গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

বাঁচা 


তিনটে হাঁসের ছানাকে টানতে টানতে উঠোনের একপ্রান্তে ভাঙ্গা টালি দিয়ে ঘেরা একচিলতে খুপরিতে ঢোকাতে গিয়ে ওপারে ইঁটের গাঁথনি করা নতুন বাড়িটার দিকে তাকাল রহিমা।  রহিমার উঠোন বলতে একেবারেই এক চিলতে ভাঙ্গাবেড়ার উঠোন। একপাশ দিয়ে নর্দমার জল বয়ে যাচ্ছে। হাঁসগুলো সেখান থেকে কিছু খুঁটে খাওয়ার চেষ্টা করতেই এক তাড়া লাগাল রহিমা। তারপর জোর করে হাঁসগুলোকে খুপরীর মধ্যে টেনে ঢুকিয়ে একটা ভাঙ্গা ঝুড়ি মুখটায় আটকে দিল। এবার সে নিশ্চিন্ত। হাত ধুয়ে এসে বসল উঠোনের একদিকে, যেখানে একটা জুঁইঝাড় লটকানো আছে  দড়ি দিয়ে ছাদের টালির সঙ্গে। একটু ঘেরা,আড়াল মত হয়ে রয়েছে। তারপর অপলকে চেয়ে রইল নতুন বাড়িটার দিকে।
 
রহিমা বিবি বছর খানেক হল বেওয়া হয়েছে। তার স্বামী জয়নাল বয়সে কুড়ি বছরের বড় ছিল বটে কিন্তু অমন একখানা জোয়ান সারা গাঁয়ে খুঁজলেও পাওয়া যেত না। সেই জোয়ান মদ্দ মানুষটা শহর থেকে ফিরবার পথে
  রোদ লেগে একদিন  পটাশ করে মরে গেল রাস্তার উপরে। আর পড়বি  তো পড় একেবারেই গাঁয়ে ঢুকবার মুখে। জোয়ানের অমন মিত্তু কে কবে দেখেছে!
রহিমা, জয়নালের সদ্য বেওয়া, বছর তিরিশের যুবতী রহিমা অনেক বুক চাপড়ালো, অনেক দুঃখের কান্না কাঁদলো, আছাড়ি-পিছাড়িও কম করল না। সব কিছুর শেষে,সব কিছুকে বিফল করে  জয়নালের জানাজা বেরোল। সেই থেকে রহিমা এই ভাঙ্গা বেড়ার মধ্যে নিজেকে নিয়ে থাকে, একেবারে একা। প্রথম প্রথম পাড়ার বৌ-ঝিরা এসে বসত, তারপর রহিমার উদাসীন মুখ দেখে তারাও একে একে মুখ ফিরিয়ে নিল, আর আসে না।  রহিমার উদাসী মুখ এখন শুধু একদিকেই চেয়ে থাকে, ঐ রাস্তার ওপারে নতুন গাঁথনি  করা ইঁটের বাড়ির দিকে।

ও বাড়ির মালিক শফিকুল,  একটা ছোট পাঁউরুটি কারখানার মালিক  বয়সে যুবক, কিন্তু বুকের ব্যামো আছে, সে হাঁপায়, তাঁর হাঁপানীর রোগ আছে, ক্ষয়াটে চেহারা। রহিমা শুনেছে, এই রুগী সহজে মরে না। 
রহিমা বাঁচতে চায়
, এয়োতী হয়ে, তার বড় সাধ!