গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নীহার চক্রবর্তী

অমল ধবল পালে


অমলাদি নামজাদা গায়িকা । বেতারে নিয়মিত গান করে । টিভিতেও মাঝেমাঝে দেখা যায় তাকে । ব্যবহারে সে অমায়িক । অমলাদির স্বামী আর ছেলে কোলকাতা শহরের নামী ডাক্তার ।
পাড়ার ছেলে বিলোল অমলাদির অন্ধ ভক্ত । শুধু তার গানের জন্য নয় । সুন্দর আচরণের জন্যও । বিলোলের কিছু জিজ্ঞাসা ছিল তার কাছে ।
সেদিন স্টেশনে একান্তে দেখা হতেই এক-মুখ হেসে তার কাছে কিছু কথা জিজ্ঞেস করলো ও । 
প্রথমেই বলল তাকে,''আপনি গানের জগতের মানুষ হয়ে ছেলেটাকে ডাক্তার করলেন ?''
শুনে হাসল অমলাদি ।
হেসে উত্তর দিলো,''যার যেদিকে ন্যাক । সে আমি কী করে বলবো ? আমি কি কখনো ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম ?''
''
বেশ'' বলে হেসে বিলোল এবার তাকে অন্য প্রশ্ন করলো ।
''আচ্ছা,দিদি । আপনি তো গানের মানুষ । তা ডাক্তার-পাত্র পছন্দ করলেন কেন ? ডাক্তার গানের কি আর বোঝে ।'' 
শুনে বেশ মজা পেলো অমলাদি ।
তারপর বলল,''আমি কী আর পাত্র পছন্দ করেছি ? আর তখন কি অত ভেবেছি ডাক্তার গান বোঝে বা বোঝে না ? তাছাড়া..''
''
তাছাড়া কী,দিদি ?''
খুব আগ্রহের সঙ্গে বিলোল জানতে চাইলো তখন ।
অমলদাদি মুচকি হাসল ।
পরে উত্তর দিলো,''তাছাড়া ডাক্তার বলে কথা । বাবা-মা তার টাকার কথাও নিশ্চয় ভেবেছিলোআমিও ভেবেছিলাম বৈকি ।''
অমলাদির সরল উত্তর পেয়ে বিলোল বেশ খুশী হল ।
মাথা নেড়ে বলল ও,''এটাই তো স্বাভাবিক ।''
তার কিছু পরে বিলোল অমলাদিকে প্রশ্ন করে বসলো,''আরও প্রশ্ন আছে । তবে আর একটা প্রশ্ন করি । কেমন ?''
অমলাদি হেসে উঠে বলল,''বেশ তো । বল দেখি ।''
বিলোল তখন স্মিত হেসে চারদিক তাকিয়ে বলে বসলো,''আপনার গান দাদা আর ছেলে শোনে ? আপনাকে তোয়াজ করে ?''
বিলোলের কথা শুনে হেসে মরে তখন অমলাদি । দেখে অবাক বিলোল । তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ।
তারপর অমলাদি তার নিখুঁত তাল-লয়ের মতো নিখুঁতভাবে হাসি সামলে উত্তর দিলো,''আমার প্রতিটা সুর ওদের প্রতিটা টাকায় ঢেকে যায় । এ আমি বিলক্ষণ বুঝতে পারি । কি যে এক প্রশ্ন করলে আমাকে । মনে হচ্ছে এখব আমার ডাক্তার হওয়াই বেশ ছিল । টাকাই এখন জীবনের সুর । বোঝো না তুমি ?'' 
বিলোল শুনে খুব লজ্জা পেলো ।
আমতা আমতা করে অস্ফুট-গলায় বলল তখন,''অমন প্রশ্ন আমার না করাই উচিৎ ছিল,দিদি । ভেরি সরি ।''
তারপর স্টেশনে ট্রেন এলো । কখন যে অমলাদি পাশ থেকে উঠে ট্রেন ধরার জন্য বিদায় নিয়েছে,বিলোল তা বুঝে উঠতে পারেনি । ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই বিলোলের কানে এলো অমলাদির মধুঝয়া কণ্ঠের সেই গান--
'
একা মোর গানের তরী
ভাসিয়েছিলাম নয়ন জলে ।'
বিলোলের দু'চোখের পাতা ভারি হয়ে গেলো তারপরেই ।