আনমনেই
চায়ের কাপে ঠোঁট ঠেকাতে চরম বিস্বাদে ভরে উঠল মুখটা। চোখ ছিল চিলটার দিকে। অনেক
উঁচু থেকে ক্রমশ ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পরে কিছু একটা মুখে নিয়ে উড়ে গেল।
বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচর দিয়ে উঠল তন্ময়ের। জানলার ফ্রেম ছেড়ে,
দূরের তালগাছটা ছাড়িয়ে অনেক অনেক উঁচুতে উঠতে থাকল তন্ময়,
তারপর দ্রুত নেমে আসতে থাকল কলকাতার চেনা ভিড়ে......... নিজেই ড্রাইভ করে চলেছে তন্ময়, একটা
নামকরা এন.জি.ও-র
প্রজেক্ট কো-অরডিনেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সে। শেষ ছয়মাস বাইরে থাকায় নিজের প্রজেক্ট
এরিয়াতে আসা হয়ে ওঠেনি তাঁর,
আজ অবশেষে.........।
অফিসের সামনেই তার চোখে পড়ল একটি মেয়ে একটি ছোটো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পড়িমরি ছুটছে।
অনেক পিছনে ছুটছে তার এন.জি.ও-র সুবাসদা, মান্তুদা আর শুক্লা দি। খবর নিয়ে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছল তন্ময়। বেঁচে গেছে সাপে কাটা বাচ্চাটি......... মেয়েটি সুন্দরী বললে বাড়াবাড়ি হবে। গায়ের রঙও ঈষৎ চাপা। দেমাক?
নাকি মামনির পারসোনালিটি, কোনটা আসলে
আকর্ষণ করত তা আজও বুঝে উঠতে পারেনা তন্ময়। দুমাস আগে এন.জি.ও তে যুক্ত হয়েছে মামনি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার, ডবলুবিসিএস ক্র্যাক করেও
সব ছেড়ে দিন কাটাতো শিয়ালদা স্টেশনের পথ-শিশুদের সাথে। শ্রীহিরবাবুর অনুরোধে এখন তাদের এনজিওতে............ “বেড়াল মারা”-র সাপটা ফণা তুলতে সময় নেয়নি তন্ময়ের। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে ডেকে পাঠানো,
হাতেহাতে কাজ, পাশেপাশে চলা, দামী ডিও’র আবেশ, পাশে
থাকার অঙ্গীকার, সাজানো ভবিষ্যতের হাতছানির নিবিড়তা ঘন হল
দামী হোটেলে। মন ছাড়িয়ে শরীর চেনা হ’ল। ঠিক হ’ল মিলিত স্রোতের নাম হবে তমাল বা তটিনী। তারপর............... বীরভূমে একটি প্রজেক্টে এসে জয়েন্ট বি.ডি.ওর একমাত্র কন্যা বিদিশাকে চিনল তন্ময়, জটিল স্ত্রীরোগের কবলে
তার মাথার চুল গোনা যায়, পড়াশুনা উচ্চমাধ্যমিকের ব্যারিকেডেই
আটকে আর পথ পায়নি, কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য
বৈভব! না, সুন্দর, সুঠাম, উচ্চাকাঙ্ক্ষী তন্ময় ক্যাল্কুলেশন করে
ভেসে যেতে সময় নেয়নি। আর অন্য বাঁকে অন্য স্রোতে ভেসে গেছে মামনি। শ্বশুরের
আনুকূল্যে বার্ষিক ট্যুর থেকে ফেরার সময় শিয়ালদা স্টেশনের পথ-শিশুদের
মাঝে একটি ফুটফুটে মেয়ে চোখ টেনে নিলো তন্ময়ের। বিদিশাও দেখেছে মেয়েটিকে। মজা করে
বিদিশা বললো - “ওর চোখ আর বাঁ কানের নীচে
জড়ুলের দাগটা ঠিক তোমার মতো, আমাদের মেয়েটা যেন এমনই হয়”। বুকটা কেমন হু হু করে উঠল তন্ময়ের। এক অদ্ভুত টানে বিদিশাকে স্টেশনে
বসিয়ে ছোট্ট মেয়েটির পিছু পিছু পৌঁছে গেল “সিনি-আশার” পথ-শিশুদের স্কুলে। জানল, এই স্কুলেরই দরজায় কেউ রেখে গেছে তাঁকে,
সাথে শুধু একটি নাম লেখা কাগজ। তটিনী............।। অনেক উঁচু থেকে হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পরে কিছু একটা মুখে নিয়ে উড়ে গেল
যেন সেই চিলটা............।।