গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

অলভ্য ঘোষ

ভাগ
(৩য় ও শেষ অংশ)                                                                                                            

পর্ব-৯
ভাগ সমাধান করে মনোতোষ বাবু; মনিমালার সামনে উজ্জ্বল বদনে এসে দাঁড়ালেন; ভাবখানা এমন সম্প্রতি তিনি বহু দিনের একটি মামলার হাল করে বিবাদী পক্ষকে নাকানি চুবানি খাইয়ে গোহারা হারালেন। মামলাবাজ লোক এই মনোতোষ বাবু। কারণে অকারণে মামলা করেন। কয়েকশো গ্রামের লোক তার কথায় ওঠেন বসেন। ভাত ছাড়লে যেমন কাকের অভাব হয় না; সাক্ষী জোগাড় করতেও তার তেমন অসুবিধে হয় না। সুবলের বিরুদ্ধে ও তিনি ৪৯৮এ আইন অনুসার বধূ নির্যাতন মামলা হানবে ঠিক করেছিল। যে রাতে প্রবল অবমাননা নিয়ে তার মেয়ে সবিতা ফিরে এসেছিল বাপের বাড়ি। মনিমালাকে তো মানহানির মামলায় ঝোলাবে বলে হুমকিও দিয়েছিল যখন সে উপযাচক হয়ে ঘরের লক্ষ্মী সবিতাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেন নি কারণ স্ত্রী বাধা দিয়েছিল; ব্যাপারটা এমনই রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। মামলা মোকদ্দমা করে থুতু ছিটালে সে থুতু নিজেদের গায়ে ফিরে আসবে। সবিতার মা জানতো মেয়ের সম্মান ও জড়িত। রাগে মনোতোষ স্ত্রীকে বলেছিল ;
-"মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেবো।"
কিন্তু পুরুষের পক্ষে দ্বিতীয় বার বিবাহ করা যতটা সোজা; মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রাম বাংলার মেয়েদের ক্ষেত্রে এখনো এ সমাজে এ বিষয়টি তেমন সড়গড় হয়নি। ফলে মাথা ঠাণ্ডা করতে হয়েছে মনোতোষ বাবুকে।সেই শীতল মস্তিষ্ক অব্যাহত রেখেই মনোতোষ বাবু বললেন; 

-"মনিমালা দেবী; ভাগাভাগি সম্পন্ন হয়েছে। বিমলের অভিভাবক আপনি; আমি যেমন সুবলের। অভিভাবক কেন বলবো আপনিও তো এ সম্পত্তির অধিকারী; আপনার যদি কিছু বলার থাকে তো বলতে পারেন।"
মনিমালার ভেতরটা তোলপাড় হচ্ছিল নদীর মত। ঢেউ এর তোরে এ পরিবারের পাড় ভেঙে ধসে পড়তে দেখছে সে। যে পাড়ের উর্বরতা আর্দ্রতা রক্ষার ভার ছিল স্বয়ং নদীর হাতেই; রাক্ষসী নদী সে পাড় উদরস্থ করেছে; মনিমালা নিজেকে দংশন করছিল। সুবলের এতটা বাৎসল্য সে কেন প্রশ্রয় দিল।সে তো আজ শিশু নয়। সবিতাকে সে কখনও দোষারোপ করেনি; দোষারোপ করেছে নিজের কপাল কে। গালিগালাজ করেছে বিধাতা কে যে এমন নিষ্ঠুর খেলা খেলে প্রতিনিয়ত আনন্দ পায় ; বিচ্ছেদে বিয়োগে অথচ মানুষ বেঁচে থাকে শুধু মিলনের বাসনা নিয়ে। পরোপার মনিমালা জানে না। তারতো এ পারেতে সব ছিল। শিবের মত স্বামী, লক্ষণের মত দেবর, ভগীরথের মত পুত্র। অথচ কি নিষ্ঠুর কৃপণ ভাগ্য দেবতা। মনিমালার এবার কিছুটা রাগ হল। মনোতোষ বাবুর কথাগুলোর মধ্যে অপমান ছিল কিনা জানিনা তবে; পূর্বে লাঞ্ছিত মনিমালা তার কথাগুলোর মধ্যে অনুরণিত ধ্বনি পেল অপমানের। অতি কষ্টে কটা কথা জোগাড় করে মনিমালা লোক সম্মুখে মুখ খুলল।
-"এ পরিবারের কোন কিছুর উপর আমার যে অধিকার আছে এ বোধ যে আপনার জন্মেছে মনোতোষ বাবু জেনে ভালো লাগছে। আরো জানতে ইচ্ছে রাখি আপনি যার অভিভাবকত্ব করছেন সে কি আপনাকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকার করেন।"

ঘাগু উকিলের মত মনিমালার কথায় মনোতোষ বাবু যেন ভিমরি খেলেন। তবে অপমান বোধ করলেন না। কেউ রামের পূজা করে কেউ বা রাবণ। কারো ভগবান করা কাছে শয়তান হতেই পারে। ব্যক্তি বিশেষত্ব ব্যাপারটাকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয়; মনোতোষ বাবুর চরিত্র টা এমনি যে তাকে যদি পাঁচ খুরে করে ঘোল ঢেলে গাধার টুপি মাথায় পরিয়ে গ্রামে ঘোরানোর পর যদি মাত্র সূচ্যগ্র মেদিনীর ও মালিকানা প্রাপ্তি ঘটে; অপমানিত হতে তার কোন আপত্তি নেই। চামড়ার শরীর মান অপমান আবার কি! ভালো করে সাবান মেখে স্নান করলে শরীর শুদ্ধ। ওসব ছেঁদো কথায় মনোতোষ বাবুর মত লোক ভোলার নয়।রাস্তায় গুয়ের উপর পয়সা পড়ে গেলেও তিনি তা তুলে ধুয়ে নিতে সংকোচ করেন না। ওরে বাবা বিষয় সম্পত্তি ব্যাপারটা সবার জন্য নয় । যে নিজের স্থান মান অপমান ভুলে বিষয় সম্পত্তির সম্মান করতে পারে; বিষয় আশয় কেবল তার। যেমন কোন রমণী অনেকের কাম্য হতে পারে। তবে ভার্যা হন এক জনের। যে তাকে মাল্য প্রদান করে তেমনটি আর কি!
 

কার কাছে কেউ মানী; কার কাছে কেউ জ্ঞানী; আবার কার কাছে তুচ্ছ মূর্খ। পাত্রর উপর নির্ভর করে বস্তুর ধারণ ক্ষমতা; এক কুনকে তে কি এক গোলা ধান ধরে। আবার এক গোলা ধান তুচ্ছ বস্তার উদরস্থ হলে কেমন বস্তাও ফুলে ফেঁপে; মহাজন হয়ে ওঠে; কেউ খেয়াল করে না। বস্তুর উপর নির্ভর করে পাত্রের মান; যার টাকা আছে সে ধনী; আর যার নেই সে ভিখারি। কিভাবে এত টাকা হয়েছে এটা কেউ দেখে না; মনোতোষ বাবুর মত লোকে দের মতে দেখা উচিতও না; কচু পাতায় যেমন জল ধরে না । কথিত রয়েছে ডুমুর গাছে যেমন ফুল ধরে না। মনোতোষ বাবুদের গায়ে তেমন এসব তুচ্ছ ছেঁদো কথা দাগ কাটে না। যেন তেন প্রকারেণ প্রভূত লাভ তার জীবনের বীজ মন্ত্র। লোকসানের কথা সে কদাচিৎ স্বপ্নেও ভাবে না। যে লোকসান করেনি কখনো ; তার কি লাভ করার উপায় কখনো শিক্ষা হয়? না হয় না। কিছু পেতে গেলে কিছু তো হারাতে হয়ই!

হাওয়ায় বেলুন বাড়ে পেটে বাড়ে গ্যাস অম্বল। মনোতোষ বাবুর অভিভাবকত্ব নিয়ে মনিমালা যে প্রশ্ন খাড়া করলেন সে ব্যাপারে দুই একজন মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেও কেউ মুখ খুললেন না।যারা এসেছে তারা যে তলায় তলায় বিকিয়ে বসে আছেন। ভালোয় ভালোয় মনোতোষ বাবুর জামাতার ভাগটি হৃষ্টপুষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে পারলেই রাতে ইংরেজি মদের সাথে খেউরের মেয়ে ছেলে মনোতোষের চিংড়ি হাটার বাগান বাড়িতে। সুরাপানে কিংবা বাগান বাড়িতে খেমটা নাচাতে মনোতোষ বাবু কার্পণ্য করেন না। আহত হন বারোয়ারির উন্নয়নমূলক চাঁদা দিতে। তবে সে ব্যাপারেও সিদ্ধ হস্ত হন সেক্রেটারি কিংবা সভাপতি পদপ্রার্থী হলে। সুপ্ত মান সম্মান প্রাপ্তির বাসনা কার না থাকে। আর মনোতোষ বাবুর মত মানুষজন সংসারে যাদের সব আছে কেবল মান নেই;তারা ভাবে ওটা আলু,পটলের মতো পয়সা দিলেই বাজারে মেলে। মান যে অর্জন করতে হয়;খরিদ করতে গেলে আরো অপমান বাড়ে এ বোধ এধরণের হেঁড়ে মাথার মানুষদের মাথায় ঢোকে না।তারা মানী হতে গিয়ে আরো অপমান অতৃপ্তি আত্মিক শূন্যতা নৈতিক অবসাদের সঞ্চয় করেন।সুবিধা একটাই এই ধরনের মানুষদের মান অপমান কোনও বোধয়ই দীর্ঘ দিন জীবিত থাকে না।
পর্ব-১০
মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল সবিতা। মনিমালা; তার বাবার অভিভাবকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করায় তার বুক খানা তপ্ত লোহার জল স্পর্শ করার মত ছেঁক করে বেজে উঠলো অপমানে। সুবলের বৌদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা না করে সুবলের হয়ে ব কলমে সুবলের স্ত্রী হিসেবে সে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো বাবার পাশে।
-"এ বিশ্ব সংসারে আমার বাবার চাইতে অধিক ভালো চাইবার লোক আমাদের আর কে আছে।"
মনিমালার ঠোঁট থেকে শুধু একটা অস্ফুট স্বর বেরোল।
-"ছোট!"
সবিতার কোন ভাবান্তর হল না। সুবল স্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলল না। আগের মত একই রকম ভাবে বধিরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
মনিমালা সুবলের দিকে চেয়ে যেন আরো অবলম্বন হীনতায় ভুগলেন; উঠে দাঁড়িয়ে বললেন;
-"বেশ! ভাগের কি দরকার ছিল ! বিমল এর সম্পত্তিতে বিন্দুমাত্র আসক্তি নেই। আমিও চাই না; যেখানে সম্মান নেই সেখানে আর এক মুহূর্ত থাকতে। বিমলের সাথে আমি কলকাতায় চললাম।"
সুবল গাভী হারা বাছুরের মত ছলছলে চোখে ঘুরে তাকায় বৌদিমনির দিকে।
মনোতোষ বাবুর মুখ উজ্জ্বল হল। নোলা থেকে যেন পুরো সম্পত্তিটা পাবার সম্ভাবনার জল গড়িয়ে পড়ল উঠানের মাটিতে।
সবিতার দুর্ভাগ্যক্রমে একটু ও করুণার উদয় হল না মনে। সে বলে বসল;
-"আমরা তো ভিখারি নয়; যা দেবে দু হাত পেতে নিয়ে নেব।প্রাপ্য টুকু চাই এক চুল অতিরিক্ত কিছু চাই না ।"
মনোতোষ বাবুর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠলো মুখপোড়া হনুমানের মত। বাবার দুরভিসন্ধির কথা যদি জানতো; সবিতা বোধহয় লজ্জা পেত। সবিতার কথায় মনঃক্ষুণ্ণ হল মনোতোষ বাবু।
মনিমালার মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। কদিন দিয়ে ঘুম খাওয়া সব গেছে তার; ঠাকুর ঘরে পরে পরে শুধু কেঁদেছে আর ভগবানকে বলেছে। ভাঙ্গা সংসারটা জুড়িয়ে দাও। বুক ফেড়ে রক্ত দেব তোমায়। পাথরের ভগবান গললো না। কেউ তার কথা শুনল না। আসামীর মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একটার পর একটা জেরায় ক্ষত বিক্ষত করে চলল তাকে। দরজার কাঠের পাটাতনটি ধরে মনিমালা কোনক্রমে নিজেকে সামলায়। তার আটকে আসা গলায় অতি কষ্টে প্রাণ সঞ্চার করে বলে;
-"বেশ! ভালো! অধিকার টুকু বোঝ। অপমান অবমাননা টুকু আমার জন্য রাখ ছোট।"
সবিতার এসব কথা যেন কানেও ঢুকল না।মনিমালা বলল;-"মনোতোষ বাবু আপনি যে ভাগ করেছেন তাতে সুবল একটা বড় অংশ থেকে বাদ পড়ে গেছে।"

মনোতোষের চোখ কপালে উঠলো; তিনি এ বাড়ির পুরাতন কাজের লোকদের কাজে লাগিয়ে দলিল দস্তাবেজ কাগজপত্র সব খুঁজে বের করেছেন; লোক লাগিয়ে জলপানি দিয়ে; টাকা পয়সা ব্যাঙ্কে সঞ্চিত অর্থের হিসাবপত্র অনুসন্ধান করেছেন নিজে সদরে গিয়ে। তদুপরি সমাধান করেছেন ভাগ। এই ভাগে বিমলের খামতি থাকলেও সুবলের কোনও খামতির উপায় নেই। কাঁসার পানের বাটা সুবলের ভাগে পড়লে; সুপারি কাটার যাঁতি টা পেয়েছে বিমল। মনিমালা সুবলের বঞ্চিত হবার কথা বলায় চিন্তার ভাজ দৃঢ় হয়ে পড়ে মনোতোষ বাবুর কপালে। মনোতোষ বাবু সোনা দানার কিছু খবর পেয়েছিল; যা মনিমালা কে তার শাশুড়ি ঠাকরুন দিয়েছিল; এ বাড়িতে নববধূ হয়ে আসার সময়। তা তার একান্ত ব্যক্তিগত হওয়ায় মনোতোষ বাবু আর সেটা নিয়ে ঘাঁটায়নি। আবেগের পীড়নে মনিমালা যদি সেটাও ভাগ দিতে চায় ক্ষতি কি! মেয়ে অনীহা দেখালে বিপদ তাই মনোতোষ বাবু আগে ভাগেই মুখ খোলেন।
-"কোন অংশের কথা বলছেন বলুন তো।"
মনিমালা বলে;
- "সে অংশটা সবার সামনে আমি দেখাতে পারবো না। আপনার মেয়েকে বলুন আমার ঘরে আসতে।"
মনিমালা ঠাকুর ঘরে ঢুকে যায়। সবিতার মনিমালার কাছে যাবার বিন্দু মাত্র আগ্রহ না থাকলেও বাবার ঠেলায় এগিয়ে যায়। চোখের ইশারা করে তাড়াতাড়ি যা। ফিসফিস
করে বোধহয় বলেও বসে।
-"সুযোগ হাতছাড়া করিস না।"

পর্ব- ১১

অবিশ্বাস আর সন্দেহ মন্ত্রপূত সর্পের মতো করে তোলে মানুষ কে। কোন দিকে না চেয়ে শ্লথ পায়ে বারান্দার দরজা ডিঙ্গিয়ে ঠাকুর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সবিতা।
বিধাতার কি খেলা দুই’দিন আগেও যে বাড়িটির প্রতিটি জানালা কপাট সবিতার সাদর সম্ভাষণ করতো প্রতিটি ইট মনে হতো মমত্বের বন্ধনে গাঁথা। আজ সেখানে ঘৃণা আর বিশ্বাস ভঙ্গ তা সবিতার পা দু’খানা ভারি করে তুলল। দরজা থেকে ঠাকুর ঘরের দূরত্ব মনে হল কয়েক যোজন দূর। ভালোবাসা কয়েক ক্রসের দূরত্বকেও খুব কাছের করে; আবার হৃদয়ের গোলযোগে গায়ে নিঃশ্বাস পড়া নিকট জন কেও মনে হয় দূর।
নিস্তব্ধতায় গম্ভীর কাঁসরের ওপর এক ঘায়ের ঝঙ্কার ময় আওয়াজে পা থেকে মাথা অবধি যেমন কেঁপে ওঠে সবিতার তেমনটি হল মনিমালার কণ্ঠস্বরে।
-"ভিতরে আয়।"
ঠাকুর ঘরের ভিতরে গেল সবিতা।
সবিতার দিকে পিছন ঘুরে ঠাকুরের সামনে উপবিষ্ট মনিমালা।
সবিতার মনে হল এ আবার নতুন কোনও ছলনা শুরু করেছে সে।
মনিমালা বলল;
-"ছোট তুই তো মা হতে যাচ্ছিস। কদিন বাদে বুঝবি মায়ের সবচেয়ে বড় ধন কি। যাক যা ভবিষ্যতে বুঝবি তা ভবিতব্যের হাতে থাক। এখন বুঝতে গেলে অবান্তর সময় নষ্ট হবে। আর তোর মনে হবে আমি কাঁদুনি গাইছি। সুবল আমার ছেলে নয়; তবে ওকে জন্ম না দিলেও স্তন দিয়েছি আমি।"
এবার বিরক্ত বোধ করতে শুরু করেছিল সবিতা; তার কথায় তা প্রকাশ পেল।
-"এই সব কথা বহুবার শোনা!"
পেছন ঘুরে থাকায় মনিমালা কাঁদছিল কিনা বোঝার উপায় ছিল না। তবে এবার তার গলাটা একটু নরম শোনাল।
-"কথাগুলো বহুবার শোনা।তোর শুধু জানা নেই; সুবল কেন এই বুড়ো বয়সেও আমার সান্নিধ্য ছাড়তে পারছে না!"
এবার সবিতার রাগ হল;
-"এইসব ফালতু কথা শোনবার জন্যই তুমি আমাকে বাইরে থেকে ভিতরে নিয়ে এলে।"
মনিমালা ধরে আসা গলায় বলল;
-"না! যে ভাগ টুকু তোর হাতে থাকলে সুবল তোর বশে থাকবে সে ভাগ টুকু দিতে চাইছি।"
সবিতার খরা গ্রস্ত জমিনের মতো রুক্ষতা মনিমালার চোখের জল আর মধু ভাষণে কিছুতেই ভিজল না।
-"ভণিতা করো না।"
মনিমালা এবার ভণিতা ছেড়ে খুব সহজেই ঠাকুরের বাসনপত্রের পাশে রাখা নিরামিষ বঁটিটা হতে তুলে নেয়। পেছন থেকে সবিতা মনিমালার বুকের আঁচল টুকু শুধু খসে পড়তে দেখে। তারপর শোনে একটি আত্ম চিৎকার।
-"নে! আমার বুক খানা কেটে নে! সুবল আমার স্তনের অংশীদার। নে ওর ভাগটা ওকে দে।"
কথা জড়িয়ে আসছিল মনিমালার। সবিতা হতচকিত ভাবে এগিয়ে গিয়েছিল মনিমালার সামনে। মেঝেতে উপবিষ্ট মনিমালা; বঁটির আঘাতে ডান হাতে তার বাম স্তনটা শরীরের সংযোগস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পোঁচ মেরে চলে। থরথর করে কাঁপে সবিতা! এমন দৃশ্য সে কখনো দেখেনি। বঁটির কোপের আঘাতে উন্মুক্ত বুক খানা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। চিৎকার করে ওঠে সবিতা।
-"এ কি করছ দিদি "
মনিমালার চোখ দুটো ভেসে যাচ্ছে জলে। কথা গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে অস্পষ্টতায়। অনেক কষ্টে গলা চেপে বলল;
-"মাথা খা বোন চেঁচাসনি।"
সবিতা মনিমালার হাত খানা চেপে ধরতেই মনিমালা অজ্ঞান হয়ে যায়। সারা গ্রামের লোক এসে জড়ো হয় ঠাকুর ঘরে। এমন বিচিত্র ভাগ তারা জীবনে দেখেননি। জানি না মনোতোষ বাবু মনোকষ্টে ভুগলেন কিনা। তবে সবিতার এবার সত্যিই আত্মদংশন হচ্ছিল। বিমল আর সুবল মনিমালাকে নিয়ে ছুটল কলকাতার হাসপাতালে। এ গ্রামের আর কেউ নয় তারা যে দুইজন অংশীদার এই স্তন্য দায়িনী মায়ের!
আজকের মত ভাগ অসমাপ্তই রয়ে গেলো।