আগডুম বাগডুম
(সব চরিত্র কাল্পনিক)
এতো যুদ্ধ
সাজাই রোজ
প্রতিদিন তবু
একমুঠো ফুল হাতে
পাঁজর ভাঙা
পিচ্ছিল উত্তাপে
বৃদ্ধ সময়
খাচ্ছে পংক্তিভোজ।
বাবার কোলে চেপে,
মায়ের সাথে ‘যমের বাড়ি’ এসেছে
পাঁচ বছরের বিকাশ। ‘যমের বাড়ি’ নামটা আমরা যারা
এ বাড়িতে বসবাস করছি
তাদেরই দেওয়া।এবাড়ির কারো চোখে
ঘুম আসেনা।খাঁড়া সিঁড়ির কোনায়
কোনায় রাতবিরেতে ফুসুরফুসুর আওয়াজ
শোনা যায়।কেননা প্রতিটি ঘরে
একটি করে ক্যানসার রোগী।
আর রোগীর সামনে রোগের
ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা একেবারেই
চলেনা।বিকাশ উঠে গেলো আট
নং রুমে। চিলেকোঠার এই ঘরটি
যেমন অপরিষ্কার তেমনি ধেড়ে
ইঁদুরের উপদ্রব।এখানে, মানে মুম্বাইতে আবার ইঁদুর,
বিড়ালের সহাবস্থান। দুজনে একসাথে
ভাগ করে খায়,খেলে। ইঁদুর মারা
নিষেধ। গণেশের বাহন কিনা! আর মুম্বাই মানেই
গণপতি বাপ্পা।
গল্পে ফিরে আসি। কিছু
পরেই বিকাশকে দেখা গেলো
মায়ের কোলে চেপে সিঁড়ি
বেয়ে রান্নাঘরে নেমে এলো।
গ্যাস লাইটারটা হাতে নিয়ে
আমার দিকে তাক করে
ঢিচক্যাও ঢিচক্যাও শব্দ করতে
করতে বন্দুক চালালো।আমিও যথারীতি
জিভ বের করে মরার
ভান করলাম। ও খানিক
নেচে নিলো। বিকাশের লিউকেমিয়া
ধরা পড়েছে।আগে একমাস ভারতসেবাশ্রমের ডরমেটরিতে
ছিলো।সেখানে আবার একমাস পর
পাঁচদিন আর কোথাও থেকে
আবার ঘর মেলে। সেই
পাঁচদিন ওরা থাকবে আমাদের
এই যমের বাড়িতে আট
নং রুমে নুন্যতম ভাড়ায়।
পাঁচদিন থেকে ওরা
চলে গেলো। আরো কতো
মানুষ এলো-গেলো,
আট নম্বর রুমে। দু'মাস কেটে গেছে।আরো
গল্পের ভীড় জমেছে মনের
ঘরে। এমন সময় হঠাৎ
কানে এলো বিকাশের বাবা
বেপাত্তা।ওর অসহায় মা তিনটে
মারাঠি পরিবারে রান্নার দায়িত্ব
নিয়ে ছেলের চিকিৎসা খরচ
সামলাচ্ছে। জানলাম বিকাশের বাবা
বনগাঁ লোকাল ট্রেনে হকারি
করে,মা রাতে
স্হানীয় একটি দোকানে আয়রণ
করে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্হা করতো অশোকনগরে।
মনটা কেমন যেন
মোচড় দিয়ে উঠল। বাবারা
যেতে পারে অসুস্থ সন্তানকে
এভাবে প্রবাসে ফেলে রেখে!
এদিকে বিকাশটাও দিন দিন
শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পুষ্টির
অভাব। হাসপাতাল থেকে পাওয়া
প্রোটিন পাউডার ওকে দাঁড়াবার
শক্তিটুকু দিয়েছে ভাগ্যিস!সেটুকু শক্তিতে ওর
মা কাজে গেলে ভারতসেবাশ্রমের খাবারের
লাইনে থালা হাতে খাবার
সংগ্রহ করে।তারপর হয়তো ভাবে
কিছুক্ষণ বাবার কথা।নাঃ আজও
বাবা এলোনা।বাবাও কি ভাবে
একরত্তি বিকাশের কথা!
নিজে নিজে দু'গাল খেয়ে ফের
আশ্রমের চাতালে শুয়ে থাকে
বিকাশ। মা ফিরে এসে
বাছাকে কোলে জড়িয়ে ধরে।একটা
বেদানা খুলে দানা ছাড়িয়ে
দিতে থাকে।কোল আঁচল থেকে
খুঁটে খেতে থাকে বিকাশ।
কাল আবার হাসপাতাল যেতে
হবে।রক্তপরীক্ষা করে ডঃ কেমোথেরাপি
দিতে পাঠাবেন। আশ্রমের গাড়িতে
চেপে বিকাশ জীবন খুঁজতে
বেরুবে।আরো একটু প্রাণ সঞ্চয়।সেসময় ওর
বাবা লোকাল ট্রেনে ঝালমুড়ি,লজেন্স বিক্রি করতে
করতে ভাববে, "বাব্বা বড়ো
বাঁচা বেঁচেছি।আর নিজের পছন্দ
নয়।এবার মায়ের কথামতো একটা
বউ ঘরে আনার আগে
টিনের ঘরটা মেরামতি করে
ফেলতে হবে চটপট।"
ডঃ এর কথামতো আরো
চারটে কেমো শেষ হলে
বিকাশ ঘরে ফিরতে পারবে।বিকাশের ঘর?
সেতো ওর মায়ের কোল
আঁচলে শুয়ে। আঁচলটা খুঁট
খুঁজেছে গতকালও। রেলপাড়ে চট
আর প্লাস্টিক মোড়া একটা
ঘরে বালুর আস্তানা।বেদানা বিক্রি
করে বালু। ফুটপাতে। বিকাশের
মায়ের আপনজন তখন থেকে
দানায় দানায়।বালু বিকাশের মায়ের
সঙ্গী হতে চায় একথা
সত্যি। আচ্ছা,মায়ের সঙ্গীরা
কি বাবা হতে পারে?নাঃ আর চিন্তা
করবনা।দেখা যাক সময় কি
বলে!