গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯

নীহার চক্রবর্তী

নরবলি


ব্রার হুকটা খুলতে পারছিলো না কেতকী । অনেকক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ । ওর মনে হল পাশের ঘরে আছে রাহুল । মানে ওর বর । তাই তার-স্বরে ও কয়েকবার রাহুলের নাম ধরে ডাকতে থাকলো । কিন্তু ওর কোন টুঁ-শব্দ নেই ।

হঠা কেতকীর গলা শুনে বাড়ির কেয়ার-টেকার রতন বলতে বলতে ঘরে এসে ঢুকল,’ডাকছেন কেন,বৌদিমনি ? বাবু তো ঘরে নেই ।
কিন্তু ঘরে ঢুকেই রতন একেবারে চমকে গেলো । ও দেখল ওর বৌদিমনি প্যান্টি আর কালো রঙের একটা ব্রা পরে একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । সাথে-সাথে ও খুব লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো ।
কিন্তু কেতকী হঠাৎ খুব জোরে হেসে উঠে বলল রতনকে,’তুমি যখন এসেছ,তখন তুমিই পারবে । এদিকে এসো একবার । এসো,এসো ।
একেবারে মাথা নিচু হয়ে গেলো রতনের । এক সমুদ্র অস্থিরতা তখন ওর মধ্যে । বৌদিমণির কোন কথায় কখনো না করেনি ও । তাই কিছুক্ষণ ভেবে রতন ত্রস্ত-পায়ে কেতকীর কাছে গিয়ে ওর কথামতো ব্রার হুক খুলে দিয়ে নিমেষে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।

তার মিনিট কুড়ি পরে রাহুল বাড়ি এসে ঢুকল ।
ওকে দেখেই রুদ্র-মেজাজে কেতকী বলে উঠলো,’কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? আমি যে ডেকে-ডেকে মরি । তবে কাজ আমার হয়ে গেছে ।
তখন রাহুল আমতা আমতা করে বলল ওকে,’পাশের বাড়ির বৌদি ফোনে খুব করে ডাকছিল আমাকে । তাই গিয়েছিলাম আর কি । বোঝোই তো দাদা থাকে না । তার কত কাজ ।
সঙ্গে-সঙ্গে কেতকী এতটুকু রাগ না দেখিয়ে বেশ হেসে উঠে বলল,’’বেশ তো । ঠিকই করেছো তুমি । আমিও ঠিক করে নিয়েছি এখানে । কাজ মিটে গেছে । ব্যস

কী কাজ ছিল তোমার ? জানতে পারি কি আমি ?’’
খুব আগ্রহের সঙ্গে বলল রাহুল কেতকীকে ।
কেতকী একেবারে খুল্লামখুল্লা উত্তর দিলো,’তুমি ছিলে না । তাই আমার ব্রায়ে হাত পড়েছে আজ রতনের । মানে ব্রার হুকটা খুলে দিলো ও নিজেই । কি আর করি বল । তুমি নেই না ?'
শুনে যেন মাথায় বাজ পড়লো রাহুলের । ওর দুটো চোখ তখন বিস্ফারিত ।
তারপর কাঁপা-কাঁপা গলায় বলল কেতকীকে,’তুমি এমন কাজ করতে পারলে ? আর রতনের এত সাহস ? ওয়েট । আমি দেখছি ব্যাপারটা ।

কি আর দেখবে রাহুল । রতন বাইরে একটা ছোটো ঘরে থাকে । সেখানে ঢুকে রাহুল ওর বিছানায় আবিষ্কার করলো একটা চিরকুট ।
তাতে রতন লিখেছে বেশ ছেলেমানুষি হস্তাক্ষরে,’এরপর আমি আর কাজে থাকতে পারি না । আপনাদের দুজনের সম্মান বলে কিছু আছে । আর আমিও অপমানিত হতে চাই না আপনাদের কাছে ।
সব জেনে বাইরে এসে রাহুল অবাক হয়ে অপলকে চেয়ে থাকলো প্রখর-তপন-তপ্ত আকাশের দিকে । আর কেতকী ওর পাশে এসে কি বুঝল কে জানে । ছলছল চোখ নিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো শূন্যের দিকে । অবাক কাণ্ড । কিছু সময়ের মধ্যে আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো ।

ওরা দুজন ঘরে ফিরে এলে ঝড় উঠলো । তারপর বৃষ্টি । কেতকী এবার রাহুলের কাছে সব জেনে বেশ ঘৃণার চোখে তাকিয়ে থাকলো রাহুলের দিকে । ওকে দেখে রাহুল বেশ অবাক ।
বলল,’তুমি অমন করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে ?’
উত্তর দিলো কেতকী বেশ হতাশার সঙ্গে,’এবার তুমি আমাকে ঘৃণা করতে পারো । আসলে আমাদের শিকার রতন । তবে মুক্তি পেলো ও । নিজে সভ্য হয়ে বুঝিয়ে গেলো আমরা দুজন তথাকথিত শিক্ষিত আর ভদ্র । আসলে প্রদীপের নীচে পাথর-পাথর অন্ধকার ।
কেতকীর কথা শুনে রাহুল কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারলো না । সবিস্ময়ে কেতকীর দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলো । হঠাৎ ও লক্ষ্য করলো রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি উল্টে পড়ে আছে বিছানার এক কোণে । মনে পড়ে গেলো ওর তখন,আমিই তো সকালে পড়ছিলাম । তুলতেই ভুলে গেলাম ?
হঠা লোডশেডিং । ঘর অন্ধকারে মুড়ে গেলো নিমেষে । কেতকীর মুখ বাইরের খানিক আলোর ছটায় দেখা গেলেও রাহুলের মুখ অন্ধকারে হারিয়ে গেলো ।