নরবলি
ব্রার
হুকটা খুলতে পারছিলো না কেতকী । অনেকক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ । ওর মনে হল পাশের ঘরে
আছে রাহুল । মানে ওর বর । তাই তার-স্বরে ও কয়েকবার রাহুলের নাম ধরে ডাকতে থাকলো । কিন্তু ওর
কোন টুঁ-শব্দ নেই ।
হঠা
কেতকীর গলা শুনে বাড়ির কেয়ার-টেকার রতন বলতে বলতে ঘরে এসে ঢুকল,’ডাকছেন কেন,বৌদিমনি ? বাবু তো ঘরে নেই ।‘
কিন্তু
ঘরে ঢুকেই রতন একেবারে চমকে গেলো । ও দেখল ওর বৌদিমনি প্যান্টি আর কালো রঙের একটা
ব্রা পরে একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । সাথে-সাথে ও খুব লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করলো ।
কিন্তু
কেতকী হঠাৎ খুব জোরে হেসে উঠে বলল রতনকে,’তুমি যখন এসেছ,তখন তুমিই
পারবে । এদিকে এসো একবার । এসো,এসো ।‘
একেবারে
মাথা নিচু হয়ে গেলো রতনের । এক সমুদ্র অস্থিরতা তখন ওর মধ্যে । বৌদিমণির কোন কথায়
কখনো না করেনি ও । তাই কিছুক্ষণ ভেবে রতন ত্রস্ত-পায়ে কেতকীর কাছে গিয়ে ওর কথামতো ব্রার হুক খুলে দিয়ে
নিমেষে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।
তার মিনিট কুড়ি পরে রাহুল বাড়ি
এসে ঢুকল ।
ওকে দেখেই
রুদ্র-মেজাজে কেতকী বলে উঠলো,’কোথায়
ছিলে এতক্ষণ ? আমি যে ডেকে-ডেকে মরি । তবে কাজ আমার হয়ে গেছে ।‘
তখন রাহুল
আমতা আমতা করে বলল ওকে,’পাশের বাড়ির বৌদি ফোনে খুব করে ডাকছিল আমাকে । তাই গিয়েছিলাম আর কি । বোঝোই তো
দাদা থাকে না । তার কত কাজ ।‘
সঙ্গে-সঙ্গে
কেতকী এতটুকু রাগ না দেখিয়ে বেশ হেসে উঠে বলল,’’বেশ তো । ঠিকই করেছো তুমি । আমিও
ঠিক করে নিয়েছি এখানে । কাজ মিটে গেছে । ব্যস…’
‘কী কাজ ছিল তোমার ? জানতে পারি কি আমি ?’’
খুব আগ্রহের সঙ্গে বলল রাহুল
কেতকীকে ।
কেতকী
একেবারে খুল্লামখুল্লা উত্তর দিলো,’তুমি ছিলে না । তাই আমার ব্রায়ে
হাত পড়েছে আজ রতনের । মানে ব্রার হুকটা খুলে দিলো ও নিজেই । কি আর করি বল । তুমি
নেই না ?'
শুনে যেন মাথায় বাজ পড়লো রাহুলের
। ওর দুটো চোখ তখন বিস্ফারিত ।
তারপর
কাঁপা-কাঁপা গলায় বলল কেতকীকে,’তুমি এমন
কাজ করতে পারলে ? আর রতনের এত সাহস ? ওয়েট । আমি দেখছি ব্যাপারটা ।‘
কি আর
দেখবে রাহুল । রতন বাইরে একটা ছোটো ঘরে থাকে । সেখানে ঢুকে রাহুল ওর বিছানায়
আবিষ্কার করলো একটা চিরকুট ।
তাতে রতন
লিখেছে বেশ ছেলেমানুষি হস্তাক্ষরে,’এরপর আমি আর কাজে থাকতে পারি না
। আপনাদের দুজনের সম্মান বলে কিছু আছে । আর আমিও অপমানিত হতে চাই না আপনাদের কাছে
।‘
সব জেনে
বাইরে এসে রাহুল অবাক হয়ে অপলকে চেয়ে থাকলো প্রখর-তপন-তপ্ত
আকাশের দিকে । আর কেতকী ওর পাশে এসে কি বুঝল কে জানে । ছলছল চোখ নিয়ে দৃষ্টি
নিবদ্ধ করলো শূন্যের দিকে । অবাক কাণ্ড । কিছু সময়ের মধ্যে আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো ।
ওরা দুজন
ঘরে ফিরে এলে ঝড় উঠলো । তারপর বৃষ্টি । কেতকী এবার রাহুলের কাছে সব জেনে বেশ ঘৃণার
চোখে তাকিয়ে থাকলো রাহুলের দিকে । ওকে দেখে রাহুল বেশ অবাক ।
বলল,’তুমি অমন
করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে ?’
উত্তর
দিলো কেতকী বেশ হতাশার সঙ্গে,’এবার তুমি আমাকে ঘৃণা করতে পারো । আসলে আমাদের শিকার রতন । তবে মুক্তি পেলো ও
। নিজে সভ্য হয়ে বুঝিয়ে গেলো আমরা দুজন তথাকথিত শিক্ষিত আর ভদ্র । আসলে প্রদীপের
নীচে পাথর-পাথর অন্ধকার ।‘
কেতকীর
কথা শুনে রাহুল কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারলো না । সবিস্ময়ে কেতকীর দিকে শুধু
তাকিয়ে থাকলো । হঠাৎ ও লক্ষ্য করলো রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি উল্টে পড়ে আছে বিছানার
এক কোণে । মনে পড়ে গেলো ওর তখন,আমিই তো সকালে পড়ছিলাম । তুলতেই ভুলে গেলাম ?
হঠা
লোডশেডিং । ঘর অন্ধকারে মুড়ে গেলো নিমেষে । কেতকীর মুখ বাইরের খানিক আলোর ছটায়
দেখা গেলেও রাহুলের মুখ অন্ধকারে হারিয়ে গেলো ।