গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নীহার চক্রবর্তী

অপার হাত


পাড়ার এক দোকান থেকে মিথুন সিগারেট কেনে । 
কদিন আগে ও সে দোকানে গেলো । সিগারেট কিনে ধরাতেই দোকানীর কোলে বসা তার বছর দুয়েকের বাচ্চা হাত নেড়ে উঠলো । মুখে একফোঁটা হাসি নেই তার । তবে মিথুন দেখে বেশ মজাই পেলো । 
দোকানীকে হেসে বলল,''কী বলছে ও ? ভারি মিষ্টি তো ।''
তখুনি মা এসে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেলো । পিছন দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটা হাত নাড়তে থাকলো মিথুনের উদ্দেশ্যে ।
দোকানী বলল ওকে,''আপনি বোঝেননি না ? কেউ শুরুতে বুঝতে পারে না । পরে বুঝতে পেরে খুব লজ্জা পেয়ে সিগারেট নিভিয়ে দেয় । পরে ছেড়ে দেয় কিনা জানি না । তবে আমার দোকানে আর সিগারেট কিনতে আসে না । ছেলেটার জন্য আমার লস হয়ে যাচ্ছে বটে ''
মিথুন তার কথা শুনে অবাক হল বেশ ।
সবিস্ময়ে দোকানীকে বলল,''একটু ক্লিয়ার করে বলা যায় না ?''
দোকানী তখন গর্বের সুরে ওকে বলল,''মানে আর কি । আমার একরত্তি ছেলেটা সিগারেট বা বিড়ি পছন্দ করে না । মনে হয় ও গন্ধ সইতে পারে না । ওর ভেতরে বুঝি কষ্ট হয় । তাই মাঝেমাঝে ছেলের কথা ভেবে ভাবি,এই ছাইপাঁশ বেচা বন্ধই করে দেবো ।''
সাথে-সাথে মিথুন সিগারেটের অর্ধেক অংশ পাশের ড্রেনে ফেলে দিলো ।
দোকানীকে বেশ লজ্জার সুরে বলল,''শেখার কি আর শেষ আছে । আজ এক্রত্তির কাছেও আমার শিখতে হল । ধন্য হলাম গো আমি । আর নেশা করবো না । তুমিও তবে আর বেচো না । কি আছে ওতে ছাই ।''
একটু দূর থেকে দোকানীর বৌ ছেলেকে কোলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,''ছাই আছে । তাছাড়া আর কিচ্ছু না ।''
মার কথা শুনে বাচ্চাটা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো তখন ।
অমন অনুপম দৃশ্য আর অভিজ্ঞতা নিয়ে মিথুন বাড়ি ফিরে এলো ।
বাড়ি ফিরেই ও ওর বৌ রেণুকে একমুখ হেসে বলল,''আজ থেকে নেশা আমার একদম বন্ধ হয়ে গেলো ।
শুনে বেশ অবাক হয়ে রেণু ভ্রূ-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,''এ উন্নতি কীভাবে হল তোমার ? কষ্ট হচ্ছে নাকি ?''
তখন মিথুন অনাবিল-হেসে ওকে বলল,''এক ঈশ্বরের সন্তান আমাকে বলেছে আজ তার না-কথা দিয়ে ।''
রেণু এমন কথা শুনে থ ।
চোখ বড়-বড় করে ওকে বলল তখন,''ক্লিয়ার,প্লিজ ।''
সোল্লাসে হেসে মিথুন বলে উঠলো,''মরে গেলেও সে বলা যাবে না । শুধু আমাকে ফলো করে যাও ।''