গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

নন্দিতা ভট্টাচার্য


রতনে রতন


রতন ইলেক্ট্রিশিয়ান । রতনের মাথায় কোঁকড়া চুল । রতনের বাবা রিক্সা চালাত । রতন রিক্সা চালান পছন্দ করে না । ওর পেস্টিজে লাগে । চৌদ্দ বছর বয়েস থেকে ও মুগ্ধ হয়ে সুভাষের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকত । ওর হাতে পিদিম আছে । ঘরে ঘরে আলো জ্বেলে দেয় সুভাষ । বাল্ব তার সকেট সব নিয়ে ও মানুষের দেয়ালে দেয়ালে আলো ফোটায় । স্ক্রু ড্রাইভার রতনকে হাতছানি দেয় , বাল্ব ডাকে আয় আয় । রতনের কাছে সুভাষ ঈশ্বর। সে ভাবে সে কবে এমন ঈশ্বর হবে । সে হবে বাতিওয়ালা । ওর হাতের ছোঁয়ায় হাজার আলোর ঝাড় লণ্ঠন জ্বলে উঠবে। রতনের হবে আলাদীন । পাড়ায় পাড়ায় এপার্টমেন্ট গজিয়ে ওঠে ব্যঙ্গের ছাতার মত ওর পাড়াতেও গজিয়ে ওঠে আকাশখেকো চারতলা , পাচতলা। রতনের স্বপ্ন সকেটে ওঠে । সবার বাড়িতে ডাক পড়ে যখন তখন । কি সুন্দর সুন্দর সব মানুষ , কি সুন্দর তাদের ঘরের ভেতর । রতন ও দেখেনি ওদের পাড়ার কারোর বাড়িতে এমন । ওর বাড়ির কলতলায় শ্যাওলা । ওর খাট নড়বড়ে । ওর দরজার তলা বৃষ্টি খেয়ে নিয়েছে । একদিন ভারী সুদিন । ডাক পড়ে গার্গীদিদির বাড়ি । একা থাকেন বা বা ঘরটা কি সুন্দর সাজান । হা হয়ে যায় রতন । গার্গী দিদির ঘরে কতগুলো পয়েন্ট আছে সে খুঁজতে থাকে । ওর চোখ ঘোরে এ দেয়াল সে দেয়াল । আলাদীন আলাদীন । কিন্তু সে গার্গী দিদিকে দেখে গেয়ে ওঠে , কি আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে । গার্গী দিদিকে দেখলেই রতনের এই গানটা গাইতে ইচ্ছে হয় । ওর মনে হয় গার্গী দিদির গায়ের সোনা রঙে বেদনা বালুচর হয়ে আছে । গার্গী দিদির চোখ বালুচরি সাড়ি । সেখানে পট সাজান । পট গাইয়ে সটান খুলে দিয়েছে পট কথা । ছড়িয়ে দিচ্ছে কত কত কাহিনী । সেখানে তাঁতের ফোঁড়ে জেগে উঠছে রাধা কৃষ্ণ , বেহুলা লক্ষ্মীন্দর , কলার মান্দাসে বেহুলা ভাসান ... ~~~~~~~~~~~~~~