গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০১৪

আফরোজা অদিতি


চক্র


টেলিফোন ছেড়ে চুপচাপ শুয়ে পড়েছে মিতা পড়তে পড়তে ছেড়ে যাওয়া বইটা হাতে তুলে নেয় মিতা। পড়ায় মন দিতে পারছে না। কী এক অজানা আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে মাথার প্রতিটি কোষে কোষে, কিছুতেই বুঝতে পারছে না মিতা। কী আশঙ্কা, কী ভয় বুঝতে চেষ্টা করেও বুঝতে পারছে না। শুধু অজানা এক ভয় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে ওকে। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে, কোন একটা অঘটন ঘটবে! কী ঘটবে এটা  বুঝতে পারছে না বলেই ওর মাথার ভেতর চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এমনভাবে চিন্তা আর ভয় ওর মস্তিষ্কের কোষে কোষে অবস'ান নিয়েছে যে কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না। বই পড়তেও না। অথচ এই বই ওর সবচেয়ে ঘনিষ্টতম বন্ধু। এই বই নিত্যদিনের সঙ্গী ওর। বই পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়, কিন' আজ বই পড়তেও ইচ্ছা করছে না ওর। বইটা একপাশে সরিয়ে রাখে। বারান্দায় গিয়ে বসে। এই বারান্দাটা ওর প্রিয় জায়গা। কোন রকম চিন্তা ভাবনা এলেই এখানে এসে বসে যেন এখানে বসলেই, সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে ও।

স্বামীর ঘর ছেড়ে এসেছে বিশ বছর। বিশ বছর খুব কম সময় নয়।  যখন ঘর-সংসার ছেড়ে এসেছিলো তখন বয়স ওর বয়স পঁচিশের কোঠায়। মেয়েটা সবে হাঁটিহাঁটি পা পা।  সেই থেকে এই অবধি। পথ হেঁটেছে একা, পথ হেঁটেছে একা, এখন হাঁটছেও একা। পাশে কেউ ছিলো না, নেই এখনও। স্বামীর সংসার ছেড়েছে বলে, বাবার বাড়ির সকলে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ওর সঙ্গে, আর স্বামী বা স্বামীর বাড়ির কারও সঙ্গেও সম্পর্ক নেই। ওদের মেয়ের কথা ভেবেও কেউ আসে নি ওরা।  সব কিছু একাই করে এসেছে এতোদিন।  মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছে,বড়ো করেছে। পুরণ করেছে আবদার। করেছে আহ্লাদ। এখন চাকরি করছে মেয়ে। বিয়ে দিয়েছে মেয়েকে। পছন্দ ছিলো মেয়ের। বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না ওর। বিয়ে করলেই যে মানুষ সুখি হবে বিশ্বাস ভেঙে গেছে ওর অনেকদিন। জীবনের একটা জরুরি বিষয় এই বিয়ে সে ধারণাও পাল্টে গেছে অনেকদিন। বিয়ে না করলেও একটা মেয়ে ইচ্ছা করলেই ভালো থাকতে পারে এই বিশ্বাসই এখন ওর। কিন' ওর বিশ্বাস-অবিশ্বাসে তো কিছু এসে যায় না। এই সমাজ,এই সংসার তো ওর বিশ্বাসমতো চলবে না। তাছাড়া একা একা তো সমাজ বদল করা যায় না।

একা একা, বিরূপ মন্তব্য শুনতে শুনতে পথ হাঁটা যায়, কষ্টে চোখের জল ঝরিয়ে সমাজে বসবাস করা যায়। একা একা সমাজ বদল করা যায় না। সমাজ মেয়েদের জন্য ভীষণ কঠিন। এখানে কোণঠাসা করে রাখা হয় মেয়েদের। মেয়েদের বেলায় সমাজ একচক্ষু প্রতিবন্ধী। সমাজ গৎবাঁধা জীবন যাত্রায় বিশ্বাসী। মেয়েদের সব কিছুতেই দোষ, সব কিছুতেই বাধা। সভ্যতা বিকাশেও নারীর অগ্রগতি হয় নি। নারী লেখাপড়া করছে, শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরি করছে তবুও নারীর উন্নতি  নেই। নারীর অবস'ান আগের মতোই আছে।  সমাজ এখনও নারীকে মানুষ বলে ভাবে না।  কবে নারী মানুষ ভাববে নিজেকে ? কবে নারীকে মানুষ ভাববে সমাজকবে মেয়েরা মানুষের মতো জীবন-যাপন করবে ?

মিতার মনে এরকম প্রশ্ন প্রায়শঃ ঘুরপাক খায়। নারী আন্দোলন, নারীনীতি প্রনয়ণ, বিভিন্ন সময়ে নারী শিশু অধিকার আইন পাশের ফলে নারী আজ অনেকটাই এগিয়ে তবুও তো নরীর মুক্তি মিলছে  না। কোথায় নারীমুক্তিএমনিতে দেখা যায় দেশের প্রত্যেক পুরুষ ভালোবাসে তার মা, স্ত্রী, বোন, মেয়েকে। তবুও নারীর ইচ্ছার মূল্য কোথায়? নারীর উপর চাপানো তাদের ইচ্ছার ভার বয়ে বেড়াতে হচ্ছে নারীকে আজও। আজও একজন নারী হচ্ছে অপহৃত, নারী হচ্ছে সম্ভ্রমহানীর শিকার, হত্যাসহ নানাবিধ অত্যাচারের শিকার হচ্ছে নারী। মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন জাগে মিতার মনে এতো ভালোবাসে স্বামী তার স্ত্রীকে, ভাই তার বোনকে, বাবা তার কন্যাকে তবুও কেন নারীরএই অবস', এই পশ্চাদপদতা ? এসব প্রশ্নের জবাব সে কোন দিক থেকেই মেলাতে পারে না। 

আজ এসব চিন্তা করছিলো না মিতা। মিতা, চিন্তা করছিলো ওর মেয়ের কথা। বিশটা বছর সে মেয়েকে বুক দিয়ে আগলে রেখে বড়ো করে তুলেছে। বিয়েও দিয়েছে, কিন' আজ চিন্তা করে দেখছে সব কিছু শুন্য। সবই ভাগ্য। ওর মেয়েটাও ওরই মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। মিতা ভাগ্য বিশ্বাস করে নি আগে কিন' আজ ভাগ্য বিশ্বাস করে, বাধ্য হয়ে করে।

সীতা, ওর মেয়ে। মেয়ের স্বামী, মুনিম ভালো নয়। ওদের মানসিকতার সঙ্গে মুনিমের মানসিকতা মিলে না। সংসার সমঝোতার জায়গা। কিন' মুনিমের মধ্যে সমঝোতা করার কোন মানসিকতাই নেই। লেখা-পড়া করে ডিগ্রি নিয়েছে ঠিকই, তা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি। কোন শিক্ষার আলো নেই ওর মাঝে। আলোকিত ভুবনের বাসিন্দা নয় ও। জ্ঞানের পরশ নেই ওর মধ্যে।

সীতার জন্য কষ্ট হচ্ছে ওর। মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার মতো বন্ধু হতে পারে নি মেয়ের। একজন মানুষের জীবনে তার সুখ-দুঃখ শেয়ার করার মতো ভালো একজন বন্ধুর প্রয়োজন। সেরকম বন্ধু হতে পাওে নি ও। কিংবা ভুল ধারণা ওর, সে মেয়ের  বন্ধুই ছিলো না কখনও। মা, মেয়ের বন্ধুত্ব হয় ঠিকই কিন' দাম্পত্য বিষয়ে কথা মা-মেয়েতে ঠিক মতো হয় না, কোথায় যেন একটা বাধা রয়ে যায়। কিংবা বলা যায়, ওর নিজের কাছেই বিষয় নিয়ে আলোচনায় একটা সংকোচ বোধ হয়।

মিতা, কোন কথা জিজ্ঞাসা করতে পারছে না সীতাকে। সীতার নিজের পছন্দ ছাড়াও মুনিম, মিতার আত্মীয়। বড়োভাবীর  বোনের ছেলে। ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে ভাইয়ের সঙ্গে মন কষাকষি হবে। ওদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, তবুও বিষয়ে ভাইকেও কিছু বলতে পারছে না মিতা। এই  বিয়েতে মত ছিলো না মিতার। কেন যেন মনে হয়েছে, সীতা আর মুনিমের ঠিক অ্যাডজাস্ট হবে না। মিতা, ওর ভাবীর প্রস্তাবে না করে দিয়েছিলো সরাসরি। সীতার কথায় বাধ্য হয়ে রাজী হতে হয় ওকে। সীতাকে বুঝিয়েছিলো, কয়েকদিন চাকরি কর তারপর বিয়ে করিস। কিন' মেয়ে রাজী হয় নি। বিয়ের পর থেকেই ওদের মধ্যে ঠিকঠাক চলছে না বুঝেছে ও। চাকরি ছাড়তে চেয়েছিলো সীতা, কিন' মিতা অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজী হয়েছে সীতা। চাকরি ছাড়ে নি। তবে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে স্কুলে চাকরি করছে।

মিতা  দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। ভালো লাগছে কিছুই।  একবার চিৎ হচ্ছে, একবার পাশ ফিরছে। কেমন এক অশান্তি ওকে সি' থাকতে দিচ্ছে না। নিজেও চলে এসেছিলো স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার জন্য। তো স্বামীর সঙ্গে সমঝোতা করেই থাকতে চেয়েছিলো। কিন' পারে নি। ওর আত্নসম্মানে লেগেছে। একটা শিক্ষিত, কর্মজীবী নারী। ওর স্বামীর কোন অধিকার নেই ওর গায়ে হাত তোলার। মতের অমিল হতেই পারে, কোন কাজ পছন্দ নাও হতে পারে তাই বলে গায়ে হাত তুলবে। এটা কি রকম বর্বরতা। চলে এসেছিলো। ওর চলে আসাটা মা মেনে নেয় নি। ওর মা চাইতো ফিরে যাক। এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য। ওর মা সরাসরি যেদিন বললো, তুমি চলে যাও, বাড়িতে তোমার জায়গা নেই।
প্রশ্ন করেছিলো, কেন মা ?
বিয়ের পর মেয়েদের বাড়ি আর নিজের বাড়ি থাকে না !
কেন থাকবে না মা! এই বাড়িতেই তো বড়ো হয়েছি, এখানেই কেটেছে  আমার শৈশব, কৈশোর। জীবনের স্নিগ্ধ সুন্দর দিনগুলো কেটেছে এখানে। তোমার, বাবার, ভাইয়াদের সঙ্গে এই বাড়িতেই থেকেছি  বিশ বছর। এই বাড়িতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার সব চেয়ে মধুর সময়গুলোতবুও কেন মা, এখানে থাকতে পারবো না আমি। এখনও মা, সকলে বলে এটা মিতাদের বাড়ি। এখনও তোমাকে সবাই ডাকে মিতার মা, তবুও আমি কেন থাকতে পাবো না মা।
মা জবাব দিয়েছিলো, আমি এতোকিছু বুঝি না, তুমি এখানে থাকতে পারবে না। আজই জামাইয়ের সঙ্গে চলে যাবে। আমি ওকে আসতে বলেছি।
মা ! মিতা আর্তনাদ করে উঠেছিলো । বলেছিলো, তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা না করে কেন তাকে আসতে বলেছো মা ? আমার শুধু বিয়ে হয়েছে বলে আমি, বাড়ির সকল অধিকার হারিয়েছি ! একটা ছেলে যদি বিয়ের পর তার অধিকার না হারায়, একটা মেয়ে কেন হারাবে মা ? অসহায়ের মতো কেঁদেছিলো মিতা। মায়ের কথা মেনে নিয়ে সেদিন মিতা, বাড়িতে গিয়েছিলো। কিন' একমাসের মাথায় আবার  ফিরে আসতে হয়েছিলো তাকে। কিন' সেবার আর মায়ের কাছে ওঠে নি। এক বান্ধবীর বাসায় উঠে কয়েকদিন থাকার পর বাসা নিয়েছিলো।

আজ এতো বছর পর পুরানো কষ্টটা বুকের ভেতর তোলপাড় করে। এক সমুদ্র নীল ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওকে।  চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। চোখ মুছে। মনে মনে বলে, মেয়ের সুখে-দুখে পাশে থাকবে সবসময়। কখনও ছাড়বে না একা ।

মিতা চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো। কপালে হাত রেখে মা-কে ডাকে সীতা। মা, মা ।
মিতা চোখ খুলে দেখে, মেয়ে তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে ।
কিরে, কিছু বলবি ?
হ্যাঁ মা, ফোন করেছিলো কে ? ফোন ধরেই যে মন খারাপ হয়ে গেলো তোমার।
মুনিম।
কী বললো ?
সীতাকে সব কথা বলবে কি বলবে না ভাবছে মিতা। মুনিম অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। শ্বাশুড়ি বলে সাধারণ সৌজন্য বোধটুকুও দেখায় নি সে। মিতা এসব কথা বললো না সীতাকে । শুধু বললো, তুই যাবি কবে?
আমি তো যাবো না ।
কেন ?
এমনিই ।
এমনি তো হতে পারে না কোন একটা কারণ নিশ্চয় আছে ।
কোন কারণ নেই, হঠাৎ রেগে যায় সীতা ।
সোনা মা, বিয়ে তো শুধু কাগজের টুকরা না। বিয়ে এক জীবনের সঙ্গে অন্য এক জীবনের অচ্ছেদ্য বন্ধন। এটা ছিঁড়ে ফেলতে উপযুক্ত কারণ লাগে।
সীতা কোন কথা বলে না। মিতা একটু চুপ থেকে বলে, তোর কী হয়েছে সীতা।
কিছু না মা।
মুনিমের সঙ্গে...
না, মা। ওসব কিছু না। সীতা তড়িঘড়ি প্রসঙ্গ পাল্টায়। মা একটা ছড়া বলো না। অনেকদিন তোমার ছড়া শুনি না।
ছড়া ! বিস্মিত মিতা।
হ্যাঁ মা, সেই ছোট্টবেলায় কতো ছড়া শুনেছি তোমার কাছে। এখনও কানে বাজে মা। তোমার সেই মিষ্টি কন্ঠের ছড়া-
সীতা আমাদের সোনা
 স্যাকরা ডেকে মোহর কেটে
 গড়িয়ে দেব দানা
 কেউ করো না মানা”...
মিতা ওক বুকে টেনে নেয় বলে, তোর কী হয়েছে সীতা বলতো ?
কী আর হবে মা।

দ্যাখ সীতা, সকলের চোখ ফাঁকি দিলেও মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না ।
তুমি শুধু শুধু ভাবছো মা। চোখের জল লুকাতে অন্য দিকে মুখ ফেরায় সীতা ।
মিতা ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে এনে বলে, সত্য করে বল সীতা কী হয়েছে।
সীতা স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করে। মায়ের পাশে শুয়ে পড়ে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, মা, তুমি কবিতা লিখতে, লেখা ছাড়লে কেন ?
মা, মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, তোর বাবা, পছন্দ করে নি বলে।
তুমি এখন তো লিখতে শুরু করতে পারো মা। এখন তো সময় আছে তোমার।
তা আর হয় না। ছেড়ে দেওয়া কাজ আর ধরা যায় না। আর ধরলেও সেভাবে আর করা হয়ে ওঠে না। তাছাড়া, এখন তো আমার কবিতা লেখার প্রয়োজন নেই সীতা। তোকে আমি কবিতার মতো করেই মানুষ করেছি। তুই আমার চলনফেরনে জলজ্যান্ত  কবিতা।

এরপর মা, মেয়ে দুজনেই চুপ করে থাকে।  মেয়ের চুলে বিলি কাটে মা। কিছুক্ষণ চুপচাপ বিলি কেটে বলে মা, সীতা, ছোটবেলা থেকে সব কথা আমাকেই বলেছিস, এখন তোর কী হয়েছে আমাকে বল! আমি তো শুধুই তোর মা নই, তোর বন্ধুও তো বটে।
সীতা মায়ের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ রাখে ছোটবেলার মতো। বলে, কী হবে মা এসব শুনে। যে কথা শুধুই কষ্ট আনে তা শুনে লাভ কী মা।
লাভ আছে। সব শুনে আমরা দুজনে মিলে একটা ব্যবস' নিতে পারি। যা তোর একার পক্ষে সম্ভব নয়, তা দুজনের পক্ষে সম্ভব।
সীতা কাঁদতে থাকে। মিতা, কিছুক্ষণ ওকে কাঁদতে দেয়। কেঁদে কেঁদে শান্ত হলে বলে, এবার বল, কী হয়েছে।
আমার ভুল হয়ে গেছে মা। তোমার কথা না শুনে বড়ো ভুল করেছি মা, আমি। বিয়ে করা আমার উচিত হয় নি।

মিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আমিও তোকে সেভাবে বাধা দেই নি, আমাকে ক্ষমা করে দে ।
এমন করে বলো না মা। সব আমার ভাগ্য, নিয়তি।
ভাগ্য বলে কিছু নেই সীতা। সব অভিজ্ঞতার অভাব। চেষ্টার অভাব। এখন তুই কী করবি। আমি, সর্বক্ষণ তোর পাশে আছি মনে রাখবি। নিজের জীবনটাকে তুই, তোর নিজের মতো করে গুছিয়ে নে।

সীতা, মাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে। ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। মায়ের বুক চিরে বের হয় দীর্ঘশ্বাস। মা, মেয়ের চোখের জল মুছিয়ে মেয়েকে গভীরভাবে বুকে জড়িয়ে নেয়। তার সবরকম আশ্বাস আর বিশ্বাসের উষ্ণতায় উত্তাপ দেয় মেয়েকে। মেয়ে পরম নির্ভরতায় খুঁজে পায় বেঁচে থাকার নতুন আশ্বাস।