রতনে রতন
রতন ইলেক্ট্রিশিয়ান । রতনের মাথায় কোঁকড়া চুল । রতনের
বাবা
রিক্সা চালাত । রতন রিক্সা চালান
পছন্দ করে না । ওর পেস্টিজে লাগে । চৌদ্দ বছর বয়েস থেকে ও মুগ্ধ হয়ে সুভাষের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকত । ওর হাতে পিদিম আছে । ঘরে ঘরে
আলো জ্বেলে দেয় সুভাষ । বাল্ব
তার সকেট সব নিয়ে ও মানুষের দেয়ালে দেয়ালে
আলো ফোটায় । স্ক্রু ড্রাইভার রতনকে হাতছানি দেয় , বাল্ব ডাকে আয় আয় । রতনের কাছে সুভাষ ঈশ্বর। সে ভাবে সে কবে এমন
ঈশ্বর হবে । সে হবে বাতিওয়ালা । ওর হাতের ছোঁয়ায় হাজার আলোর ঝাড় লণ্ঠন জ্বলে উঠবে।
রতনের হবে আলাদীন । পাড়ায় পাড়ায় এপার্টমেন্ট গজিয়ে ওঠে ব্যঙ্গের ছাতার মত ওর পাড়াতেও গজিয়ে ওঠে আকাশখেকো
চারতলা , পাচতলা। রতনের স্বপ্ন সকেটে ওঠে । সবার বাড়িতে ডাক পড়ে যখন তখন । কি
সুন্দর সুন্দর সব মানুষ , কি সুন্দর তাদের ঘরের ভেতর
। রতন ও দেখেনি ওদের পাড়ার কারোর বাড়িতে এমন । ওর বাড়ির কলতলায় শ্যাওলা । ওর খাট
নড়বড়ে । ওর দরজার তলা বৃষ্টি খেয়ে নিয়েছে । একদিন ভারী সুদিন । ডাক পড়ে গার্গীদিদির বাড়ি । একা থাকেন । বা বা ঘরটা কি সুন্দর সাজান । হা হয়ে যায় রতন । গার্গী দিদির ঘরে
কতগুলো পয়েন্ট আছে সে খুঁজতে
থাকে । ওর চোখ ঘোরে এ দেয়াল সে দেয়াল । আলাদীন আলাদীন । কিন্তু সে গার্গী দিদিকে
দেখে গেয়ে ওঠে ,
কি আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার
বালুচরে । গার্গী দিদিকে দেখলেই রতনের এই গানটা গাইতে ইচ্ছে হয় । ওর মনে হয় গার্গী
দিদির গায়ের সোনা রঙে বেদনা বালুচর হয়ে আছে । গার্গী দিদির চোখ বালুচরি সাড়ি ।
সেখানে পট সাজান । পট গাইয়ে সটান খুলে দিয়েছে পট কথা । ছড়িয়ে দিচ্ছে কত কত কাহিনী
। সেখানে তাঁতের ফোঁড়ে জেগে উঠছে রাধা কৃষ্ণ , বেহুলা লক্ষ্মীন্দর , কলার মান্দাসে বেহুলা ভাসান ... ~~~~~~~~~~~~~~