গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

অরুণ চট্টোপাধ্যায়

তটিনী
বহুদিন পরে সরযূ এসেছে  বাড়িতে । সবাই তো অবাক ।  বাবা, এমন দেখতে হয়েছে  তাকে ? আট বছর পরে তাকে যেন  তার মা পর্যন্ত চিনতে  পারছে না ।  আট বছর আগে  কি সে এত সুন্দরী ছিল ? রূপের  সঙ্গে ব্যক্তিত্বের অদ্ভুত সমাহার হয়েছে সরযূর   বয়স মানুষের ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে পালটে দিতে পারে সরযূকে না দেখলে যেন বিশ্বাসই করা যায় না ।
মামা  বিনোদ তার কাঁধে হাত রেখে প্রতিমাকে বলল, সরযূ তোদের গ্রামে বিডিও হয়ে এসেছে রে । মস্ত বড় সরকারী অফিসার । এবার আর তোদের গ্রামের উন্নতি ঠেকায় কে ?
মায়ে-মেয়েতে বহুদিন পরে  দেখা । প্রতিমার সাধ মেয়েকে সে প্রাণ ভরে দেখে বেশ খানিক্ষণ । কিন্তু মুহূর্তে একটা বিষম লজ্জা এসে গ্রাস করে । একটু তাকিয়েই লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় সে ।
- দেখআট বছর  পরে তোদের মেয়ে কি হয়ে  ফিরেছে, বিনোদ বেশ গর্বের  সঙ্গে বলেঅথচ তোরা –
বাবা সতীশ এসে ঘরে ঢুকেছিল কিছুক্ষন আগে আর হাঁ হয়ে মেয়েকে দেখছিল । বাবা হয়ে মেয়েকে চিনতে না পারার কষ্টটা কাঁটার মত বিঁধছিল তার । আর এর মধ্যেই আবার একটা কাঁটা বিনোদের ঐ কথাটা । অথচ কথাটা তো মিথ্যে নয় । আজ থেকে আট বছর আগে সরযূর মনের ওপর যে সাংঘাতিক ঝড় বয়ে গিয়েছিল তার জন্য দায়ি আর কেউ ছিল না । ছিল তার নিজের বাবা-মা-ই ।

মাধ্যমিক পাশ না করতেই  বিয়ের সম্বন্ধ দেখা হয়ে  গিয়েছিল  একবারও মেয়ের  মনের ইচ্ছেটা জানার দরকার  বোধ করে নি তারা । বিয়ের তিনদিন আগেই মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে । গাঁ ময় একেবারে ঢি ঢি কাণ্ড ।
কিছুদিন পরে খোঁজটা কলকাতা থেকে সরযূর মামাই জানিয়েছিল । আর জানিয়েছিল, তোদের মেয়ে আর কোনদিন তোদের ওখানে ফিরে যাবে না । এখানে আমার কাছে থেকে লেখাপড়া শিখবে । তোরা কখনও ওর খোঁজ করবি না ।

সেই সরযূ আজ আট বছর  পরে ফিরে এসেছে   মেয়েকে বুকে টেনে নিতে পারছে না ।  সতীশ বড় আত্মগ্লানিতে ভুগছে । একটা প্রবল সংকোচ ওকে বাধা দিচ্ছে ।
- কি বাবা, আমার  ওপর রাগ করেছ ? আমায় কাছে  নেবে না ? সরযূ হাসছে 
সব জড়তা কাটিয়ে মেয়েকে বুকে টেনে নিল সতীশ । কাঁদতে কাঁদতে বলল, কোথা থেকে পড়াতাম বল ? দুবেলা খাবার তো তেমন করে জোটাতে পারি নি ।
- সাধ্য কি আমারি ছিল শালাবাবু ? কিন্তু ইচ্ছেয় কি না হয় ? বিনোদ বলল, তোমার মেয়েকে স্বাবলম্বী করে দিয়েছি কোন কাল থেকে । নিজের পড়ার ফাঁকেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে যা রোজগার করত তাতেই ওর পড়ার খরচটা হয়ে যেত । আর মামার সংসারে নুনভাত
    মেয়ের কপালে চুমো খেয়ে সতীশ বলল, আজ তুই কত বড় অফিসার

-কে বলল ? সরযূ  হাসল, আমি তোমাদের সেই  সরযূই আছি গো  আমার  প্রথম পরিচয় আমি তোমাদের  মেয়ে