গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

অনির্বাণ ঘোষ

একটি অনুষ্ঠানবাড়ির গল্প

এসো বাবলার মা। এসো বাবলার বউ। এমনি তো দেখা হয় না। এমন সুযোগ আবার কবে হবে।
পাশ থেকে সমর্থনও পেলেন পৃথুলা ষাটোর্ধা মহিলা।
হ্যাঁ, এরকম অনুষ্ঠান তো রোজ হয় না।
বাবলার মা অত্যায়াসে কোমর ভাঁজ করে প্রণাম করলেন। বাবলার বউমাও পা ছুঁয়ে নিলেন।
অতিথি  বসতে না বসতেই পেপার গ্লাস পরিপূর্ণ শীতল পেয়। গ্লাসের গায়ে পেপসি লেখা। নাকি, পীপ সী' ।
ও, কোল্ড ড্রিঙ্কস ! যা গরম পড়েছে !
সুন্দর প্রাণোচ্ছ্বল পরিবেশ। একপাশে বসে আছে প্রজাপতির মতো কিছু কিশোর-কিশোরী। গায়ে তাদের রঙের ছটা। আভাসে / আবেশে বিন্যাসে তাদের চপলতা। উচ্ছ্বলতা। থেকে থেকে উঠছে হাসির গমক। আর সেই দিকে আড়চোখে চেয়ে আছে একলা বালিকা।
ডিম ফুটে বেরনো মুরগীর ছানার মতো পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করছে কিছু সদ্য হাঁটতে শেখা শিশু। টলমল পায়ে গড়াতে গড়াতে। পড়তে পড়তেও পড়ছে না। ধরে ফেলছে পরিবর্তন উত্তর চাহিদার কথা মাথায় রেখে ডেকরেটার-এর প্লাস্টিক চেয়ার – সবুজ। তাদের মায়েরা ব্যস্ত রসালো পরচর্চায়। গালে পান। ঠোঁট – লাল।
অনুষ্ঠানের একপ্রস্থ মিটলো। চাল, কাঁচাকলা ও প্রণামী গোছাচ্ছেন ব্যস্ত পুরোহিত।
এবার অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের সাথে গলা মেলাতে মেলাতেই যুবক যজমান হেঁকে উঠলেন – এই রাহুল, দেখতো এদিকের ফ্যানগুলো ঘুরছে না কেন ?
অফ্ করা আছে। প্রদীপ নিভে যাবে যে!
গুঞ্জন। তাও চাপা পড়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। হাসির কলরোলে। সমবয়সীদের বিশ্রম্ভালাপে। এর সাথে চলছে মন্ত্রোচ্চারণ ও স্তোত্রের মূর্ছনা। অনেকটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো।
হঠাৎ শোনা গেল মুঠোফোনে উচ্চকথন – রান্না কদ্দূর ? লোক পাঠাবো ?
গুঞ্জন কমলো। আলাপে ভাঁটা পড়লো। রয়ে গেল দেখনহাসি। পাশাপাশি বসা না-চেনা, সদ্য-চেনা বা মুখ-চেনা অভ্যাগতদের। যেন কত জনমের বন্ধু আমার – আয় আরেকটিবার আয়রে সখা ...। কিন্তু কান খাড়া। পেটে টান। পাপী পেট কা সওয়াল ভাই।
মিনিট পাঁচেক পরের দৃশ্য।  দু-তিন জন বয়স্য মুরুব্বিগোছের মানুষ এগিয়ে এলেন। অনুরোধ, ডানহাতের কাজ সেরে ফেলার। ক্যাটারার রেডি।
এরপর অতিথিদের হুড়োহুড়ি। ক্যাটারারের দৌড়োদৌড়ি। বাড়ির লোকের খবরদারি।
পাত পেতে দি। ভাত বেড়ে দি। এখানে লেবু পড়ে নি। ওখানে নুন। রান্না ভালো হয়েছে তো?
খাওয়া শেষ। এবার যাবার পালা।
অনুষ্ঠান ভবন থেকে বেরিয়েই টুথ্ পিক্ দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে এক এভারগ্রীন বৃদ্ধ তাঁর হাফ-ব্যাটারী সাইজের বেটার-হাফ-কে জিজ্ঞেস করলেন –
ছোট্টুর মৎস্যমুখীটা কবে যেন বলল? কাল না পরশু?