গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

নীহার চক্রবর্তী

জবাব

''বাবা তাহলে চলেই গেলেন ? ইশ... ভাবতে পারছি না ।''
সুধাংশু দত্ত একথা বলে উঠতেই বেশ রাগ হল সদ্য-মৃত দেবদাস সেনের ছেলে দেবাশিসের ।
 
সে বলে উঠলো,''এ আবার কেমন কথা ? বাবা মরতে পারে না ? ভগবান কি তার জন্য আলাদা নিয়ম করবেন নাকি ? ভারী বাজে কথা ।''
শুনে বেশ চমকে গেলো সুধাংশু দত্ত । আমতা আমতা করতে থাকলো ।
পরে বলল সে,''ঠিক তা নয় । অনেকদিনের চেনা-জানা মানুষ তো । তাই আর কি । তা কাজ কবে ?''
''অনেকদিনের চেনা মানে ? বুঝলাম না কিছু । দিনের পর দিন নিজের কাজ হাসিল করার জন্য বাবার কাছে আসতেন না আপনি ? বাবার সঙ্গে বন্ধু পাতিয়ে ছিলেন না ? প্রায়ই তো তখন আসতেন । আর মার হাতের রান্না খেয়ে যেতেন ।''
দেবাশিস কথাগুলো একনাগাড়ে বলার পর সুধাংশু দত্তের দিকে খুব বিরক্তির সঙ্গে তাকাল । ওদের বাড়ির গেটের কাছেই দুজনের কথা হচ্ছিলো ।
 
হঠাৎ দুজনকে ছাদ থেকে দেখতে পেলো সদ্য বিধবা দেবাশিসের মা ।
সে ছাদ থেকে হাত নেড়ে নেড়ে দেবাশিসকে বলতে থাকলো,''অনেক দুঃখ পেয়েছি এ কদিনে । আর দুঃখ ডেকে আনিস না । দুর্জনকে গেট থেকে বিদায় কর এবার । নইলে তোর বাবার আত্মা শান্তি পাবে না ।''
মার কথা শুনে দেবাশিস এক-মুখ কষ্টের হাসি হেসে ফেললো ।
তারপরেই সুধাংশু দত্তের তাকিয়ে বলল,''আমি আর কি বলি । মা কম কথায় অনেককিছুই বলে দিলো । আসুন । ভালো থাকুন । আমাদের কথা আর না ভাবলেও চলবে ।''
কথাগুলো শেষ করেই দেবাশিস বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লো । আর সুধাংশু দত্ত অপার-বিস্ময়ে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে থেকে অসহায়-মুখে সেখান থেকে বিদায় নিলো ।
বিদায় নেওয়ার আগে আবার সে আঘাত পেলো ।
পেপার-বিক্রেতা রতন দেবাশিসদের বাড়িতে ঢোকার সময় রহস্যের হাসি হেসে তাকে বলল,''এখানে আপনি ? কতদিন দেখিনি আপনাকে এ বাড়ির মুখে । তা ব্যাপারটা কী ? কিছু পেন্ডিং পড়ে আছে নাকি ? হতেও পারে ।''
সাথে-সাথে সুধাংশু একরাশ লজ্জা নিয়ে সেখান থেকে হাওয়ার থেকেও হাওয়া । তার গতি দেখে ছাদ থেকে ছাদে দেবাশিসের মা মুহূর্তে সব দুঃখ ভুলে হেসে গড়াগড়ি গেলো প্রায় । দেবাশিস তখন ওর মার পাশেই ছিল ।
এক চিলতে ও হেসে বলল তাকে,''এ হাসি ঈশ্বরের কষ্ট ভোলানোর ওষুধ । তাই না,মা ?''
কিন্তু নিমেষে মার দু'চোখ জলে ভরে এলো বুঝি তার দেবদাসের কথা ভেবে ।