গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

দীপঙ্কর বেরা

                             পাখির বাসা

পিছনের দিকে আমগাছে বেশ কয়েকদিন ধরে গোপলা লক্ষ্য করেছে টিয়া পাখি বাসা   করেছে । আমগাছটা তাদের নয় । এখন প্রায় শীত কমে আসছে । আমে বকুলও আসে নি ।  বাসায় টিয়া ডিম পেড়েছে কি না  ,না উঠলে জানা যাবে না । গোপলা এর আগে গাছে ওঠার চেষ্টা করেছে তাতে হাবু , পেলা , মৌ , তাপা এমন হেসেছিল যেন মনে হয় গোপলার  গাছে রস পাড়া আঁকা ছবিটার মত । গাছে মানুষ না অন্য কেউ  উঠছে না ঝুলছে বোঝার উপায় নেই ।

তাপসদা কি সুন্দর প্রায়ই গাছে উঠে যায় । তাই তাকে ধরেছিল - তাপসদা আমাকে গাছে ওঠা শেখাবে । তাপসদা খুব হেলাফেলা  গুরুত্ব দিল না । এমন ভাবে বলল - এইভাবে এখানে চেপে ধরে উপরে দেখে নীচে একেবারে না তাকিয়ে উঠবি । আর ভঙ্গি করে গোপলাকে কাতুকুতু দিতে লাগল । - কি ব্যাপার গাছে কেন ? আদিবাসীদের মত গাছে উঠে বিয়ে করবি নাকি ?  আরও এমনসব বলতে লাগল যে গোপলার কান লাল হয়ে গেল ।

ওর মা প্রায়ই বলে - আমার সোনার গোপাল । আমরা এবার একটা পাখি পুষব । একেবারে সবুজ । আমাদের জীবনও হয়ে খুব সবুজ সবুজ ।  গোপলা ভাবল সবুজ মানে টিয়া । তা এনে মাকে একেবারে তাক লাগিয়ে দেবে । অন্য কাওকে বললে সে নিয়ে নিতে পারে । তাই কাওকে বলা চলবে না । প্রাইমারিতে মিড ডে মিল খেয়েই ছুটি  ফিরেই সে প্রায়ই গাছটার কাছে গিয়েছে । হ্যাঁ অনেক পাখির সাথে টিয়াটা প্রায়ই থাকে আর কিচমিচ করে । বাচ্চা আছে কি না কিছুতেই ঠাহর করতে পারল না । খুব একটা উঁচু নেই । ওঠা যাবে । তবে কবে ওঠা যায় । একা । ফাঁকা দেখে ।

ভাবতে ভাবতে সময় কাটছে । সামনের রবিবারের দুপুরে প্রায় অনেকে এই হাল্কা গরমে বিশ্রাম নেয় । চাষের কাজ কম থাকে । গোপলা মার পাশ থেকে  আধো ঘুম থেকে উঠেই ছুটে পৌঁছে গেল । এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বুকটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল । না আজকে উঠতেই হবে  কিছু পাখি আছে । টিয়া দেখা যাচ্ছে না ।
গাছটা বেড় দিয়ে ধরা গেল । হাতে হাতে ঠেকে নি  তবে তাপসদার মত উঠতে লাগল । কয়েকবার পরেই একটা শক্ত ডাল হাতে পেল । ধরেই ফেলল । তাতে চাপ দিতেই আমগাছের বাকলে গেঞ্জিটা গেল ছিঁড়ে । বাবা এবার পুজোয় অনেক কষ্ট করে মার পছন্দ মত কিনে দিয়েছিল । দাম বেশি পড়েছিল বলে বাবা মা কিছু নেয় নি । তা হোক পাখির ছানা দেখলে মা কিছু বলবে না তাই গোপলা পা তুলে উপরে উঠে পড়ল ।

বুকের ধড়াস ধড়াস কমে গেছে । আর একটা ডাল পেরলেই সে যেন এভারেস্টে উঠতে পারবে এমন ভাব করে উপরে ডাল ধরে উঠে গেল । আরো দু বার উঠেই প্রায় পাখির বাসার কাছে পৌঁছে গেল । অন্য পাখিরা গাছের দোলায় খুব খুব কিচিরমিচির করছে গোপলা ঝোপের মত আমগাছের অভীষ্ট বাসার পৌঁছে গেল  জয় সে জয় করে ফেলেছে । এবার পতাকা পুঁতবে । দেখে বাসায় কয়েকটা পালক আর কিছু ডিমের   খোসা । নেড়ে ঘেঁটে দেখল যদি কোথাও পাখির বাচ্চা থাকে । না কোথাও নেই ।

মনটা বিষাদে ভরে গেল । মাকে কি দেখাবে ? এবার নীচে তাকিয়ে দেখে মাটি অনেক নীচে । কি করে নামবে ? তাপসদাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি কিভাবে নামতে হয় । হাতের ডালটা আরো চেপে ধরল । মুখ দিয়ে একটা চিৎকার বেরিয়ে এল কিন্তু কেউ শুনতেই পেল না । যদি পড়ে যায় বিজন মাস্টার মশাইয়ের দেওয়া বুদ্ধির অঙ্ক সে ছাড়া ক্লাসে আর কে করব ? মার পাশে বসে রামায়ণের অন্যরকম ছড়ায় বলা গল্প কে শুনবে ? বাবার হাত ধরে বাজারে গিয়ে আলু সবজি কেনা দেখার মজা কে নেবে ?

ভাবতে ভাবতে নীচে দেখা গেল তাপা । কেঁদে কেঁদে বলল – এই , আমাকে একটু নামিয়ে দে না আমি তোকে বড় মাঞ্চ দেব । সে ভূত দেখার মত করে খুব চিৎকার জুড়ে পালিয়ে গেল 

গড়িয়ে পড়া রোদ ভরা দুপুরে ধীরে ধীরে লোক জড় হল । মৌ , হাবু পেলা এমন কি মাও এসে গেল । সবাই গোপলার কান্নায় খুব মজা করছিল । মৌ-এর সামনে গোপলার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে গেল ।  কিন্তু গোপলার মা বুঝে তাপসদাকে বলতে সে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মত উঠে গোপলাকে হাসতে হাসতে ধরে নামিয়ে আনতে সাহায্য করল । তাপসদা বলতে লাগল – কবে বড় হবে ?  থর থর করে কাঁপছ কেন ? এইটুকু গাছে উঠতে পার না?   আর কেন উঠেছিলে  ?
গোপলা কোন উত্তর দেয় নি । এমন কি রাতে বাবার বকা সত্ত্বেও  মার পাশে বসে চুপ করে নিজের কৈশোর পরখ করছিল ।