গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

রত্না ঘোষ


সমান অধিকার

            মিহির বাবু বিরাট বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসার টাকায় তিনি বিশাল রাজপ্রাসাদের মত চার তলা বাড়ি করেছেন।বাড়িটা দেখার মত। যে সময়ের কথা বলছি তখন এ তল্লাটে   এত উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট ছিল না। তাই এই বাড়িটাই ছিলো সবচেয়ে উঁচু ।
                 মিহিরবাবুর একছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বড়। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ছেলেও বাবার ব্যবসায় ঢুকেছে। এই তো কয়েক বছর আগে বেশ ঘটা করে ছেলের বিয়ে হোল। ওই বিয়ের আলোর রোশনাই অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছিল।
             এখন মেয়ে বড় হয়েছে । মেয়ে নিজেই তার মনের মানুষ ঠিক করেছে।  ছেলেটি নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। মফস্বল শহরের ছেলে এম.বি.. করে একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করে। সংসারে তার অনেক দায় ।চাকরিও নতুন তাই কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট কিনে উঠতে পারে নি।
            মহা ধুমধামের সাথে রাই- রোহন এক সূতোয় বাঁধা পরল। রোহনের ভাড়া করা দু-কামড়ার ফ্লাটে রাই বেশ গুছিয়েই সংসার করছে।
               মেয়ের বিয়ের পর মিহিরবাবুর একটাই চিন্তা মাথায় ভর করলো যে তার অবর্তমানে তার জামাই না এসে তার সমস্ত সম্পত্তি তছনছ করে দেয়। তাই  নিজের জীবৎকালেই তিনি সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা করলেন।  সবার আগে ব্যবসার নব্বই শতাংশ ছেলের  নামে লিখে দিয়ে নিজের নামে রাখলেন বাকিটা। আর প্রায় চারকোটি টাকার বাড়িটা ছেলের নামেই দিলেন।
            মেয়েকে ডেকে বললেন -তোমায় একটা ফ্ল্যাট  গিফট করতে চাই।
-  দেবে ? দাও ---বলে মেয়ে ও বেশ খুশি হল।
               দু মাসের মধ্যে মেয়েকে একটা দু'কামরার ফ্ল্যাট কিনে দিলেন তাকে সুন্দর করে সাজিয়েও দিলেন।
             আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশি ওনার  জয়জয়কার  করতে লাগল। কেউ কেউ এ বলল ----এই তো এত টাকা খরচ করে বিয়ে দিল আবার একটা ফ্লা....  । এ মিহির বাবুর পক্ষেই সম্ভব।"
            আবার কেউ কেউ বলল----জামাইয়ের ভাগ্য দেখ .ঠিক একটা
            কেউ কেউ বিশেষত মেয়েরা বলল রাইকে কটাক্ষ করে ---নিজে দেখে এমন ছেলেকে বিয়ে করেছে যে বাবা ফ্লাট কিনে দিল তবে হোল । ছ্যা!
                 তবে  এদের মধ্যে দু একজন দুষ্টু লোকও ছিল। যেমন রাইয়ের মোক্ষদা পিসি।যে সবসময় মুখের ওপর কথা বলার জন্য আড়ালে অনেকে মুখরা বলেই ডাকে। সে একদিন এলেন মিহির বাবুর বাড়িতে। মিহিরবাবু বেশ গর্বের সাথে বললেন,-রাঙাদি বুঝলে জামাইকে  একটা ফ্ল্যাট কিনে দিলাম । জামাই বলে ঠকাইনি ।
-  জামাই এর নামে  দলিল করে দিয়েছিস?
-  না তা কেন  ?রাইয়ের নামেই দিয়েছি।
-  তবে জামাইয়ের নামে বলছিস যে?
-  ওই একই হোল মেয়ের নামে মানেই জামাই এর নামে।
-  তা না হয় হোল । কিন্তু এই পেল্লাই বাড়ি ,ব্যবসা সবকিছুর ই তো সমান ভাগ রাই পাবে।
-  সে রাস্তা  আমি বন্ধ করে দিয়েছি । ছেলের নামে সব কিছু লিখে দিয়েছি।     
-  দেখলি তো ?তুই বাপ হয়ে পারলি না মেয়েটাকে ছেলের সমান ভাবতে! এরপর অন্যদের থেকে আশা করিস , তারা তোর মেয়েকে প্রাপ্য সম্মান দেবে ? মেয়েটাকে ঠকালি রে ঠকালি । কি দরকার ছিল একটা কবুতরের খোপ কিনে দিয়ে নাম কেনার? এই নাম কিনতে গিয়ে তোর মেয়েকে যে ভালোবাসে তার আত্মসম্মানটুকু বাজারে বেচতে বসলি।"---- বলেই হনহন করে হাঁটা লাগালেন বুড়ি।