ভালোবাসার
টান
পরিমল বাবু র বাড়িতে নতুন বৌমা আসার পর পরিমল বাবুর আনন্দের সীমা নেই. নিজে দেখে বৌমাকে এনেছেন ঘরের
লক্ষ্মী করে, তাই উনি বৌমাকে নিজের মেয়ের-চেয়েও বেশি স্নেহ করেন।
বৌমা যেমন দেখতে সুন্দর সেইরকম গানের গলা । পরিমল বাবু এমনিতেই রবীন্দ্র সংগীতের ভক্ত তাই বৌমার
গলায় প্রায় ছুটির দিন বৈঠক খানায় গানের আসর বসে।
বৌমা , ওনার মেয়ে স্মিতা, নাতনি সব্বাই একে একে গান করে পরিমল বাবুর মন ভরিয়ে দেন।
সেদিন গিন্নী চা, জলখাবার সব সাপ্লাই করেন রান্না
ঘর থেকে।
কেষ্টা (পইমল
বাবুর ঘরের ভৃত্য)
সবাইকে চা জলখাবার দিয়ে মনের আনন্দে গান শোনে।
- সেও মাঝে
মাঝে বলে জগন্নাথের জণাণ (উড়িয়ায় ভজন) শোনাতে. বলে সালবেগের জণাণ গাওনা দিদি.
- ওরা বলে তুই একটু গেয়ে শোনা বলে হেঁসে গড়ায়.
- না
দিদিমণি ঠাট্টা নয়. তোমরা সালবেগের জগন্নাথের ভজন শুনলে মোহিত হয়ে যাবে.
- ও তাই ! তা বেশ !! তা তুই
মোহিত হয়ে যা। আমরা তোর গান শুনি না হয়। বলে সকলে হাঁসে । কেষ্টা জানে এরা থাট্টা
করছে ওকে নিয়ে । কিন্তু সে জানে সালবেগের ভজন খুব সুন্দর ।
মা রান্না ঘর থেকে ডাকেন কেষ্টাকে।
যাই মা বলে কেষ্টা দৌড়োয়।
পরিমল বাবুর সংসারে সকলের মুখে হাঁসি.
যে যার কাজ মন দিয়ে করে.
সকাল সকাল পরিমল বাবু গঙ্গায় স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে ঢোকেন.
এক ঘণ্টা পরে ঠাকুর ঘর থেকে পুজো সেরে বের হন.এরপর কেষ্টা, বাবুর জল খাবার আনে খাবার টেবিলে.
জলখাবার খেয়ে বাবু উঠে যান হাত ধুতে। ওয়াশ বেসিনে হাত ধুয়ে তোয়ালেতে হাত পুঁছতেই কেষ্টা, বাবুর হাতে পান দেয় ।
- বাবু বলেন
তোর মা কোথায়?
- মা রান্না
করছেন.আমাকে
দিতে বললেন ।
- হুঁ... ওকে গাড়ির
চাবিটা আর পোর্ট ফলিও ব্যাগ নিয়ঁশটে বলেন. কেষ্টা সঙ্গে সঙ্গে হুকুম তামিল করে।
পরিমল বাবু নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করেন। গাড়ি ড্রাইভ করে অফিস চলে গেলেন ।
রোজকার মতন খাবার টেবিলে দুটো পরটা আর তরকারি ফেলে গেলেন । বাড়িতে ব্রেকফাস্ট
করেন কিন্তু লাঞ্চ অফিসেই করেন।
-গিন্নী
ঘরে এসে খাবার টেবিল দেখে বলেন একি আজকেও খাবার ফেলে অফিস বেরিয়ে গেলেন।
খাবার প্লেট টা নিয়ে নিজেই পরটা দুটো খেয়ে নিলেন।
বৌমা সব দেখল কিন্তু মুখে কিছুই বলল না।
পরিমল বাবুর ছোট ছেলে শুভ ভালো করে পাস করলে ওর বাবা ওকে মটর সাইকেল কিনে
দেবেন বলেছিলেন। সে এবারে বেশ ভালোই রেজাল্ট করেছে। তাই তার বাবা কাল মটর
সাইকেল কিনে দেবেন বলেছেন। কিন্তু শুভ কাল থাকবেনা.বন্ধুদের
সঙ্গে পিকনিকে যাবে। কোথায় যাবে কেউ
জানেনা।
- বউদি, হ্যাঁ রে শুভ পিকনিকে না বান্ধবীর বাড়ি কোথায় বলত?
- যাঃ কি যে বলনা বৌদি !
- তাই ! জানি জানি
সব জানি !!
- কি জানো
শুনি ?
- বলব কেন !
- তাহলে
কিছুই জাননা।
- তবে তাই!!
পরের দিন বাবা বলেন শুভ আজ যাবি নাকি বাইক কিনতে?
- না বাবা.আজ আমি পিকনিকে যাব।
- তবে কাল
কিনব।
- ঠিক আছে
বাবা আজ যাই তবে!
- মাকে বলে যাও।
- আচ্ছা
বাবা।
- এরমধ্যে
বৌদি চলে এলেন। কোথায় চললে শুভ? খুব ত পারফিউমের সুগন্ধ। কি ব্যাপার ?
- আজ ফেব্রুয়ারি মাসের কত তারিখ?
- ১৪ তারিখ। ও মা ! তাইত! ভ্যালেন্টাইন
ডে !
ভুলেই গিয়েছিলাম।
বাবা রোজকার মতন অফিস ফিরে কাপড় জামা ছাড়ছিলেন এই সময় বৌমা সামনে
তোয়ালে নিয়ে বাবার হাতে দিয়ে বলল, বাবা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব !
- কি বল মা !
- আপনি রোজ
খাবার টেবিলে জল খাবার ছেড়েদিয়ে যান কেন বাবা ? মা খুব বিরক্ত হন।
- ও এই কথা।
বলে হাঁসতে সুরু করেন। পরে বলেন
কেন তোমার
শাশুড়ি মা খান নি ?
- হ্যাঁ
খেয়েছেন কিন্তু গজ গজ করে ওগুলো খেয়েছেন।
- কি বলেছেন
তোমার শাশুড়ি মা বলত ?
- বলেছেন
প্রত্যেক দিন এই উচ্ছিষ্ট আমাকেই খেতে হয়। খাবার আমি নষ্ট করা পছন্দ করিনা তাই
ফেলতেও পারিনা । এদিকে গিলতেও পারিনা । আমার হয়েছে যত জ্বালা !
- তাই ! তা তুমি
কি বললে মা’কে?
- কি আবার
বলব? আমি ভাবলাম আপনি অফিস থেকে ফিরলে বলব।
- বাবা রোজ খাবার ফেলে যান কেন ?
- পরিমল
বাবুর চোখে জল। তিনি বলেন আজ দু বছর আগে তোমার শাশুড়ি মা শয্যাশায়ী ছিলেন। গল
স্টোন অপারেশন হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিলেন উপোষ তাপাস না করতে ! কে কার
কথা শোনে মা ! সেই বেলা দুটো বাজলে খাবেন আবার নিজের শরীরের ওপর অত্যাচার।
তাই আমি খাবার ফেলে যাই। আমি জানি উনি ওই খাবার না ফেলে নিজেই খাবেন। এই বলে বৌমা মুখের দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে বললেন , আমি কি ভুল করছি মা?
বৌমা এই অতভুত ভ্যালেন্টাইন ডে র কাণ্ড দেখে মনে মনে ভাবে এও এক নতুন ভালোবাসার টান !!!!