গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৫

সাঈদা মিমি / দুটি অনুগল্প

স্বাধীনতা

নৌকায় ঘুরে বেড়াতে আমার ভালো লাগে, মেধা বলছিলো, কিন্তু একা আমি এবং নদী, আর কেউ না, সত্যি বলছি, একবার কোজাগরে ইছামতীর পাড়ে যে নৌকাটা বাঁধা ছিলো সেটার গলুইয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি, অলৌকিক জ্যোসনার সাথে কাশরেনু, অচেনা ফুলের মাতোয়ালী ঘ্রাণ, নম্র বাতাস, ফজল মামু আর মামী কে মা আমার সঙ্গে পাঠিয়েছেন, তারা নবদম্পতি, আমাকে একা রেখে কোন আড়ালে লুকিয়েছে নিশ্চিত, এমন নয় যে মা আমাকে একা এই রাতের আকাশ উপভোগ করতে দেবেন, অত স্বাধীন নই, আমার একমাত্র ভাইটা অজানা জ্বরে ভুগে মারা গেছে, আমরা কেউ সুস্থ নেই, এইরকম উদাস একটা শূন্যতার ফাঁক দিয়ে নৌকার বাঁধন কিভাবে যেন আলগা হয়ে গেলো, প্রথমে বুঝিনি, হঠাৎ দুলুনির সাথে আবিষ্কার করলাম আমি মাঝনদীতে, একটা স্বাধীন উল্লাস মেশানো ভয়.
এখন আমি নৌকায় চড়ি না, আমাদের স্বাধীনতা একটা ঘুঙরুর মত, যেদিকেই যাও, শব্দ চিনে সন্ধানীরা ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলবে

পথটা
দীর্ঘদিন যাইনি ঐ পথটায়, আসাদ গেট, ইচ্ছেও ছিলো না, শেষবার বগা কানু কে ওখানে পিটিয়েছিলাম, আসলে কাজটা করতে হয়েছিলো বাধ্য হয়ে, সে একটা ভোঁতা ছুরি দিয়ে আমার পকেট কেটে দিলো, মানিব্যাগ, ঘরের চাবি, সবসহই দৌড়, তখন চাকু খাওয়ার ভয়ে পিছু নেয়া গেলো না, ওকে পেলাম হেরোইন নেয়া অবস্থায় দিনসাতেক পর, সুদে উসুল করলাম পিটিয়ে, জানি, ওর পকেট কাটা যাবে না, শালার পকেটই নেই! একদিন পর এলাকা ছেঁড়ে আমিও চম্পট, ব্যাচেলর দের ঝক্কি কম । আগারগাঁও বস্তিতে জাঁকিয়ে বসলাম, ফেন্সিডিলের ব্যাবসা তখন রমরমা, কাস্টোমার নিজেই এসে নিয়ে যায় । চৌদ্দ বছরে তিনবার শ্বশুরবাড়ি ঘুরে এসে শুনলাম, বগা আমাকে খুঁজছে, এতো বন্ধুর আমন্ত্রণ নয়! তবু ভয় লাগলো না, আসাদ গেট: রাত সওয়া এগারোটা, সন্মানিত শহীদ ভাই, তোমার সড়কে দাঁড়িয়ে আমরা ইয়াবার লেনদেন করছি ।