গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী

এত ভালোবাসি এত যারে চাই
           
ক্লান্ত হয়ে একটা মাঝারি রেস্টুরেন্টে ঢুকে লস্যির অর্ডার দিল অন্তরা । জ্যৈষ্ঠ মাস দুপুর পোড়ানো গরম সেই কখন বেরিয়েছে বাড়ি থেকে গলা শুকিয়ে কাঠ । ওয়েটারের দেওয়া জলটা এক নিমেষে ব্লটিং পেপারের মত শুষে নিল সে হাতে ধরা খালি গ্লাসটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্তরা দেখতে পেল যেন রামধনুর সাত রং ঘুরপাক খাচ্ছে । ভেসে উঠছে ঠাকুরপুকুরের ভাড়া বাড়িটার ইজেল , ক্যানভাস , তুলির নানা রঙ দেওয়াল জুড়ে নানা ছবি কতবার যে এমন হয়েছে অন্তরার ।
আজ অনেক বছর হয়ে গেল অর্চ্চিমানের কোন খবর নেই । বাঁকুড়ার এক  গ্রাম থেকে এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে তার কলকাতায় আসা । স্কুল শিক্ষক বাবা মা চেয়েছিলেন তাদের একমাত্র মেধাবী সন্তান ডাক্তার হোক কিন্তু সে হতে চেয়েছিল এক শিল্পী ,
__
আমি আর্ট নিয়ে পড়তে চাই,প্লিজ তোমরা আমাকে বাধা দিও না ।
এই ছিল অর্চ্চিমানের এক উক্তি। আর্ট কলেজে পড়তে গিয়ে অন্তরার সাথে তার বন্ধুত্ব ,অনেকটা কাছে আসা । সেই সব দিনগুলোর সাক্ষী হয়ে আছে ঠাকুরপুকুরের পলেস্তারা খসা দেওয়ালগুলোর হতবাক্ দৃষ্টি । তবুও অন্তরার মনে প্রশ্ন জাগে সত্যিই কি কখনও ভালোবেসেছিল অর্চ্চিমান ? কখনও সম্পর্ক কে তেমন গুরুত্ব দিয়েছিল সে । ফাঁকা ক্যানভাসটাকে বর্ণ বিন্যাসে জীবনের স্পন্দন এনে দিতে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা পাগল হয়ে তুলি আর অর্চ্চিমানের বোঝাপড়া চলত স্নান খাওয়া ছেড়ে অন্তরা সে সব দিনে কিচেনে গিয়ে মুগডালের খিচুড়ি আর ডিমের পোজ বানিয়ে চামচ দিয়ে খাইয়ে দিত খুশিতে যত্নে ,অর্চ্চিমান কি তখনও বোঝেনি ? তখনও বোঝেনি যখন একটি মেয়ে তার ভালোবাসা ও বিশ্বাসের শেষ সীমারেখায় দাঁড়িয়ে তার লজ্জাটুকু খসাতে পেরেছিল অনায়াসে ?বোঝেনি । তাই তাদের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়েছিল মৃগাঙ্কি । হয়ত এসব তার মনে কখনও কোন দাগ কাটেনি । কেবল নিছক জীবন উপভোগ হয়ত খামখেয়ালীপনা হয়ত বা কিছুটা তার শিল্পী স্বভাবের কারণ ।
মৃগাঙ্কি দত্ত বিদেশে পড়াশুনা করা অত্যন্ত ধনী পরিবারের একটিমাত্র মেয়ে । সুন্দরী এবং নিঃসন্দেহে গুণী তবে অসম্ভব খামখেয়ালি । এক বছরের মধ্যে অর্চ্চিমানের তিন তিনটি আর্ট এক্সজিবিশনের ব্যাবস্হা করার ক্ষমতা রাখে সে । অন্তরা বরাবর চেয়েছে অর্চ্চিমানের নাম হোক সবাই তাকে বড় শিল্পী হিসাবে চিনতে শিখুক , তাই মনে মনে ভেবেছে মৃগাঙ্কিকে হয়ত ঈশ্বরই পাঠিয়ে দিয়েছেন ।
পুরানো সেই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অর্চ্চিমান উঠে গিয়েছিল মৃগাঙ্কিদের সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে । ঠাকুরপুকুরের পলেস্তারা খসা দেওয়াল আর অন্তরার আকুলতা সবই পড়ে রইল পেছনে । শুধু একটা ফোন আশা করেছিল অন্তরা , অর্চ্চিমান তাও করেনি । সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করে নিজেকে বার বার বোঝাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি । অবশেষে নিজেই একদিন ফোন করে ছিল

__
কেমন আছো অর্চ্চি ?
উত্তর এসেছিল,
__
একটু ব্যস্ত আছি , পরে কথা বলছি কেমন !

ব্যাস,আর কখনও ফোন আসেনি তার । তাদের সম্পর্কের অনেক কথা যে তখনও অর্চ্চিমানের অজানা থেকে গেছে। তারপর বসন্ত গোধূলির এক শুভ ক্ষণে ওদের বিয়ে হয়ে গেল। পরে মনোজের কাছে শুনেছে যে অন্তরা ছাড়া আর প্রায় সব বন্ধুরাই ওদের বিয়েতে সেদিন উপস্হিত হয়েছিল । বাবাকে সব খুলে বলেছে অন্তরা  , বাবার বুকে মাথা রেখে চোখের জলের সাথে ভাসাতে চেয়েছে দুঃখ , যতটা আওয়াজ ছিল সবটুকু সেদিন চীৎকার হয়ে বেরিয়ে  এসেছিল , বাবা বলেছিলেন,

__
বোকা মেয়ে , এ কি করেছিস তুই , আমাকে তো সবই বলিস এত বড় ঘটনাটা লুকিয়ে রেখেছিলিস , আগে কেন বলিস নি সব?
সেই রাতে বাবা মা আর মেয়ের অসহায় ছটি চোখেই ঘুম ছিল না । আরও দুটি চোখ বুঝেছিল খিল খিল করে সে আর কখনও কোনদিনই হাসবে না , মার আদর পাবে না - - - তাকে হারিয়ে  যেতে হবে - - -
বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেছে , অন্তরা একটা প্রাইভেট স্কুলে আঁকা শেখায় , বাবার পেনশন আর তার আয়ে তাদের বেশ কেটে যায় । মনোজ তার স্ত্রী লতিকাকে নিয়ে মাঝে মাঝে আসে । ওদের সাত বছরের ছেলে সানু অন্তরার খুব ভক্ত । ওরা এলে সময়গুলো বেশ কাটে । মনোজ একটা এন জিওর সাথে যুক্ত এই কাজের সাহায্যের জন্য সে অন্তরা এবং লতিকার হেল্প বহুবার নিয়েছে । বাবা অন্তরার ব্যক্তিগত বিষয়ে কখনও কিছু বলেন নি কিন্তু মার মনটা মেয়ের অস্হায়ী ভবিষ্যৎ ভেবে বহুবার শিহরিত হয়ে বলেছে -

__
এ ভাবেই জীবন টা নষ্ট করবি ? কত মেয়ের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে তারা কি নতুন ভাবে বাঁচতে চেষ্টা করে না  ?
শুনে খুব সূক্ষ্ম একটা হাসি ভাঙে অন্তরার করুণ ঠোঁট । এক সহজ নির্লিপ্ত মুখে সে মার দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু , তখন দুটি নারীর মনে ঝড় বইছে শনশন শব্দে আর সেই ঝড় যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুজনের সমস্ত ভাষা।
পঁচিশে জুলাই অন্তরার স্কুলের ফাউন্ডেশন ডে , সাদা ঢাকাই শাড়ী মাথায় সাদা গোলাপ বেশ দেখাচ্ছে তাকে, সুন্দরী সে নয় তবুও একটা শ্রী তাকে সব সময় ঘিরে থাকে ।  ছাত্রীদের নিয়ে চটপট গানের রিহার্সালটা সেরে নিল একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে বাচ্চা দের হাতের আঁকা দিয়ে সাজানো হয়েছে মঞ্চ । যথা সময়ে চিফ গেস্ট এলেন শুরু হল অনুষ্ঠান । একসময় অন্তরাও তার প্রিয় গানটি গাইতে শুরু করল __
এত ভালোবাসি এত যারে চাই / মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই __  / যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে তাহারে আনিবে ডাকি - - -  দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি ——— ’
হঠাৎ স্কুলের গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল , ড্রাইভার দরজা খুলতেই সুন্দরী স্মার্ট এক মহিলা নেমে এলেন দূর থেকে তাকে দেখে অন্তরার মনে হল ভবিতব্যের এ কোন ইশারা ? শুনেছিল আজকের চিফগেস্ট মেজর অসিত গাঙ্গুলীর স্ত্রীর আসতে একটু দেরি হবে । কিন্তু ইনি কে ? এ তো মৃগাঙ্কি! সেই ই মিসেস্ গাঙ্গুলী ? ততক্ষণে মিসেস্ গাঙ্গুলীর পোষাকের উগ্রতা নিয়ে নানা চর্চা শুরু হয়ে গেছে ।
অনুষ্ঠান শেষে অন্তরা ফুলের বোকে আর উপহার টা নিজেই গাড়ি তে রাখতে গেল প্রধান শিক্ষিকার নিষেধ অগ্রাহ্য করে। শেষে সুযোগ পেতেই প্রশ্নটা করে বসল ,
__
অর্চ্চিমান কোথায় ? জবাব টা না দিয়ে প্লিজ যাওয়ার চেষ্টা করবেন না ম্যাডাম
__
  কে ? ঐ গাঁইয়াটা ? ব্লাডি ফুল , চলো ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ো  - - - 
তারপর থেকে খোঁজ শুধুই  খোঁজ আর রাশি রাশি হতাশা ।
একটা বছর কিভাবে কেটে গেছে ।  একদিন অন্তরা মনোজকে বেমানান অস্বাভাবিক অভিমান করে হঠাৎ ফোন করে বসল  ,
__
আজকাল আর ডাকিস না , আগে কত তোর সঙ্গে কাজ করেছি , কত আনন্দে সময় কাটত - - - 
এরপর হঠাৎ একদিন মনোজের ফোন ,
__
একবার  আয় কথা আছে 
__
কোথায় আসব ? তোদের বাড়ি ?
__
হ্যাঁ , মাসিমাকেও সঙ্গে নিয়ে আয় , তাহলে আমরা সানুকে ঘরে রেখে বেরুতে  পারব , আর কথা বলে সময় নষ্ট করিস না চলে আয় । এলে প্ল্যান তৈরী হবে , রাখছি
সঙ্গে যেহেতু মা তাই একটা অটো বুক করে নিল অন্তরা , আধ ঘন্টার  মধ্যেই পৌঁছে গেল ওরা । ললিতা খুব তাড়াতাড়ি করে খাওয়ারের ব্যবস্থা করে ফেলল । মনোজ বলল ,
__
আর দেরি কোরো না , তোমরা রেডি হয়ে নাও , সানু মাসিমা ও মণি পিসীর কাছে ভালো থাকবে । 
__
এগজ্যাক্টলি , কিন্তু কোথায় যাচ্ছি আমরা সেটা তো বল ?
__
মালঞ্চপুর , আমি অত চিনি না , কিন্তু বিদ্যুৎ চেনে , ও মাসে একদিন ফ্রী পেসেন্ট দেখতে যায় ওখানে , মানে সেবা দেয় ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে  সামনের মোড়টাতে অপেক্ষা করতে লাগল ওরা , বিদ্যুৎ কে আগে কয়েকবার দেখেছে অন্তরা , খুব এক্সট্রোভার্ট টাইপের ওর ইয়ারকিতে অন্তরা বহুবার লজ্জাও পেয়েছে , মুখে কিছু আটকায় না ওর । ললিতা জুঁইফুলের মালা দেখে মনোজকে বলল,
__
ঐ দ্যাখো কি সুন্দর জুঁই ফুলের মালা , আমাদের জন্য নিয়ে এসো না প্লিজ।
দুজনে পরস্পরের  চুলে জড়িয়ে নিল তখনই বিদ্যুৎ গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ।
__
চলে আসুন ম্যাডামরা
গাড়িতে ইন্দ্রানী সেনের গান হচ্ছে , সেই অন্তরার প্রিয় গানটাই
__‘
এত ভালোবাসি এত যারে চাই  / মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই - - -
সত্যিই প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু প্রেমের বেদনা ! সে তো সর্বক্ষণ  সমস্ত জীবন ব্যাপী যেন তার বিস্তার ।
গাড়িটা ছুটে চলেছে।একটা ধাবাকে বাঁয়ে রেখে একটা গলিতে ঢুকে পড়তেই গাড়ির এসি বন্ধ করে জানলাগুলো খুলে দিল বিদ্যুৎ। চারিদিকে সবুজের সমারোহ ।লতিকা মোবাইলের ক্যামেরায় প্রকৃতির ছবি বন্দী করে চলল আর অন্তরা তার দীর্ঘায়ত কালো গভীর চোখের ভাঁজে ।
হঠাৎ বিদ্যুৎ দীপ্ত কন্ঠে আবৃত্তি শুরু করল  ,অন্তরাকে সে সত্যিই পছন্দ করে  তার মনে যেন আজ সেই কল্পনারই আলপনা আঁকা শুরু হয়েছে,
‘ - - -
ভাগ্যের পায়ে দুর্বল প্রাণে ভিক্ষা না যেন যাচি ।
কিছু নাই ভয় , জানি নিশ্চয় __ তুমি আছ , আমি আছি ।। 
শুনেই ঝট্ করে লতিকা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল ,
__
অন্তরা আজ তোমরা একটা ফাইনাল করে ফেল তো , বিদ্যুৎ দা আর কতদিন ব্যাচেলর থাকবে - - -
বিদ্যুৎ হাতটা এমন ভাবে তুলল যেন সে সমর্থন জানালো । অন্তরা লজ্জা পেল তার কাছে এ যেন স্বপ্নলব্ধ কথোপকথন    ইতিমধ্যে গাড়িটা থামতেই সবাই বুঝল তারা পৌঁছে গেছে । মনোজ বলল ,
__
এটা বিদ্যুৎ দের পৈতৃক সম্পত্তির উপর তৈরী দুস্হ অসহায় গরীব মানুষদের জন্য এক আবাসস্হল , ওর দাদুর তৈরী ।

ম্যানেজার অম্বর বটব্যাল এগিয়ে এসে ওনাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন । চারিদিকে ফলের বাগান , নানা ফুলগাছ কিছুক্ষণ ঘুরে এসে ওরা বিদ্যুৎ কে সাহায্য করতে এগিয়ে এল  , সে ঝড়ের গতিতে কাজ করে চলেছে । অম্বরবাবু বিদ্যুৎ কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,
__
আপনার ঐ পেসেন্ট এখন কিছুটা ভালো , তবে সকাল থেকে ঘুমোচ্ছে , ওঠাবো ?
__
না না তার দরকার নেই , ফেরার সময় দেখে নেব , শরীরের  ইনফেকশন গুলো কমেছে ? 
__
হ্যাঁ , কিছুটা ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে , বলেছিলেন আপনার এক ডাক্তার বন্ধুকে আনবেন ।
বিদ্যুৎ গম্ভীর মুখে মজা করে বলল ,
__
এই তো এই দুই মহিলাকে তো ঐ জন্যই এনেছি ।
বটব্যালবাবুর মুখের ভাব এমন ছিল তাতে বোঝা গেল তিনি বুঝলেন এই দুজন সত্যিই ডাক্তার ।
চারিদিক গ্রীল  দিয়ে ঘেরা এই তিনতলায় ছটা ঘরের চারটি খালি কেবল দুটি ঘরে একজন করে পেসেন্ট । অনিচ্ছা সত্ত্বেও লতিকা ও অন্তরা ওদের সঙ্গে এল ওদের এবার ঘরে ফেরার মন । বটব্যাল বাবু পেসেন্টের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন ,
__
উঠে বসুন , ডাক্তারবাবুরা এসেছেন , আপনাকে দেখতে ।
বিদ্যুৎ ইশারা করে চুপ করতে বলল । বিদ্যুৎ নিজেই ঘরের পর্দা গুলো সরিয়ে দিল জানলাগুলো খুলতেই একরাশ হাওয়া হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল । জানলার নীচটাতেই হাঁটু মুড়ে মানুষটি বসে কোন কথা নেই হঠাৎ অন্তরা বলে উঠল,
__
মনোজ , কেমন একটা গন্ধ , তুই পাচ্ছিস্ ?
__
পেসেন্টদের ঘরে এমন গন্ধ পাওয়া যায় অন্তরা - - -
__
না না , অন্য ধরনের গন্ধ , আমার সাথে কেমন যেন পায়ে পা মিলিয়ে চলছে সে ।
অন্তরা ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল সেই মানুষটার সামনে , মানুষটার হাতদুটোর উপর নিজের আঙুল গুলো বোলাতে লাগল পরম যত্নে । মুখটা তুলে ধরল , কেমন ঘোলাটে ক্লান্ত দুটো চোখ , মুখময় কাঁচাপাকা দাড়ির চারা শুধু অন্তরার দিকে ফ্যাকাশে দৃষ্টি রেখে নীরব হয়ে রইল , কত কিছু যেন বলতে চাইছে সে ,  সেই শরীরটা ঈষৎ  ঝাঁকিয়ে দিয়ে অন্তরা বলল,
__
ঘরময় রঙের গন্ধ , সেই আগের মতো , তুমি সেই গন্ধ পাচ্ছো অর্চ্চি ? বলো না , পাচ্ছো ? 
অন্তরার স্বপ্নময় চোখ দুটো দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল যেন জলতরঙ্গের টুংটাং হয়ে ঘরময় বাজতে থাকল ।