ভালোবাসা ও প্রায়শ্চিত্ত
একটা চিন্তা সারাক্ষণ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে। যেন-বা অপ্রতিরোধ্য, সংক্রামক কোনো ভাইরাসের মতো চিন্তাটা তার রক্তনালী ভেদ করে যে-কোনোভাবে মস্তিষ্কে পৌঁছে গেছে। এ থেকে যেন আর মুক্তি নেই। ভালোই তো ছিল সে। রোজ সকালে বাজারের ফর্দ হাতে নিয়ে বাজারের এ-মাথা থেকে ও-মাথা দাপিয়ে বেড়ানো। তারপর ব্যাগ-ভর্তি সদাইপাতি
রান্নাঘরে
ধুপ করে ফেলে দিয়ে,
বিশ্বজয়ের
উত্তেজনা
নিয়ে মা’কে গলা ফাটিয়ে
জানিয়ে
দেওয়া কী কী রান্না
করতে হবে। তারপর রিমোটটা
হাতে নিয়ে সোজা টিভির সামনে।
ফলত, মিলে যেত চ্যানেল থেকে চ্যানেলে ঘুরে বেড়ানোর এক বিরামহীন মওকা। যেন একটা দুর্দান্ত খেলা। উদ্দশ্যহীন যে-কোনও খেলাই আনন্দদায়ক এবং সেইসাথে সময়-হন্তারক। সুতরাং কোনদিক দিয়ে যে বেলা পেরিয়ে যেত সেই হুঁশ থাকতো না। দুপুরবেলা মধ্যাহ্ন-ভোজন সেরে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় পড়ে যাওয়ার আগে সে শুধু মা’কে একবার বলে রাখতো যেন সন্ধ্যার আগেই তাকে ডেকে দেওয়া হয়। আসলে সন্ধ্যায় তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলতে টঙে বসে চা খাওয়া আর বিড়ি ফোকা। মাঝে মাঝে ধুম্রশলাকার এই আপাত-নিঃসঙ্গ আড্ডায় তার সাথে যোগ দেয় ফিরোজ। ফিরোজ একজন স্বভাব-কবি। মুখে মুখে গান কবিতা রচনা করে ফেলার এক
আশ্চর্য ক্ষমতা আছে তার, পাশাপাশি
একজন প্রথমশ্রেণির শিল্পবোদ্ধাও বটে। ফিরোজের সাথে আড্ডা দিয়ে তাই খুব সুখ পায়
সেজান।
সেজান!
হ্যাঁ, আমাদের
এই গল্পের মূল চরিত্র সেজান। বয়েস ত্রিশের কোঠায়। পেশায় চিত্রশিল্পী।
মাঝে মাঝে রিজিওনাল কিছু চিত্রপ্রদর্শনীতে তার আঁকা দু-একটা ছবি স্থান পায়। সপ্তাহে দুইদিন সে সামিরার বাসায় গিয়ে
তাকে ছবি-আঁকা শেখায়। একরকম বোহেমীয় জীবন হলেও ভালোই চলে
যাচ্ছিল সেজানের। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ভাগ্য তার সাথে পাশা খেলা শুরু করলো।
সামনেই সামিরার জন্মদিন। সেজান ভাবছিল জন্মদিনে সামিরার একটা পোর্ট্রেট করে
তাকে উপহার দেবে। সে-অনুযায়ী
কাজেও নেমে গেল। সেদিন দুপুরে, ক্যানভাসটা ঠিকঠাক করে চারকোল হাতে নিলো
পোর্ট্রেটের প্রাথমিক অবকাঠামোটা আঁকবে বলে। রেফারেন্স হিসেবে আছে তার মোবাইলে
সামিরার একটা ছবি। চিবুকে হাত দিয়ে বসে থাকা এক লাস্যময়ী তরুণী। আলো-আঁধারির খেলার কারণে তাকে খানিকটা ধ্যানমগ্ন মনে হচ্ছে। ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কেমন যেন ঘোরগ্রস্ত হয়ে পড়ে সেজান। আর ঠিক তখুনি একটা স্মৃতি বুলেটের মতো তার মাথায় আঘাত করে। সেজানের মনে পড়ে যায় আজ থেকে দু বছর আগে সে একটা পাপ করেছিল। হঠাৎ করে তার শরীরে একটা কাঁপুনি শুরু হলো। অনুশোচনার তীব্র আঘাতে তার মস্তিষ্ক যেন প্রায় দ্বিখণ্ডিত হবার উপক্রম। পায়ের তালুতে যেন ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে। হার্টবিট বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। অকস্মাৎ এই প্যানিক অ্যাটাকের ভার তার শরীর নিতে পারলো না। হুড়মুড় করে মাটিতে পড়ে গেল। বিছানার পায়া ধরে সে নিজেকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলো বটে কিন্তু ততক্ষণে স্মৃতির অস্ত্রসজ্জিত সেপাইরা তাকে ঘিরে ফেলেছে। সে এখন তার মা’কে ডাকার কথা ভাবতে পারছে না, সে এখন সামিরার কথা ভাবতে পারছে না, এমনকি নিজের কথাও ভাবতে পারছে না। তার সমস্ত ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে সটান দাঁড়িয়ে গেছে একটা তীব্র অনুশোচনাবোধ। তার ডান-বায়ে-সামনে-পেছনে সবদিক থেকে স্মৃতির ছায়ামূর্তিগুলো যেন সমস্বরে বলছে—তুই পাপ করেছিস...তুই পাপী, তুই পাপী...
সেজান তার দু’হাত দিয়ে ,মাথা চেপে ধরে। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে! এতবেশি পালপিটেশন হচ্ছে যে, সে নিজেই যেন নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। সে অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করলো এই চিন্তাগুলো মাথা থেকে সরাতে। কিন্তু ইতোমধ্যেই তা সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসেছে। একটা জলজ্যান্ত মানুষ একটা চিন্তার কাছে, স্মৃতির কাছে কত অসহায়-- ভেবে সেজান আর নিজেকে
ধরে রাখতে পারলো না। বালিশে
মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে
কাঁদতে
ক্লান্ত
হয়ে সে যখন প্রায় ঘুমিয়েই
পড়েছিল
তখনই ফিরোজ ফোন করলো। কাঁপাকাঁপা
ক্লান্ত
হাতে সে ফোন রিসিভ করলো।
-----
কী ভাই আজকে বেরুবেন
না? কিছুক্ষণ
আড্ডা-টাড্ডা
দিতাম।
সেজান ভাবলো হয়ত ফিরোজের সাথে কথাবার্তা কিছু হলে ভালো লাগতে পারে। অন্তত স্মৃতির এই ভয়ংকর যন্ত্রণা থেকে হয়ত দূরে থাকা যাবে।
-----
তুমি দোকানে
গিয়ে বসো আমি আসছি।
সেজান আর দেরি করে না। ঝটপট তৈরি হয়ে নেয়। রাস্তায় বেরিয়ে রীতিমত দৌড়ানো শুরু করে সে। কিন্তু যতই সে ভাবছে এই ভাবনাগুলোকে মাথায় স্থান দেবে না ততই ভাবনাগুলো তাকে পেয়ে বসছে। স্মৃতির তাড়া খেয়ে সে নাভিশ্বাসে কেবল দৌড়াচ্ছে। ফিরোজের সাথে যখন দেখা ততক্ষণে সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হাঁপাচ্ছে ক্রমাগত।
-----
কী ব্যাপার
ভাই,
দৌড়ায়ে
আসছেন নাকি?
সেজান উত্তর দেয় না। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ফিরোজের দিকে। ফিরোজ কী বললো সে শুনতেই পায় নি। তার কেবলই মনে হচ্ছে ফিরোজ বলছে—তুই পাপী,
পাপ করেছিস।
---- সেজান ভাই,
আপনি ঠিক আছেন তো?
সেজান সম্বিৎ ফিরে পায়।
----- হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। চা দিতে বলো।
সেজান শুনতে পাচ্ছে চা হাতে নিয়ে ফিরোজ গুনগুনিয়ে গান গাইছে। হঠাৎ গান থামিয়ে
স্বভাবসুলভ গল্প জুড়ে দিল।
----- আচ্ছা ভাই,
এই যে ফ্রা
আঞ্জেলিকো এত ছবি এঁকে গেলেন, ভালো করে তার ছবিগুলো খেয়াল করলে দেখবেন যে, তিনি
অ্যাম্ব্রোজত্তোর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। সবচেয়ে বড় কথা.........
সেজান কিছু শুনতে পাচ্ছে না। সে মাথা ঘুরিয়ে দোকানদারের দিকে তাকায়। দোকানদারও
যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভয়ংকর মুখভঙ্গির মাধ্যমে বলছে--- তুই পাপ করেছিস ,
তুই পাপী... তুই
পাপী। সেজান অসহায় হয়ে ফিরোজের দিকে তাকায়। সেও একই কথা বলছে। এবার আর নিজেকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না সেজান। দু’হাতে কান বন্ধ করে একটা চিৎকার দিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
খুব অস্পষ্ট হলেও পাশের ঘর থেকে সে তার মা আর ডাক্তারের কথোপকথন শুনতে
পাচ্ছিলো।
----- হাইপোগ্লাইসেমিক শক। আর কিছু না। গ্লুকোজ খেতে দিন
ঠিক হয়ে যাবে। তবে পালপিটেশন কেন হচ্ছে তা অবশ্য বোঝা গেল না। এ বয়সে হার্টের
সমস্যা হবার কথা না । তারপরেও একটা ইসিজি করিয়ে আমাকে দেখাবেন।
ইসিজি করানো হলো। ডাক্তার ইসিজি দেখে নিশ্চিত করলেন যে, তার হার্টে সমস্যা নেই।
---- আমার মনে হয়,
তার সমস্যাটা
মানসিক। আপনি বরং তাকে ভালো কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখান।
সন্ধ্যেবেলা। শহরময় লোডশেডিং। সেজানের মা একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে সেজানের রুমে
আসলেন। পরম মমতায় সেজানের মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলেন।
----- কিরে বাবা?
তোর কী হয়েছে? তুই
কত প্রাণবন্ত ছিলি। হঠাৎ তোর কী হলো?
আমার যে একদম ভালো
লাগছেনা তোকে এভাবে দেখতে।
বলতে বলতে গলা ধরে এলো মায়ের। সেজানের খুব মায়া লাগে। কিন্তু সে কি তার মা’কে বোঝাতে পারবে তার ভিতর দিয়ে কী বয়ে চলছে।
সেজান তার মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুই বললো না। মা-ও
নিঃশব্দে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শেরিফ আরমানের মুখোমুখি বসে আছে সেজান।
----- তুমি বলছিলে তোমার অনুশোচনাবোধ নিয়ে কথা। তা কী নিয়ে এত
অনুশোচনা জানতে পারি?
সেজান উত্তর দেয় না।
---- অ্যাবিউজ?
---- জি না।
---- মার্ডার?
--- অসম্ভব।
---- তাহলে? কী করেছ সেটা তো আমাকে কিছুটা হলেও বলতে
হবে। শোনো,
কম্পালসিভ থট থেকে বেরুবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সব কথা শেয়ার করা। তুমি আমার উপর ভরসা রেখে নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো।
সেজান তার পাপের কথা ডাক্তারকে জানালো। সব শুনে ডাক্তার নির্ভরতা মাখানো একটা
হাসি দিলেন।
---- যারা সিরিয়াল কিলার,
রেপিস্ট তাদের যদি
বিবেকবোধ থাকতো তাহলে তারা বিবেকের দংশনেই আত্মহত্যা করতো। কিন্তু তারা এসব অন্যায়
করার আগেই বিবেককে মেরে ফেলে। আর দেখো,
তুমি যা করেছ তার
জন্য তোমার কী পরিমাণ অনুশোচনা। তারমানে তুমি ঠিক পথেই আছ। পাপহীন কোনো মানুষ আমাকে
দেখাতে পারবে? কমবেশি
পাপ সবাই করেছে। এটাই মানুষের স্বভাব। কিন্তু ভালোমানুষ মাত্রেই
বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তারা ভুল করলেও ভুলটা বুঝতে পারে এবং একই ভুল আর করে
না। সুতরাং তুমি একজন ভালো মানুষ এটা তোমাকে বুঝতে হবে। যখনই এইসব অনুশোচনা আসবে
নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেবে যে তুমি ভালো মানুষ তাই তোমার অনুশোচনা হচ্ছে। আর সেই
সাথে আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো তোমার কম্পালসিভ চিন্তাগুলোকে দূরে রাখতে
সাহায্য করবে। তুমি পনেরো দিন পর আমার সাথে আবার দেখা করবে।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরুবার পর সেজান বুঝতে পারলো যে তার অনেক হালকা
লাগছে। অনেকটা ভারমুক্ত হয়ে গেছে যেন। চৌরাস্তা পেরিয়ে রিকশায় উঠতে যাবে এমন সময়
সামিরা ফোন করলো।
---- এই যে স্যর,
আজকে আমার জন্মদিন
ভুলে গেছেন নাকি?
---- আসলেই ভুলে গেছিলাম,
সরি। আমি এক্ষুনি
আসছি
---- তাড়াতাড়ি আসুন। সবাই চলে এসেছে।
সামিরা ফোন রাখার পর রিকশা নিয়ে সোজা সামিরার বাসার দিকে রওয়ানা হলো সে। আর
রিকশায় বসে ভাবছে সামিরার সাথে পরিচয়ের প্রথম দিনগুলো। একটা এক্সিবিশনে তার দুটো
ছবি সামিরা কিনেছিল আর জিজ্ঞেস করেছিলো তাকে আর্ট শেখাতে পারবে কিনা। সেজান
সানন্দে রাজি হয়েছিল। সামিরার ব্যক্তিত্ব আর রূপে সে প্রথম থেকেই মুগ্ধ। কিন্তু এই
ভালোলাগার কথাটুকু কোনোদিন জানাতে পারেনি। আজ হয়ত সে জানাবে। মুখ ফুটে ভালোলাগার
কথা স্বীকার করে নেবে। কিন্তু মানসিক যন্ত্রণার কারণে তার পোর্ট্রেট শেষ করা গেল
না, তাই মনের ভিতর একটা খুঁতখুঁত ভাব রয়েই গেছে।
কিন্তু কী উপহার দেবে তাকে? ফুল দেওয়া যেতে পারে কি?
সামিরার প্রিয় ফুল
রজনীগন্ধা, এটা সে জানে। ফুলের দোকানের সামনে রিকশা থামিয়ে একতোড়া
রজনীগন্ধা কিনে নিল।
কলিংবেল দিতেই দরজা খুলল সামিরা স্বয়ং।
---- হ্যাপি বার্থডে
---- থ্যাংকইউ, শেষপর্যন্ত আসলেন তাহলে? এতদিন
কোথায় ছিলেন?
---- হাহাহাহা, বনলতা সেনের মতো প্রশ্ন করছ যে।
----- ফাজলামো রাখুন ,
কোথায় ছিলেন তাই
বলুন।
----- আসলে এই কয়দিন আমি খুব মানসিক যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে গিয়েছি।
---- কীরকম?
---- একটা তীব্র অনুশোচনাবোধ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। এখনো পুরোপুরি
কাটেনি ব্যাপারটা।
----- কিসের জন্য এত অনুশোচনা?
----- আমি একটা পাপ করেছিলাম সামিরা।
----- অনুশোচনা হওয়া ভালো। যা হবার তাতো হয়েই গেছে। নিজেকে ক্ষমা
করুন। ফরগিভ এন্ড ফরগেট। এখন আসুন তো ,
সবাই বসে আছে ভিতরে।
সামিরা সেজানের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।
প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। সামিরা সেজানকে এগিয়ে দিতে বাইরে পর্যন্ত
আসে।
----- তোমাকে একটা কথা বলার ছিল সামিরা
---- বলুন
সেজান ইতস্তত করছে।
---- আসলে , হয়েছে কি...
---- ফিল ফ্রি প্লিজ
---- আসলে তোমার একটা পোর্ট্রেট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু হয়ে ওঠেনি, স্ট্রেসের
ভিতর ছিলাম তো।
---- তাতে কী। পরে আঁকবেন। আর এসব উলটাপালটা চিন্তা একদম বাদ।
আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ । আপনার সময়ের মূল্য অনেক। অযথা এসব পুরোনো
স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকলে চলে?
সেজান অনেক ভরসা পায়। কিন্তু আসল কথাই যে বলা হলো না।
---- শোনো সামিরা
---- জি, বলুন
---- ইয়ে, মানে, আজ তাহলে যাই
এই বলেই সেজান সামনের দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ পেছন থেকে সামিরার কণ্ঠ শোনা গেল।
---- শুনছেন?
সেজান ঘুরে দাঁড়ায়। তার বুকের ভিতর দিয়ে যেন একটা উত্তপ্ত তরল স্রোত বয়ে গেল।
---- কিছু বলবে?
---- হুম।
সামিরার গালদুটো গোধূলির মতো রক্তাভ হয়ে গেছে।
---- বলো সামিরা
---- আপনি যে এই কয়দিন আসেন নি,
আমার খুব কষ্ট
হয়েছে। আপনি এভাবে হারিয়ে যাবেন না । আসবেন।
ঠিক সামিরার চোখে চোখ রেখে সেজান বললো, আমি আসব সামিরা,
আমাকে যে আসতেই হবে।
সেজান সামনে পা বাড়ায়। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সে রিকশা নিয়ে চৌ-রাস্তার মোড় পর্যন্ত আসতেই ঝুম
বৃষ্টি শুরু হলো। বহুদিন পর বৃষ্টি। সেজান ভাবলো এই বৃষ্টিতে ভেজা দরকার। রিকশা
ছেড়ে দিয়ে সে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে সে দেখলো সেই পরিচিত টং দোকানে
একসাথে বসে চা খাচ্ছে ফিরোজ আর ডাক্তার শেরিফ আরমান। ফিরোজ গুনগুন করে গান গাইছে
বোঝা যাচ্ছে। আর শেরীফ আরমান জোরে জোরে বলেই যাচ্ছেন, ফরগিভ এন্ড ফরগেট,
ফরগিভ এন্ড ফরগেট...
সেজানের ভালো লাগছে। ইতোমধ্যেই সে কাকভেজা হয়ে গেছে। বাসায় পৌঁছাতেই তার মা
দৌড়ে এলেন।
--- কিরে তুই তো পুরো ভিজে গেছিস। বৃষ্টিতে না বেরুলে হতো না?
---- না,মা। হতো না। এই বৃষ্টি আমি তোমার গায়েও মেখে
দেব।
সেজান তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মা চিৎকার করে
যদিও বলে
, ছাড় ছাড় পাগল ছেলে কোথাকার,
কিন্তু নিজেকে সন্তানের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করার চেষ্টাও করেন না।
রাতের বয়েস বেড়ে চলেছে। বৃষ্টিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আর যে-সমস্ত কালো মেঘ বৃষ্টি হতে পারে নি ,সেগুলো শহরের সমস্ত অট্টালিকা অতিক্রম করে
দিগন্তে গিয়ে মিশেছে।