কী বলো গো!
--- শুনে নে। বেশিদিন শ্বাস নিতে পারব না। হাজার হাজার গল্প পেটের নিচে হারিয়ে যাবে কাল। হাটে যাবার সুবিধে নেবে বলে শীতের সময় জল শুকিয়ে যাওয়ায় আমার বুকে রাস্তা হচ্ছে দেখিস নি?
--- কী বলো গো!
নদী গল্প শোনাতে থাকে---
রেলটাউনে লোকের বাড়ি চুনকাম করতে যায় গজুদের ছোট ভাই গনশা
তখন রেললাইন ধরে ফিরতেছিল। কিছুই জানা নাই। পার্টির লোক তাকেই ধরে পুলিশে দিল।
পাশের গাঁয়ে থাকে বলে গনশা তবে মেয়েটাকে চিনত।
রাধুর মা সবটুকুন দেখেছে। মুখ
খুললেই পুলিশমুলিশ হবে ভেবে কাউকে কিছু বলবে না ঠিক করলেও গনশার মার কান্না দেখে
থাকতে পারে নি। ব্যস। সিমেন্ট কারখানার লম্বা দেয়ালের পশ্চিমে যে অংশটা ভাঙা
সেখানেই নিশিন্দাদের নেড়া ছায়ায় তাকে কজন পরের সোমবার মাঝদুপুরে দাঁড় করিয়ে ভয়
দেখাল--- মেরে মুখ ভেঙে দিব।
একজন তার হাত ধরে টানছে।
রাধুর মা বেপরোয়া--- রেপ করবি? বাপকে ডাক। ডাক।
স্কুলে ফ্রিতে সাইকেল পেয়ে যেসব মেয়ে খুব খুশি তাদের কজন যাচ্ছিল পথ দিয়ে। থামল না।
একজন তার হাত ধরে টানছে।
রাধুর মা বেপরোয়া--- রেপ করবি? বাপকে ডাক। ডাক।
স্কুলে ফ্রিতে সাইকেল পেয়ে যেসব মেয়ে খুব খুশি তাদের কজন যাচ্ছিল পথ দিয়ে। থামল না।
শুকনো শুকনো ডালপালা মাথায় নিয়ে
সেখান দিয়েই জোছনার মাথায় জটা বুড়ি মা। রাধুর মার পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে---
রেপ করবি? আমায় কর। ওলাওঠা হয়ে মর সবাই। তোদের পার্টির মা-বুন নাই ?
চাঁদের আলো সজনেফুলে ঝলমল করছে।
নদীর গল্প শেষ হয় না কিছুতেই।