অনেক ঘাটের জল খেয়ে তবে আজ কেদার
পাণ্ডে প্রথিতযশা বডি মিস্ত্রি হয়েছে । সারাটা জীবন ভর কম কষ্ট তো করতে হয় নি । সে
সব দিনের কথা ভাবলে আজও চোখ ফেটে জল আসে । কেদার আজ মদ খেলে খবর হয় । মেয়ে মানুষ
নিয়ে ঘুরলে অনেকে ফিসফিস করে । গাড়ি চড়লে এমন ভাবে দ্যাখে যেন ভূত দেখছে । কেন রে
ভাই , কেদার কি মদ খেতে পারে না ? সে প্রেম করলে কার
কি ক্ষতি হবে ? এতো পরিশ্রম করে সে যদি একটা গাড়িই কিনল ,
তাতে তোদের এতো গায়ের জ্বালা কিসের ? কেদার
আসলে উত্তর প্রদেশের লোক ।যখন বর্ধমানে এসেছিল তখন আক্ষরিক অর্থেই লোটাকম্বল ছাড়া
আর কিছুই সঙ্গে ছিল না । দেশোয়ালি এক চাচার আশ্রয়ে দীর্ঘদিন থাকার পর কেদার একটা
কাজ নিয়েছিল গ্যারাজে । প্রতিদিন কাজও জুটত না । কাজ না থাকলে বেতন পেত না ।
প্রচুর পরিশ্রম করে গ্যারেজ মালিকের মন জুগিয়ে চলতে হত কেদারকে । দেশে হাজার হাজার
বেকার । মালিকের যদি তাকে মনপসন্দ না হয় , তবে অন্য কাউকে
কাজে নিয়ে নিতে পারে । এরকম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল কেদার
। এখন কেদার একটা গ্যারেজের মালিক । টাকার অভাব নেই । তার কাছে বহু ছেলে কাজ করে ।
দেশ থেকে বিয়ে করে এনেছে ফুলমতিয়াকে । সে আনপড় , গাওয়ার ।
এই দেশে কত ভাল ভাল মেয়ে থাকতে সে ব্যাটা কেন যে মরতে দেশে গিয়েছেল মেয়ে খুঁজতে ,
তা সে বুঝে উঠতে পারে না । ভুল হয়ে গেছে বিলকুল । যাক , ফুলমতিয়া যেমন ঘরে আছে থাক । ওকে কেদার ওর মতো থাকতে দেবে । কিন্তু সে ,
অন্য এ দেশের একটা মেয়েকে রেখে দেবে । বেশ কয়েকদিন ধরে কেদার
একটা ঘর ভাড়া নিয়ে সোনিয়া বলে একটা মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিল । কিন্তু ভীষণ ঝামেলা
বাঁধাল মেয়েগুলো । সেই দলে ফুলমতিয়া যেমন ছিল , তেমন ছিল
পাড়ার বউ ঝি রা । বাড়ি থেকে সোনিয়াকে বের করে দিল। তাকে বেধড়ক মারল। নিজের টাকায়
আমোদ আহ্লাদ পর্যন্ত করা যাবে না ? কেদার বুঝেছে এই
রাজ্যটা যত ভাল , তত খারাপ । এখানে তুমি রোজগার কর ,
বউ নিয়ে ঘর সংসার কর সকলে তোমাকে সাহায্য করবে । আর তুমি যদি
অসামাজিক জীবন যাপন কর তাহলে কেউ তোমাকে ছাড়বে না ।কেদার এখন আর মদ-মেয়ের পাল্লায়
পরে না । ঠকে শিখেছে সে ।