অম্লান
পড়াশুনোয় খুব ভালো ছেলে । বাবা মায়ের এক সন্তান । বাবা মায়ের আদরের চেয়ে শাসন ই
বেশি ছিল ওর প্রতি। ছোট বেলায় দুষ্টুমি করত তার জন্য বকা খেত । ক্লাসে ফার্স্ট বয়
না হলেও মোটা মোটি ভালো রেজাল্ট করত। মাধ্যমিকের পর কলেজে ভর্তি র পালা। উচ্চ
মাধ্যমিক । সকলে বলে টার্নিং পয়েন্ট, ক্যারিয়ার গুছনর সময়।
বাবার
রিটায়ারের সময় এসে গেল মাত্র
৫ বছর । এরমধ্যে তাকে মানুষ হতে হবে। ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে হবে । এইসব
চিন্তা নিয়ে কলেজের ফী কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিল। হটাত পকেটে হাত দিয়ে দ্যাখে মানি
ব্যাগ নেই। কাউন্টার থেকে বেরিয়ে বাবাকে ফোন করে তার জন্মদিনে গিফট পাওয়া মোবাইলে
।
বাবা , আমার পকেট মার হয়ে গিয়েছে । কলেজে এসে দেখি পার্স টা নেই। বোধহয় বাসে পকেট মার
হয়ে গিয়েছে !
সেকিরে কত
টাকা ছিল ?
তা দুটো
৫০০ টাকার নোট আর কিছু খুচরো টাকা সব মিলে টা ১২৫০ কিম্বা ১৩০০ হবে।
তুই বড্ড
কেয়ার-লেস । এরকম করে টাকা হারালে আমি কোথা থেকে পাবো বল ?
আর হবে
না। এবারের মত মাফ করে দাও । এখন এডমিসন এর টাকা দরকার টা ১১৫০কা। এখানে কোন
বন্ধুর কাছে না পেয়ে তোমায় ফোন করলাম।
ঠিক আছে
আমায় এক ঘণ্টা সময় দে। ওখানেই থাক ।
আমি যাচ্ছি ।
সুনীল
বাবু সবে খেয়ে উঠেছিলেন।
কি হয়েছে ? গিন্নী বলেন ।
তোমার
গুণধর পুত্র টাকা হারিয়েছে । বাসে টাকা পিক পকেট হয়েছে।
ওমা সেকি? এখন টাকা .....
দাঁড়াও
দেখি । নিজের মনি ব্যাগে
৪০০০ টাকা আছে দেখে শান্তি ।
স্কুটার
টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন । ছেলেকে কলেজে টাকাটা দিয়ে অফিসে চলে যাবেন। মাথার মধ্যে
ঘুরপাক খাচ্ছে প্রমোশন নিয়ে । ওনার এই বছর প্রমোশন হওয়ার কথা। সেক্রেটারি
কনফিডেনসিয়াল রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি (ডি.পি.সি) তে এপ্রুভ হলেই গেজেট নোটিফিকেশন । এবারে সারা জেলার দায়িত্বতে থাকতে হবে........
হঠাৎ
ক্যাঁচ করে এক শব্দ আর প্রচণ্ড আওয়াজে সামনে ছিটকে পড়লেন রাস্তার ওপর ....
হসপিটাল
থেকে ফোন গেল অফিসে , বাড়িতে।
অম্লান এক
বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ল হসপিটালে। সেখানে গিয়ে দেখল সব শেষ । মাথা থেঁতলে গিয়েছে
। ডাক্তার বললেন অত্যন্ত রক্ত ক্ষয়ে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত লাগাতে বাঁচান গেলনা।
হেলমেট পরা অবস্থায় এরকম সচরাচর হয়না। বাসের ড্রাইভার কে আটক রাখা হয়েছে।
অম্লানের
মাথায় যেন বজ্রপাত হল। ও শুধু চিৎকার করে বলল ,
“বাবা আমি তোমার মৃত্যুর জন্য দায়ী । আর কেউ নয়
আমি আমি”এটাই অম্লানের শেষ ডাক ছিল বাবা
বলে।