গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

সাঈদা মিমি




কিছু ছায়ামেঘ

 পূর্বাহ্নে

         বড়দার বিয়েতে কোন আনন্দই বাদ রাখলো না নিধি, যদিও সে মাত্র জুনিয়র স্কুলের ছাত্রী, তবু কয়েকটা শাড়ি কিনে ফেললো, তবে উঁচু হিলের জুতা পড়তে গিয়ে বিপত্তির সূত্রপাত, মোচড় দিয়ে পড়লো টাইলস করা মেঝের ওপর, ডান পা গেলো মচকে কিন্তুএত কাঁদছে কেন নতুন ভাবীটা?সবার এত স্বান্তনা, আদর, তারপরও? তার চোখে এক অমল শূণ্যতা।

 আঠার বছর পর

         আজ নিধির বিয়ে,প্রথমে বেশ চনমনে একটা ভাব তৈরি হলো, নিধি বিপুল…. প্রেমের বিয়ে, দুটো আলাদা ভাবনার যৌথচলার দিন, দিনভর কিংবা রাতজাগা স্বপ্ন স্বপ্ন ঘোর, গায়ে হলুদ হয়ে গেলো, সঙ্গীত, বুক কাঁপছে নিধির, প্রতীক্ষার বেলায় বদলের রঙ, সে কণেসাজে আসরের মধ্যমা রত্ন, কবুল পর্ব শেষ, মুরুব্বীদের সালাম করে বিদায়ী গাড়িটায় ওঠার সময় হলো বলে, সুগন্ধি টাটকা ফুলে সাজানো গাড়ি, কিন্তু এত কান্না আসছে কেনো তার?

ভয়

         নিধি কাঁদছে, সে অবিরাম কাঁদছে, ‘আরে বিয়ে হলেই কি বাপ মা পর হয়ে যায়? সবসময় তো আসবি, এখন তোর দুটো বাড়ি,’ কেউ বললো কিন্তু নিধির ফোঁপানি কমছে কই? ভাবির দিকে তাকালো সে, আঠারো বছর ধরে তাদের সংসারে থিতু হওয়া ভাবি একদিন এইরকম কেঁদেছিলো, বাবা মায়ের সঙ্গে দূরত্বের কষ্টে নিশ্চই, কিন্তু এই মূহুর্তে সে বুঝে ফেলে, এরচেবড় এক ভয় তাকে তাড়া করেছিলো, যেমন নিধিকে করছে, স্বাধীনতা হারানোর ভয়

 অন্তিমবাক্য


         ক্ষণজন্মা সুখস্মৃতি, তাড়না, গল্পগান, নদীর আবাহন, মেঘবৃষ্টির দিন, সবকিছুই ছায়ার মত হাঁটছিলো পাশে আমাকে রেহাই দে, চলে যা…..’ ছায়াদেহ সরে যায় না, আরো নিবিড় হয়ে আসে আসে জল, চেপে রাখা যায় না, মুখ বিকৃত হয়ে ওঠে, আসে ক্রোধ, দমন করা যায়, না ঘাড়ের শিরা দপদপ করে ওঠে কেন আমি মনকে পুড়তে দিলাম? সে ভাবে কেন বিশ্বাসকে পাপ ভাবতে শিখলাম না? তার অনুশোচনা হয় মনটা আমার ছিলো, আমি সম্পূর্ণভাবে সেখানে সাম্রাজ্য তৈরী করেছিলাম ওই শরীর আমার ছিলো, আমি সেখানে সমর্পিত ছিলাম  এবং সে চৌমাথায় এসে দাঁড়ায় এমনকি হিংস্র বাসের ধাক্কা খেয়ে ছিটকে খাদে পড়ার সময়ও সে বুঝে উঠতে পারে না, কি ঘটছে আসলে

         তার মৃতদেহের পোস্টমর্টেম হচ্ছে এখন, সে কেবল একটি শব মাত্র খুলে নেয়া হয়েছে মগজ, একটু ধীরে ছুরি চালাও, স্মৃতিকোষে এখনও জমে আছে প্রিয়মুখের শেষ অভিব্যাক্তি সে শুনেছিলো, বিশ্বাস করেনি, তারপর সে দেখলো, যে হাত তার মুখ ছুঁয়ে দেখতো, সে অন্যের ত্বকলাবন্য দেখছে, যে ঠোঁট তাকে শিহরিত করতো, তা অন্যকে পুলকিত করছে আরেক আলোর উদ্ভাসে সম্ভবত ঈর্ষা থেকেই সে তাদের মুখোমুখি হয়েছিলো এবং একটি অচেনা মুখের বিরক্তি এবং একটি চেনা মুখের হঠাৎ ঘাবড়ে যাওয়া অভিব্যাক্তি দেখেছিলো, হ্যাঁ, তার ভয়াবহ কষ্ট হয়েছিলো

         রাত শেষমূহুর্ত অতিক্রম করছে, শীতল ঘরে রাখা লাশটার সব কিছুই খুলে নেয়া হয়েছে, হৃদয়-চোখ-স্মৃতিকোষ, এবার তাকে মাটির কাছে যেতে হবে ঠিক খাদের গভীরে তলিয়ে যেতে যেতে পাঁজরের হাঁড় যখন ভাঙছিলো, আর্তনাদ করার আগেই এসেছিলো মৃত্যু, মৃত্যুকে সে বলেছে, ‘আমার কবরে মানুষটাকে মাটি দিতে নিষেধ করো।