পরাজিত সময়ঃ ওরা কারা
পুরান এ পুরান কি করতিছিস অই সাপ খোপ জলা
জঙ্গলের ঘুরি ঘুরি ? আশশিলীর
একটা ভাল ডাল খুঁজতিছি রে কুরান! কি
বানাবি শুনি,
দাঁতন ? নাহ্ লাঠি বানাবো। অই লালন ফকির
টায়িপির ! উঠি
আয় কতিছি। এহুনি উঠি আয় তুই ওখেন থে । এই বাগানে পদ্মগোক্ষুর আছে। যখন তখন
কালকেউটে ঘুরি
বেড়ায়। আশশিলীর ঝোপ ওগের প্রিয় জায়গা তুই জানিস না শয়তান ? মরতি সাধ হয়িছে তাই না! আয় শিগগি্র। এই শেষ বার কতিছি পুরান, ভালোয় ভালোয় উঠি আয় নইলে কিন্তুক মার দিবানি বান্দর
যেনো কোহানকার ! মরা
মধুমতির চরে মুখ ব্যাজার করে বসে আছে পুরান। কুরান ভীষণ ক্ষ্যাপা। পারলে এই মারে তো সেই মারে, লাঠি লাঠি লাঠি! লাঠি দিয়ি কি করবি রে
পুরান? ও তো বুড়ো মানুষগের নিত্যসঙ্গী।
তোর ঠ্যাং ভাঙ্গিচ্ছে না বাতে ধরিচ্ছে যে লাঠি লাগবি! কবিতা লেখতি লেখতি তুই দেহি পাগল ছাগল হয়ি
যাতিছিস দিন কে দিন! অসন্তোষে
গুণগুণ করে পুরাণ, এ
জীবনে য্যান কোনো জোয়ান
মানুষ লাঠি নিয়ি ঘুরি নাই তাই না! শুনিছি এই শহরে একজনা ছেলো। সেও
কবিতা লেখত, নাটক বানাত! ওরে ও ছাগল শুনিছিস ত সত্যি কথা। তা তার কি
পরিণতি হইছিল তা শুনিছিস কহনো? বুনোফুলের মধু খেতে খেতে মাথা নেড়ে না বলে পুরান, কি হইছিলো শুনি ! মানুষডা এট্টু লোভী হলি বুদ্ধিমান
হতি পারত বুঝিছিস! একাত্তরের সব সাংস্কৃতিক
আন্দোলনের কেন্দ্রে ছেলো মানুষডা। যুদ্ধির
সময় গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য
করিছে। এই শহরের বুদ্ধিজীবী হত্যা লিস্টে তার নাম ছেলো প্রথমে। পাকিস্তানি মেজর
আহত হওয়ায় অল্পের জন্যি বাঁচি গিছিলো। ঘরবাড়ি
জ্বালায় পুড়ায় ছারখার, লুট
হয়ি গেছি সব কিছু। বঙ্গবন্ধু ডাকি কয়েছিল, বন্ধু কি লাগবি বল্। বলদ মানুষডা কয় কি, আমার ত কোন সন্তান খুন হয় নাই, মেয়েও ধর্ষিত হয় নাই, স্বাধীনতার জন্যে সম্পদ গিয়িছে ও
আবার হবিনে। আমার সাহায্য লাগবিনা। যাগোর লাগপি তোমরা তাগোর দাও। মধু খেয়ে ফুলগুলো বাতাসে ভাসিয়ে
দেয় পুরাণ,
তো ? খারাপ কিছু ত কয় নাই সেই মানুষডা! তয় বলদ বলদ কতিছিস ক্যান এতবার! আগে সব শুনি নে তাপ্পর কথা ক
বুঝিছিস! কুরাণ
বালির মধ্যে বসে পড়ে, হ্
এই পর্যন্ত ঠিক ছেলো। তো সে মানুষডা প্রতিবাদ করতি শুরু করল সাহায্য তছনছের। অই বলদ ছলদ
কমবুদ্ধির মানুষরা যেমন করে আরকি। কেউ সাথি হল না। ফলি একা হয়ি গেলো একেবারে।
ছেলেমেয়েরাও রাগ। তাগোর বাপটা যুগির সাথি চলতি পারে না। মানুষডার বুক খালি হয়ি
গেলো রে পুরাণ। আদর্শ বাটি ত আর সবকিছু হয় না। সেই সময় মানুষডা লাঠি ধরিছিল। নদীর
পাড়ি গিয়ি একা একা দাঁড়ায়
থাকত।
মনে কয়
লালনের কাছি চলি যাতি চাতো। শেষি মরি গেলো। মরার পরি তার নামি এই করবানি ওই করবানির মেলা সভা হইছিল। সব ফক্কা! এই শহরের কেউ তার নাম নেয় না। কেউ মনেও করে না। কেউ কেউ চায়ও না তার নাম কেউ বলুক। তোরে
কেডা কইছে রে সে মানুষডার কথা ? ও পুরান কি হইছে কি? ও ভাডি তুই কানতিছিস ক্যা ? বুনোফুলের গন্ধমাখা হাতে চোখ মুছে কুরানের
হাত ধরে পুরা্ন,
বলদ ছলদ
মানুষডার জন্যি পরাণ
পুড়ি যাতিছি রে ভাডি। আয় আমরা না হয় ফুল ছড়ায়ে তারে এট্টুহানি স্মরণ করি! আকন্দ ফুলে অঞ্জলি ভরে ওরা
সাদাচরে ছড়িয়ে দেয়। আহারে মানুষডা।