সন্তান
আ….চৈ চৈ চৈ চৈ... গয়না, রাখু বাগদীর বৌ, হাঁসগুলোকে ডেকে নিতে নিতে আকাশের দিকে তাকাল একবার। আজ ঢালবে মনে হচ্ছে। অথচ আজই কিনা রাখু গঞ্জে গেল। এত করে বলা হল ছাতা নিতে, বাবুর মন উঠলনা ঐ ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে যাবার। ফুটো ছাতা নিয়ে কি হবে, কোন মাথাটা ঢাকবে শুনি? তা, আমাদের মত বাড়িতে কে নতুন ছাতা মাথায় দেয়! আকাশের দিকে চেয়ে মুখ ভারি হল গয়নার। ভিজেই ফিরবে মনে হচ্ছে।
ওঝা-গুণিনের কথায় পঞ্চানন তলার তারক ওঝার মুখ মনে পড়ে যায়। মুখটা মনে করলেই ভয় লাগে। চাষা পাড়ার মানিক চাষার বৌ বলেছিল---যা,অনেক তো করলি, একবার তারকের কাছে যা গয়না, বাবার খুব ভক্ত। ওখেনে গিয়ে হত্যে দিতে পারলে তোর কোল ভরবেই।‘ রাখুর মত ছিল না, রাত-বিরেতে বাড়ির মেয়েছেলে বাবার থানে একা শুয়ে থাকবে। ছেলে নাহয় নাই হল। তারপর যদি কোন বিপদ হয়! তবু গিয়েছিল, কিন্তু তারকের হাবভাব, কথা কেমন ভয় ধরিয়েছিল রাখুর মনে। গয়নাও বুঝেছিল, একাজ ঠিক হবে না। দুজনেই পালিয়ে এসেছিল। সেই থেকে আর কিছু করেনা গয়না। দেবতা যদি দেয় হবে, নইলে আর...একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে।
আ….চৈ চৈ চৈ চৈ... গয়না, রাখু বাগদীর বৌ, হাঁসগুলোকে ডেকে নিতে নিতে আকাশের দিকে তাকাল একবার। আজ ঢালবে মনে হচ্ছে। অথচ আজই কিনা রাখু গঞ্জে গেল। এত করে বলা হল ছাতা নিতে, বাবুর মন উঠলনা ঐ ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে যাবার। ফুটো ছাতা নিয়ে কি হবে, কোন মাথাটা ঢাকবে শুনি? তা, আমাদের মত বাড়িতে কে নতুন ছাতা মাথায় দেয়! আকাশের দিকে চেয়ে মুখ ভারি হল গয়নার। ভিজেই ফিরবে মনে হচ্ছে।
.
রাখু গ্রামের কামারশালায় মিস্তিরির সঙ্গে সাগরেদি করে, আবার মিস্তিরি না থাকলে টুকিটাকি, এটা-সেটা বানাতেও পারে। গয়না দু’বাড়িতে ঠিকে কাজ করে, হাঁসের ডিম বিক্রি করে। লোকের বাড়ি বাচ্চা-কাচ্চা হলে কাঁথা সেলাই করে দেয়। তার কাঁথা সেলাইয়ের সুনাম আছে। ভগবান তাকে তো আর দেয়নি! আবার ভাবে ছেলেপুলে দেয়নি বলেই কোনরকমে চলে যাচ্ছে, থাকলে কি যেত? মনে মনে ভাবে এসব কথা, কিন্তু নিজের দুহাতে, কোমরে অজান্তে হাত চলে যায়। কত তাগা-তাবিজ, মাদুলীতে ভরে আছে তার ইয়ত্তা নেই। ওঝা-গুণিন কোন কিছু করতে বাকি রাখেনি।
রাখু গ্রামের কামারশালায় মিস্তিরির সঙ্গে সাগরেদি করে, আবার মিস্তিরি না থাকলে টুকিটাকি, এটা-সেটা বানাতেও পারে। গয়না দু’বাড়িতে ঠিকে কাজ করে, হাঁসের ডিম বিক্রি করে। লোকের বাড়ি বাচ্চা-কাচ্চা হলে কাঁথা সেলাই করে দেয়। তার কাঁথা সেলাইয়ের সুনাম আছে। ভগবান তাকে তো আর দেয়নি! আবার ভাবে ছেলেপুলে দেয়নি বলেই কোনরকমে চলে যাচ্ছে, থাকলে কি যেত? মনে মনে ভাবে এসব কথা, কিন্তু নিজের দুহাতে, কোমরে অজান্তে হাত চলে যায়। কত তাগা-তাবিজ, মাদুলীতে ভরে আছে তার ইয়ত্তা নেই। ওঝা-গুণিন কোন কিছু করতে বাকি রাখেনি।
ওঝা-গুণিনের কথায় পঞ্চানন তলার তারক ওঝার মুখ মনে পড়ে যায়। মুখটা মনে করলেই ভয় লাগে। চাষা পাড়ার মানিক চাষার বৌ বলেছিল---যা,অনেক তো করলি, একবার তারকের কাছে যা গয়না, বাবার খুব ভক্ত। ওখেনে গিয়ে হত্যে দিতে পারলে তোর কোল ভরবেই।‘ রাখুর মত ছিল না, রাত-বিরেতে বাড়ির মেয়েছেলে বাবার থানে একা শুয়ে থাকবে। ছেলে নাহয় নাই হল। তারপর যদি কোন বিপদ হয়! তবু গিয়েছিল, কিন্তু তারকের হাবভাব, কথা কেমন ভয় ধরিয়েছিল রাখুর মনে। গয়নাও বুঝেছিল, একাজ ঠিক হবে না। দুজনেই পালিয়ে এসেছিল। সেই থেকে আর কিছু করেনা গয়না। দেবতা যদি দেয় হবে, নইলে আর...একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে।
হাঁসগুলো
খুপড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে সামনে একটা ভাঙ্গা টিন দিয়ে আটকে দিল মুখটা,যাতে
হাঁসগুলো বেরিয়ে যেতে না পারে। এই জল-বৃষ্টির দিনে বাইরে হাঁস ধরে আনা ভারি ঝকমারি। হাঁসগুলো ঢুকিয়ে বাইরের
বেড়ার উপরে যে দু-একটা জামা-কাপড় মেলা
ছিল তুলতে তুলতে দেখল দূরে কেউ একজন আসছে, দেখে মনে হল রাখুই। কিন্তু সঙ্গে একটা বাচ্চা। হাত ধরে পা পা করে যেন হেঁটে
আসছে।
কে আসছে, কে? বুক ভারি হয়ে আসছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না গয়না। ভেজা কাপড়গুলো বুকের
কাছে খামচে ধরে কোন এক অলৌকিক
কিছু দেখার আশায় তাকিয়ে রইল।
ঠিকে ঝি
গয়নার আজ আর বাবুদের বাড়ি কাজ করতে যাওয়া হল না।