গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৩

আফরোজা অদিতি

স্বপ্ন

         ওর নাম মিলি । ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছে । পাড়া গাঁয়ে বাড়ি । গরীব বাবা । বয়স তেরোতে পড়তেই পাশের বাড়ির শহরে থাকা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয় বাবা । ছেলে ভালো চাকরি করে । মাসিক বেতন ভালো । ভালো থাকবে মিলি ।

         বিয়ের পর শহরে এলো মিলি । শহরে বিশাল এক বাড়িতে নিয়ে তোলে মিলিকে ওর স্বামী । ঘরের উজ্জ্বল আলোটেলিফোন, নরম বিছানা ওকে আনন্দিত করে তোলে । স্বামীকে  জড়িয়ে ধরে বলে, এ সব আপনার । স্বামী আস্তে সরিয়ে দিয়ে বলে, হ্যাঁ । মিলি বিছানায় গিয়ে বসে । স্বামীকে লক্ষ্য করতে থাকে । স্বামী টেলিফোন করার সঙ্গে সঙ্গে শাদা কাপড় পরা এক লোক খাবার দিয়ে গেলো । ওরা খেলো । খাওয়া শেষ হলে দুজনে শুতে গেলো। স্বামীর পাশে শুয়ে মিলি স্বপ্ন দেখে। জীবনের স্বপ্ন । কখন ঘুমিয়ে যায় মিলি টের পায় না।  ঘুম ভেঙে যায় আচমকা । উঠে বসে। স্বামীকে দেখতে পায় না। ভাবে ওয়াসরূমে গেছে ।  খুট খুট শব্দ। দরোজা খুলে যাচ্ছে। স্বামী নয়, অন্য এক লোক। ভয়ে সিটিয়ে যায় মিলি । স্বামীকে ডাকে, শুনছেন , এইযে শুনছেন। বড়দের মুখে  স্বামীর নাম মুখে আনলে পাপ হবে ভেবে নাম মুখে আনতে পারছে  না।  ওর আস্তে এই যে শুনছেন শুনে স্বামী আসে না আসে ওই লোক। ওকে সজোরে চেপে ধরে ।  মিলি পাপের কথা ভাবে না। ভাবে ওর স্বপ্নের কথা। তাছাড়া পাপ তো ওর নয়। পাপ হোক কিছু যায় আসে না, কারণ এ পাপের দায়ভার ওর স্বামীর। এ কথাও বড়দের মুখে শোনা। মিলি পাপের কথা ভাবে না। ভাবে ওর স্বপ্নের কথা। ওর স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে । প্রাণপণ চেষ্টায় কণ্ঠে জোর এনে স্বামীকে ডাকে, মবিন, মবিন, মবিন । দরোজার ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে, চুপ থাক হারামজাদী ।
বিস্ময়ে  থমকে যায় মিলি। এক সেকেন্ড । তারপর গায়ের সব জোর একত্র করে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে বাথরূমের দরোজা বন্ধ করে । কিছুক্ষণ চুপ দাঁড়িয়ে থেকে মুখে ঘাড়ে পানি দিয়ে ধাতস্থ হয়। দরোজায় আওয়াজ । এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোট দরোজা দেখতে পায়। টান দিতেই খুলে যায় । মিলি ছোট সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে ।

ওর স্বপ্নকে পিছে ফেলে ভাঙা বুকে এক সময় জনারণ্যে মিশে যায় ।