গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

তাপসকিরণ রায়


ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী- ৩১

নিমতলা শ্মশান ঘাটের অলৌকিকতা


নিমতলা মহাশ্মশান হল কলকাতার বিডন স্ট্রিট এলাকায় অবস্থিত একটি শ্মশান ঘাট। এটি হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই মহা শ্মশানে দাহ করা হয়েছিল। তাঁর সমাধি মন্দির এই শ্মশানের পাশেই অবস্থিত। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এই শ্মশানে দাহ করা হয়।  নিমতলা মহাশ্মশান নির্মিত হয়েছিল ১৮২৭ সালে। ২০১২ সালে ভারত সরকার উন্নয়নের জন্য ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পে শ্মশান ও শ্মশানঘাট স্থিত রবীন্দ্রনাথের সমাধি মন্দিরের উন্নয়ন ঘটানো হয়।
শশীভূষণ, অর্ণব ও জনান্তিক ওঁদের এবারের টার্গেট হল নিমতলা শ্মশান ঘাট। আজ থেকে নয়, ছোট বেলা থেকে ওঁরা নিমতলা শ্মশান ঘাটের কথা  শুনে এসেছেন। শ্মশান ঘাট নাকি এমনিতে এক পবিত্র   জাগা হয়। সেখানে নাকি আত্মা-প্রেতাত্মারাও বিচরণ করতে ভয় পায়!
সে দিন এক রবিবারের সন্ধ্যায় শশীভূষণের ঘরে বসেছিল গল্পের আড্ডা। ল্যাপটপ হাতে নিয়ে শশীভূষণ সার্চ করে যাচ্ছিলেন নিমতলা ঘাটের ইতিহাস। কিছু ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধার করতে পারলেও সেখানকার কোন ভূত-ভৌতিক ঘটনার কথা কোথাও স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ইউ টিউবের এক ভিডিও অনুযায়ী এখানে নাকি গভীর রাতে কিছু ছায়াদের শ্মশানের আশপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
অর্ণব বন্ধুদের মাঝে একটু ভীতু প্রকৃতির, তিনি বললেন, দেখ নিমতলা হল কলকাতার মহাশ্মশান। প্রতিদিন একশর ওপরে মরা এখানে দাহ করা হচ্ছে। তার মধ্যে আছে অনেক অপঘাতে মরা মৃত দেহ। এমন একটা জাগায় ভূত থাকবে না এমনটা বিশ্বাস করা যায় ?
জনান্তিক সমর্থন করে হেসে বলে উঠলেন, শশী, দেখ, দেখ, ওখানে আত্মা-প্রেতাত্মাদের নিবাস হতেই হবে। ওখানে তো দস্তুর মত ভূতদের একটা প্রাচীন শহর থাকার কথা রে !
শশীভূষণ হাসলেন। তাঁর পাশে রাখা চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে আবার ল্যাপটপে ভূত খোঁজার কাজে ব্যস্ত হলেন। জনান্তিক আর অর্ণব দুজনেই ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। তারপর কিছু কিছু অপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেল বটে কিন্তু সেখানের ভৌতিক কোন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেল না। এদিকে ওঁরা হেস্টিং হাউজ ঘুরে এসেছেন এক মাসের ওপরে হয়ে গেছে। আবার কোথাও বেরোতে না পারলে যেন ওঁদের মনটা ভাল লাগছিল না। তাই ওঁরা কেবল ছায়ার ঘুরে ফেরার ঘটনাটাকে সম্বল করে এক শনিবারের অমাবস্যার রাত দেখে বেরিয়ে পড়লেন নিমতলা শ্মশান ঘাটের দিকে।
রাত তখন বারটার কাছাকাছি হবে। তিন বন্ধুতে মিলে হাজির হলেন নিমতলা শ্মশান ঘাটের কাছে। নিজস্ব কার থেকে নেমে শ্মশানঘাট পরিসর ধরে ধীরে ধীরে ওঁরা হাঁটতে লাগলেন। দীর্ঘ পরিসর নিয়ে এই ঐতিহাসিক শ্মশান ঘাটের অবস্থান। এখানের নতুন পুরনো বিল্ডিং মিলে বেশ কিছু ফার্নেস আছে, তাতে প্রতিদিন জ্বলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে শতাধিক মৃতদেহ। সে সঙ্গে এখনও সাধারণ লাকড়ি জ্বালানির চিতার ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে। মাঝে মাঝে ওঁদের কানে ভেসে আসছে প্রবহমান গঙ্গার  আওয়াজ। চারদিকে ছমছম একটা ভাব, তার  সঙ্গে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলী এই মাঝ রাতেও আকাশের দিকে উড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে হঠাৎ বলো হরি, হরি বোল, ধ্বনি এসে ওঁদের কান যেন বিদীর্ণ করে গেল। অর্ণব তৎক্ষণাৎ ভয়ে কেঁপে উঠলেন। এই মাঝ রাত পেরনো সময়েও দাহ কাজে বিরাম নেই। এখানকার বাতাস যেন অনেকটা ভারী ভারী মনে হতে লাগল। বাতাসের সঙ্গে সামান্য হলেও পোড়া চামড়া-মাংসের গন্ধ এখনও নাকে এসে লাগছে।
শশীভূষণদের সামনে, রাস্তার এক পাশে,  আচ্ছন্ন অন্ধকারে তিন চারজন লোক বসে আছে না ? হ্যাঁ তাই, সামান্য আগুনের আঁচ আর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। বন্ধুরা দেখলেন, এক সাধু বাবা বসে আছেন। গেরুয়া বস্ত্র দেখেই সাধু বলে তাঁকে চিনতে ভুল হয়নি। আর সাধুকে ঘিরে দুজন শিষ্য হবে, বসে আছে। তবে ওরা সবাই গঞ্জিকা সেবনে ব্যস্ত আছে। বন্ধুরা দাঁড়ালেন,  সাধুবাবা ওঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,  এখানে কি জন্যে ? মরা নিয়ে  এসেছিস বুঝি ?
শশীভূষণ ধীরে ধীরে তাঁদের আসার উদ্দেশ্য সাধুবাবাকে বললেন।  সাধু বললেন, জানিস তো আজ শনিবার আর অমাবস্যার রাত। ভূতের দৌরাত্ম আজ রাতেই বাড়বে,  তা না হলে ভূতও যে শ্মশানকে খুব ভয় পায় রে ! সাধু বাবা এবার ছিলমে টান দিলেন। সাধুর সঙ্গে দুটো লোক বসে, ওরা নিশ্চয় সাধু নয়। সাধুর ছিলুম প্রসাদ নিতে এখানে এসে জুটেছে হবে। ওদের মধ্যে থেকে একজন খানিক নেশার ঘোরে বলে উঠলো, বাবুরা, আমরা পাশেই থাকি, আমরা কিন্তু এখানে মাঝেমধ্যে ভূতের চলাফেরা করা দেখতে পাই। 
শশীভূষণ কৌতূহলী হয়ে লোকটাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কোথায় ভূত দেখেছেন ?
লোকটা তার হাতের আঙুল তুলে বলল, ওই, ওই, ওইখানে শ্মশান আবাসের বাইরে।
লোকটা একটা গাছের তলা দেখিয়ে বলে উঠল।
সবাই সেদিক লক্ষ্য করে তাকাল। জায়গাটা শ্মশানের বড় গেটের পাশে  বড় একটা গাছের তলা।
জনান্তিক বললেন, ছায়া তো কত কিছুরই হতে পারে ?
--না, একদম না, একটা লম্বা মানুষের ছায়া দেখেছি আমি, লোকটা বলে উঠলো।
--লম্বা মানুষ! বলে অর্ণব ভয়ে ভয়ে জনান্তিকের কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। 
--কিন্তু গাছের তলে ছায়া! সে তো গাছের ডালপালার ছায়াই হবে, শশীবাবু সন্ধিহান হলেন।
সাধুর সঙ্গের অন্য লোকটা এবার একটু উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, যাও যাও--তোমরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারো না--ছায়া তো কতবার আমিও দেখেছি--
শুরুতে কথা বলা লোকটা আবার বলল, গাছের ছায়া আর মানুষের ছায়া কি এক    হল? যত নেশাই করি না কেন আমরা মানুষ আর গাছের ছায়ার পার্থক্য বুঝি--
না, আর কথা বাড়ানো ঠিক হবে না, জনান্তিক বন্ধুদের ডাকলেন, চল আমরা শ্মশানের বিল্ডিংয়ের  চারপাশটা একবার ঘুরে আসি।
সাধু ছিলুমে দীর্ঘ একটা টান দিয়ে বলে উঠলেন, ওধারে যাস নে বাবুরা--ভয় পাবি--অকালে তোদের  প্রাণ যাবে--
তিন বন্ধু এগিয়ে গেলেন। বন্ধুদের মনে হল, সাধু বাবার এখন নেশা হয়েছে। সে এখন অনেক কিছুই বলবে।
না, কিছু নেই, রাতের অন্ধকার আর তার ক্ষীণ আবছা আলো মিলে একটা ছাই রঙা ভাব হয়ে আছে চারদিক। ওরা শ্মশান পরিসরের চারপাশ ঘুরে নিলেন। অপ্রাকৃতিক কোন কিছুই   তাঁদের চোখে পড়লো না। এবার ? এবার গঙ্গার ঘাটের দিকে তাঁরা হাঁটতে লাগলেন। রাত তখন একটা বেজে গেছে। আশপাশে একটা ভৌতিক পরিবেশ গ্রাস করে আছে। প্রতিবারের মতো অর্ণব ভয়ে ভয়ে শশী ও জনান্তিকের মাঝখানটা দখল করে নিয়েছেন। অন্য সব আওয়াজ ছাপিয়ে তখন গঙ্গার জলের ঢেউ ও স্রোতের আওয়াজ আসছে। নদীর পারে ছোটখাট বস্তি আছে। বড় পাকা বাড়ি নেই বললেই চলে। বস্তির পাশ দিয়ে কল্লোলিনী গঙ্গা বয়ে চলেছেন। রাতের দৃশ্যে নদীর জল ও তার ঢেউয়ের রেখা সব কিছু মিলেমিশে নদীর দিকটা ধূসর বালুচরের মত লাগছে। নদীর ভাঙন আন্দাজ করা যাচ্ছে, ভেঙে ভেঙে কিছু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। তার ভগ্নাবশেষ নদীর পারে ও জলে এখনও দৃশ্যমান হয়ে আছে। অদূরে জলে দেখা যাচ্ছে ঝাপরানো একটা বড় গাছ। সম্ভবত ওটা বট গাছ হবে। একটু কাছে গিয়ে ওঁদের মনে হল, গাছটার চারপাশটা জলে ভরে আছে। একটা মস্ত মাটির ঢেলার উপর গাছটা যেন এখনো তার শেকড় বাকড় দিয়ে নিজেকে আঁকড়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। হঠাৎ শশীভূষণের মনে হল, ওই গাছের গোড়ায় কেউ যেন নড়েচড়ে উঠলো!
জনান্তিক ফিসফিসিয়ে উঠলেন, হ্যাঁ আমারও তো তাই মনে হল !
অর্ণব সে দিকে তাকাবার সাহস করলেন না, তিনি আরও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
--ভোম, ভোম, অস্পষ্ট হলেও বন্ধুদের কানে এসে স্পষ্ট ঠেকল সে আওয়াজ। কোন সাধু বাবা হবে বসে আছেন, জনান্তিক বলে উঠলেন। কিন্তু ওখানে যাওয়া যাবে না। তা ছাড়া নদীর পারের কাছে যাওয়া নিরাপদ নয়। শশীবাবু বন্ধুদের সাবধান করে দিলেন। সাবধান করেও শশী বাবু কিন্তু নিজে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বট গাছটার দিকে। জনান্তিক ওঁর একটা হাত টেনে ধরে বাঁধা দিলেন। 
বন্ধুরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। সবার মুখের কথা যেন হারিয়ে গেছে। বন্ধুরা নদীর পারে বটগাছের সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নদীপার আর বটগাছের দূরত্ব পাঁচ-সাত হাতের মত হবে। গাছটা যেন ক্ষুদ্র এক দ্বীপের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। ছলছল কুলুকুলু রবে নদীর জল বয়ে চলেছে। সাধুকে সেই বট তলায় আলোক বিহীন স্থানেও কেন যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তাঁর শরীর থেকে ঈষৎ ম্লান আলো বেরিয়ে তাঁকে এবং বট গাছের তলাটাকে কেমন যেন অস্পষ্ট অথচ উজ্জ্বল আলোকিত করে তুলেছে! দিব্য সাধু হবেন, বন্ধুরা মনে মনে অনুভব করলেন। 
--ভোম, ভোম, সাধুর চাপা চীৎকারে তিন বন্ধু কেঁপে উঠলেন। অর্ণবের দেহ অবশ হয়ে পড়েছে, তিনি দুই বন্ধুর মাঝখানে অনেকটা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সাধু একটা হাত তুলে আশীর্বাদী ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলে চলেছেন, আমি পাঁচ শ বছর ধরে এখানে আছি...সাধুর মুখ থেকে যেন চাপা গম্ভীর লাউডস্পিকার স্বর বের হয়ে আসচ্ছে! 
--কেন বাবা ? এক যান্ত্রিক স্বর যেন জনান্তিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো! 
--তোরা আসবি বলে, আয়, তোরা আয়, আমার কাছে উঠে আয়, সাধু বাবা হাতছানি দিয়ে তিন বন্ধুকে ডেকে উঠলেন।
তিন বন্ধু ঘোর ঘোর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।ওঁরা যেন  স্থানকালপাত্র জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। অর্ণব যান্ত্রিক পুতুলের মত থমেরে আছেন। শশীভূষণ ও জনান্তিক গঙ্গার ভাঙা পারের দিকে দু পা এগিয়ে গেলেন। আর দু পা এগোলে ওরা গঙ্গার জলে গিয়ে পড়বেন। সাধু তাঁর দুই হাত দিয়ে শশীভূষণদের ডেকে চলেছেন, আয়, আয় আয়--আমায় উদ্ধার কর ! ঠিক এমনি সময় বেশ জোরে ঝমঝম ঝপাৎ করে কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেলো। শশীভূষণ ও জনান্তিক সে শব্দে নিজের হোশ ফিরে পেলেন। ওঁরা তাকিয়ে দেখলেন, ওঁদের পাশ দিয়েই গঙ্গার কিছুটা পার ধসে পড়েছে। এবার হয়ত ওঁদের পায়ের নিচের পারের দিকটাও ধসে পড়বে।
শশীভূষণ হঠাৎ চীৎকার দিয়ে উঠলেন, সাবধান, সাবধান ! আর এগোস না কেউ ! চিৎকার শুনে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন  জনান্তিক। ওঁরা তাঁদের স্বাভাবিক সত্তা ফিরে পেলেন। জনান্তিক শশীভূষণের একটা হাত টেনে ধরে পারের ওপরে উঠে এলেন। অর্ণবও ওঁদের পাশে উঠে এসেছেন। চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের ঝুপড়ি ঘরের কিছু কিছু লোকজন জেগে উঠছে। ওদের ঘরের আলো জ্বলে উঠেছে। ওরা যেন ওঁদের দিকেই এগিয়ে আসছে, ওদের কথা শোনা যাচ্ছে। 
--কে, কারা ওখানে ? লোকজনের মধ্যে থেকে কেউ প্রশ্ন করছে, ওদের গলার স্বর ভেসে আসছে, কে ? কে আপনারা ?
--আমরা, শশীভূষণ যেন আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বলে উঠলেন। অর্ণব ভয়ে ভয়ে তাঁর দু'হাত মাথার ওপরে তুলে সারেন্ডার করছেন এমনি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। পাঁচ-ছ  জন লোক তিন বন্ধুকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে আছে। জনান্তিক ও শশীভূষণ তাদের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। স্থানীয় একজন বলল, আপনাদের কি নিজেদের জীবনের কোন ভয় নেই?
স্থানীয়দের আর একজন বলে উঠল, জানেন তো, আজ শনিবারের অমাবস্যা রাত, অলৌকিক সবকিছু এই দিনটাতেই জাগ্রত হয়ে ওঠে। আমরা শুনেছি, ওই বট গাছের তলায় এক সাধু ধ্যানে বসে ছিলেন। এক শনিবার অমাবস্যা রাতে নদীর জল জোয়ারে ফুলে ফেঁপে উঠলো, নদীর পার ভেঙে বট গাছটা ভেসে যাবার জোগাড় হল আর ওই দিনই সেই সাধু জলের তলে তলিয়ে গেল। তারপর থেকে শনিবার অমাবস্যার রাতে ওই বটের তলায় সেই সাধুকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখা যায়।
স্থানীয় একজন মাঝখান থেকে বলে উঠলো,  মাঝে মাঝে ভোম-ভোম শব্দ করে ওঠে সে সাধু। আমাদের বস্তির অনেকেই এ আওয়াজ শুনেছে।
শশীভূষণ জিজ্ঞেস করলেন, ওই ঘটনা কতদিন আগে ঘটেছিল ?
--বহু বছর আগের ঘটনা--আমরা তিন-চার পুরুষ ধরে এ গল্প শুনে আসছি। এ ঘটনা আমাদের বাপ-ঠাকুরদারা তার বাপ ঠাকুরদার মুখে শুনেছে।
এর পর আর কথা চলে না। এ ঘটনার কথা শশীভূষণ অন্তর্জাল জগতের কোথাও খুঁজে পাননি--এ ঘটনা তাঁদের কাছে যেন এক নতুন আবিষ্কার।