গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

জয়িতা ভট্টাচার্য

রূপান্তর   

বাড়িটা মাঠের প্রান্তে রাতে একটা ধ্বংসস্তুপের মতো দাঁড়িয়ে থাকে ।দিনে যেন হানাবাড়ি ।এই বাড়িটাই জুটলো শেষে আমি অর়্থাত অনিমেষের ভাগ্যে ।সরকারী সমী়ক্ষক হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হয় ।থাকতে হয় মাসখানেক কিন্তু এমন বিদ্ঘুটে বাড়ি তে এর আগে আশ্রয় জোটেনি ।জনবসতি বহূদূর।বাড়িটা আগাছায় ভরা ।কড়িবরগায় পেঁচা ,রাতে পায়রা ঘোঁট বেঁধে থাকে তার জন্য দুটো ঘর বরাদ্দ ।দোতলার ধুলো ়ধুসারিত ়ঘর বারান্দা ।একটি ঘর শুধু খোলা ।টিকারাম রাতের ়খাবার ,জল ,লম্ফ জ্বেলে দিয়ে চলে যায়।

কাগজ পত্র আর কলকাতা থেকে আনা হুইস্কি র গ্লাস ।রাত বাড়লে গেট খুলে যায় ধারি কালো কুকুরটা ঢোকে ,নিঁশব্দে উঠে যায় দোতলার ়ঘরটায়। পুরোনো তক্তপোষের মর্ মর্ আওয়াজ পাই ।সন়্ধ্যেবেলা একবার দেখেছি বিরাট মাংশপিণ্ড পরে আ়ছে ।হয়ত ়টিকারাম রেখে যায় ।সিঁড়িতে আমার সেই পায়ের ছাপ পড়ে । চারপেয়েটার কোনো পদচিন্হ নেই ।
সেদিন পূর্নিমা ।কাজ কর়ছি ,পান করছি ।ভাবছি বাড়ির কথা ।____" কেমন আছেন অনিমেষবাবু," চমকে তাকাই । কালো কুকুরটা, সাধারন কুকুরের থেকে কয়েকগুণ বড়ো সামনে বসা ।নেশা টা বেশিই হয়ে গেছে ভাবলাম ।___"আসলে কুকুর জীবনে আসার পর বিশেষ মানুষের সা়থে বাত্ চিত্ হয়ে ওঠেনা ,তাই ভাবলুম দুটো কতা বলি "না এবার আর কোনো ভুল নেই ।পরিস্কার বাংলা ভাষায় কথা বল়ছে ।চক্চক্ করছে ওর দেহ সামলে নিতে সময় লাগে ।এই পোড়া বাড়িতে একা বসে ,কয়েক ঢোক পান করে নি মনের জোড় বাড়াতে ।কাঁপা গলায় বলি___" বলুন ।আপনার নামটা জানা হয়নি "
___"
আমার নাম উমাপদ ভাণ্ডারী ।বাড়িটা আমারই ।কেয়ারি করা বাগান ।ঝক্ ঝক্ করত দরদালান ।ব্যবসাদার ছিলাম ।
আমি একবার চিন্তা করে নি উমাপদবাবুকে হুইস্কি অফার করব কিনা ।
___"
আপনি খান অনিমেষবাবু,আমি  অন্য পানিয় খাই ।"
____"
দুটি ছেলে বউ, ভরা সংসার ছিলো মশায়
এর পর স্তব্ধ হয়ে শুনতে থাকি উমাপদর কাহিনী।
একবার ব্যবসার কাজে দিল্লী গেলাম ।রাত হলো ফিরতে ।ফিরে দেখি বাড়ি শুনশান এখান ওখান রক্ত ।কাপড়ের টুকড়ো ।টাকা পয়সা গয়না গাটি কিছু নেই ।দেহ গুলো পড়ে ।ওপরের ঘরে আমার মেয়ের পচা লাশটা খাচ্ছে কালো একটা কুকুর ।
জানেন, ওদের মাটি চাপা দিলাম। তারপর শুধু একটু খাবার আর মাংস কিনে আনতাম কুকুরটা রয়ে গেলো ।আমি আর সে ।শেষে আর মানুষের কাছে যেতে ইচ্ছে করতনা ।ওর সাথেই কথা বলতাম ।ফল পাতা খেতাম আর ইদুর বেড়াল ধরে কুকুরটাকে দিতাম ।দুজনে অনেক বছর কেটে গেলো ।ওর সাথে থাকতে থাকতে আমাকেও ওর মতোই যেন দেখতে হয়ে যাচ্ছিলো ।ফল পাতা ছেড়ে আমি়ও কাঁচা মাংস খেতে লাগলাম ।ঝামেলা নেই ।বেশ খেতে বু়ঝলেন ।তা ়খেলে একটু বেশি মাংসই ত লাগে ।একদিন বুড়ো হয়ে মরেই গেল আমি ওকেই খেলাম কদিন ।তারপর ়খুঁজে বেড়াই মাংস রোজ ।
বাইরেটা হঠাত্ অল্ধকার। কালো মেঘ ঢেকে দিয়েছে চাঁদ ।হাওয়ায় লম্ফটা জ্বলছে নিবছে ।
একটু ভ়য় করছে যেন এবার ।
উমাপদ বলছে __" আজ আর কাউকে পেলামনা ।ক্ষিদে পাচ্ছে খুব ।যদি কিছু মনে না করেন......বেশি লাগবেনা কিন্তু......" অনিমেষ জ্ঞান হারায় ।কিন্তু তার আগে ভারি বোতলটা ভে়ঙে ঢুকিয়ে দেয় উমাপদর পেটে ।
সকালে চোখ খুলে ধরমর করে উঠে বসে ।বেড়োবে ।আয়নার সামনে চোখ পড়ে ।স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ।
বড়ো কালো একটা কুকুর এখনো ঢোকে গেট খুলে ।মরা কুকুরটাও খেয়ে নিয়েছে সে ।টিকারামের দেহ টা বেশ কিছুদিন খাওয়া গেছে।সুস্বাদু নর মাংস ।
অনিমেষ ়ভালো়ই আছে ।
তবে তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
এখন অনিমেষ আর পুরোনো বাড়িটা প্রতিক্ষা করে নতুন আগন্তুকের ।