গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

অর্পিতা চক্রবর্তী

নিয়তি না কুসংস্কার


আজ সকাল থেকেই রায়বাড়িতে সাজসাজ রব। বাড়ির একমাত্র আদরের ছেলের বৌয়ের আজ সাধের অনুষ্ঠান। নিজের মেয়ের সাধ দিতে পারেনি রায়গিন্নী, বিয়েও প্রায় বার বছর হল। ছেলের তিন বছর পর প্রথম সন্তান আসছে। তবে রায়গিন্নী একটু আধুনিক তাই সবাই বারণ করলেও পায়েসটা নিজের মেয়েই রান্না করে নন্দীনি মানে ছেলের বৌয়ের ইচ্ছা। নন্দীনি খুব ভালো মেয়ে, খুব উদার মনের মেয়ে তা জানে রায়গিন্নী।বিয়ের একবছরের পর থেকে সংসারের সব দায়িত্ব একহাতে সামলাই। এই অবস্থায় নিজে কিছু না করতে পারলেও একটি রান্নার লোক রেখেছে নন্দীনি। নন্দীনি যে কবে রায়গিন্নীর বৌমা থেকে বন্ধু হয়ে উঠেছে দুজনেই জানেনা।
নিজের হাতেই নন্দীনিকে রায়গিন্নী সাজায় যদিও মেয়েও সাজাতে চেয়েছিল দেয়নি। নিজের ইচ্ছামতন সাজাই হাতে শাখা, পলা, নোয়া, বালা, হার সিঁথিতে সিঁদুর আর পায়ে রাঙা আলতার ছোঁয়ায় মোহময়ী,স্বামীর গরবীনির মত লাগছে ওকে।
এদিকে এক ছেলে ভারতীয় সৈনাবাহিনীতে চাকরি করে।এটা যেন গর্বের বিষয় নন্দীনির কাছে। আজ যেন বারবার চোখ যাচ্ছে ঘড়ির দিকে কখন আসবে আকাশ,প্রায় চারমাস পর ফিরবে ওর আকাশ। ওদের ভালোবেসে বিয়ে, দূরে থাকলেও ওদের প্রেম নিয়ে সবাই রাগায় অপেক্ষাতে সময় যেন কাটছেনা আর আজ। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে, ফোনটি আসে আকাশের অফিস থেকে শত্রুপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। অমর কফিন বন্দি হয়ে ফিরলো ওর আকাশ শবদেহ হয়ে। সবাই ফিসফাস করে বলতে লাগলো ওমন অমঙ্গল করলো বাজামেয়েকে দিয়ে রায়গিন্নী পায়েস রান্না করালো, দেখো ছেলেটি নিজের সন্তানের মুখ দেখতে পেলো না। ছোট্ট শিশু বাবার স্পর্শ পেলনা। সব শুনতে পাচ্ছে নন্দীনি স্থির হয়ে ওর আকাশকে দেখছে যেন অনেক দিন পর ঘুমাচ্ছে শান্তিতে।