'এই রানী কখন
থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস
না? মাসি ডাকছে
তো,তোর জন্য
তো আবার আর এক
খদ্দের গাড়ী পাঠিয়েছে,
কোথায় যেন যেতে হবে,বাবুলাল সংগে যাবে,তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে
নে। তোর কপাল বটে.....
আজ শরীর
ভালো লাগছিল না,কিন্তু এখানে ওসব
কথা কেউ শুনবে না,যেতেই হবে। তাড়াতাড়ি
তৈরী হয়ে শীততাপনিয়ন্ত্রিত গাড়ীতে
উঠে পড়ল বাবুলালের সাথে।
অনেকদূর পথ। যে বাবুলাল
খুব একটা কথা বলে
না সেও বলে বসল
'কি কপাল মাইরি তোর
রানী , মাঝে মাঝেই বেশ
দামী দামী গাড়ী চড়তে
পাস,মোটা টাকা
পাস, সাধে কি
আর তোকে মাসি এত
খাতির করে!'
হ্যাঁ কপালই
বটে রানীর! "রানী
" এই
নামটা মোটেও ওর আসল
নাম নয় ওর দাদুর
দেওয়া সুন্দর একটা নাম
ছিল 'স্বস্তিকা'...
হঠাৎ করে পুরনো কথা
মনে পড়ে যায় তার.......
তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী
আর সুন্দরী ছিল সে।
বাবা মা এর একটা
চাপা অহংকার ছিল ওকে
নিয়ে। আর সেই সুন্দরী
যদি বড়লোকের সন্তান হয়
তাহলে তো কথাই নেই।
আশেপাশে প্রেম নিবেদন করার
তো বটেই লোলুপ দৃষ্টির
মানুষেরও অভাব ছিল না।
স্বস্তিকার চোখে
তখন ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন।
কিন্তু ছন্দপতন ঘটল সেইদিন
থেকে যেদিন ওর বাবার
বিজনেস পার্টনারের ছেলে রোহিতের
সাথে বিয়ের ঠিক হওয়ার
খবরে বাবাকে রাজি না
করাতে পেরে নিজের ভালোবাসার
মানুষ সামান্য মাইনের চাকরী
করা প্রভাসের সাথে ঘর
ছেড়ে সুদূর মুম্বাই থেকে
কলকাতায় আসে।তীব্র অভিমানী বাবা,মা কিন্তু সেইদিন
থেকে মেয়ের সাথে সম্পর্ক
ত্যাগ করেছিলেন।
নতুন জায়গা
নতুন শহর প্রথম কটাদিন
ভালোই কেটেছিল।কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গ হল
সেইদিন যেদিন নিজের স্বামী
আর তার বন্ধুদের লালসার
শিকার হতে হয়েছিল। তারপর
একদিন নিজেকে অচৈতন্য অবস্থায়
আবিষ্কার করেছিল 'মাসির'
ঘরে। প্রথম কটাদিন ধাতস্থ
হতে সময় লেগেছিল,
তারপর বুঝেছিল কি ঘটেছে।
যেদিন এইখানে প্রভাসকে দেখেছিল
সেইদিন বুঝেছিল চাকরীর কথা
ফালতু আসলে ও এই
এলাকার দালাল। সেইদিন থেকে
রোজই এক জীবন। সুন্দরী
বলে তার আলাদা খাতির।
পয়সাওয়ালা খদ্দেররা আসে শুধু
তার জন্য। আর এখান
থেকে বেরোনোর কোন উপায়
নেই বুঝে এই জীবন
মানতে বাধ্য হয়েছিল।
'মাসি' আর যাইহোক তাকে
খাতির যত্ন করে তার
থাকার ব্যবস্থাও একটু আলাদা।
সে এখানে নয় বড়
বড় হোটেলে যায় 'এসকর্ট' হিসেবে।
হঠাৎ বাবুলালের
ডাকে চমকে উঠল গাড়ী
একটা বিশাল হোটেলের সামনে
এসে থেমেছে। আজ তাকে
এখানে একজন নয় দুজনের
সাথে শুতে হবে,
এর জন্য মোটা টাকাও
দেবে,কিছুটা অ্যাডভান্স করেছে
আগেই।,তারপর সে যাবে
আর একজনের ঘরে,
'নীলের' ঘরে।তবে এই
পথে আর বেশিদিন থাকতে
হবে না তাকে কথা
দিয়েছে তারই এক ক্লায়েন্ট
'নীল'। সে একটি নামী
আই টি কোম্পানির উচ্চপদে
আছে। একদিন এক হোটেলে
এসেই তার সাথে আলাপ।মার্জিত ব্যবহার
স্বস্তিকার ভালো লেগেছিল। গত
২ বছরে নীলের সাথে
মানসিক ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। যাইহোক
নীল কথা দিয়েছে ওকে
বিয়ে করবে এই জীবন
থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
ব্যাংগালোর এ ট্রান্সফার এর
চেষ্টা চালাচ্ছে কনফার্ম হয়ে
গেলেই ওকে নিয়ে চলে
যাবে। আর সেটা ঘটতে
চলেছে আজ সব ব্যবস্থা
পাকা, সবার চোখে ফাঁকি
দিয়ে এই হোটেল থেকে
কিভাবে পালাবে সব ঠিক
করা আছে,কারণ
আজ এই হোটেলে যে
আসবে সেটা নীলকে আগেই
জানিয়ে রেখেছে। নীলের ঘর
থেকেই পালানোর কথা একসাথে।
হোটেলের লোককেও সেভাবে ঠিক
করে রেখেছে।
মনের মধ্যে
প্রচণ্ড উত্তেজনা হচ্ছে স্বস্তিকার,আজ যে মুক্তির
দিন।কিন্তু চিন্তাও হচ্ছে বাবুলাল
সাথে আছে এর চোখে
ফাঁকি দেওয়া এত সহজ
নয়। রিসেপশন এ কথা
বলে বাবুলাল জানাল কোন,রুমে যেতে হবে,আর সেই সাথে
সে যে এখানেই থাকবে
তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার
জন্য সেটাও ভুলল না
প্রতিবারের মত।
মনে মুক্তির
আনন্দর কথা ভাবতে ভাবতে
সে প্রথম রুমের বেল
বাজাল, দরজা খোলার সাথে
সাথে অনেকগুলো গলার আওয়াজ
কানে ভেসে এল। ভেতরে
ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেল
স্বস্তিকা, এত নীল আর
সাথে আরও ৪-৫ জন তাহলে
কি ভুল করে নীলের
রুমে আগে চলে এল?
ভাবনায় ছেদ
পড়ল ওদের মধ্যে একজনের
কথায় 'উফ কি জিনিষ
রে! তোর পছন্দ
আছে বলতে হবে',
সেইসাথে নীলের মুখের অদ্ভুত
হাসি। কিছু বলার আগেই
একজন এসে জড়িয়ে ধরল,
স্বস্তিকা কোনপ্রকারে নিজেকে ছাড়াতে
চেষ্টা করতেই নীল বলল
'আরে এত ছটফট করছ
কেন, আজ প্রথম
নাকি? এরা আমার বন্ধু
আজ একটা দারুণ ডিল
ফাইনাল হল এরা সবাই
ট্রিট চাইল,আর
একটু অন্যরকম আনন্দ তাই
তোমাকে বেশী টাকা দিয়ে
আনতে হয়েছে'।
'মানে'?
'মানে আবার কি?
তুমি আজ এদের খুশি
করবে,মানে যা রোজ
কর'
'কিন্তু তুমি তো
চাইতে না আমি এইকাজ
করি,আজ তো
তোমার সাথে আমার চলে
যাওয়ার কথা,তাহলে....
'সে কিরে নীলয়
একে তুই কোথায় নিয়ে
যাওয়ার প্ল্যান করেছিস,
আমরাও সেখানে যাব তো
নাকি তুই একাই মজা
নিবি?' পাশ থেকে একজন
বলল
'ধ্যুস এর সাথে
কোথায় যাব? এইসব
মেয়েদের কথা তোরা বিশ্বাস
করিস? আজ সবাই মিলে
শুধু মস্তি করব,কি রানী পারবে
তো সবাইকে খুশী করতে?'
স্বস্তিকার নিজের
কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না,কি সব বলছে
নীল! নীল না
তো এরা তো নীলয়
বলল,তারমানে সব
ভুল,সব ভাঁওতা?
আবার বিশ্বাস করে ঠকল?
নাঃ শেষ চেষ্টা করতেই
হবে।
'কি সব বলছ
তুমি? তুমি তো আমাকে
রানী বলে ডাক না...
'মেলা কথা বলছ
রানী, মুড অফ করে
দিও না। আর তোমাকে
রানী বলব না তো
কি বলব
স্বস্তিকা? শোন ওইসব নাম
ভদ্র মেয়েদের মানায়,
তোমাদের মত মেয়েদের ওই
রানী, ময়না এইসবই ঠিক
আছে... কথা শেষ হওয়ার
আগেই নীলের মোবাইল বেজে
উঠল, সেদিকে তাকিয়ে
বলল 'এই তোরা
মজা কর, মেয়ে
ফোন করেছে কথা বলে
ফিরে আসছি, আর
আমার জন্য আলাদা করে
ওকে ছেড়ে দিস তোরা'
বলে বেরিয়ে গেল।
মেয়ের ফোন?
তারমানে নীল বিবাহিত?
আবার ঠকল সে!
সত্যি আজ
আর 'স্বস্তিকার'
কোন অস্তিত্ব নেই,সে আজ
'রানী', তাদের মত মেয়েদের
মুক্তি হয় না,হতে নেই!
দুচোখের জল আজ বাঁধ
মানছে না,কিন্তু
সেদিকে কারুর খেয়াল নেই,ততক্ষণে তার শরীরে
বাকিদের হাতের খেলা শুরু
হয়ে গেছে।