জ্যোতিষ
শাস্ত্র বা জ্যোতিষী, তাবিজ, কবচ, মাদুলি, ইত্যাদির ওপর আমার কোনকালে বিশ্বাস বা
আস্থা না থাকলেও, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বছর তিনেক আগে সেই জ্যোতিষ ও তন্ত্র
সম্রাট, গভর্নমেন্ট রেজিষ্টার্ড, শ্রী শ্রী আচার্য্য লোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের কাছে
তাঁর আশ্রমে যেতেই হয়েছিল।
বাল্য
বন্ধু ফাল্গুনী খুব অসুস্থ। পেটের তীব্র যন্ত্রণায় সে মরণাপন্ন। ডাক্তাররাও
একপ্রকার হাল ছেড়ে দেওয়ায় ওর স্ত্রী নন্দিনী একবারে ভেঙ্গে পড়ে আমাকে শেষ চেষ্টা
হিসাবে শাস্ত্রী মহাশয়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিনতি জানায়। তার বিশ্বাস, কিছু
করতে পারলে একমাত্র তিনিই করতে পারবেন। হাতের রেখা দেখারও তাঁর প্রয়োজন হয় না, তিনি
নাকি জন্মের স্থান, সময়, ও হাতের লেখা দেখেই সব বলে দিতে পারেন ও জন্ম, মৃত্যু,
বিবাহ, ব্যর্থ প্রেম, বিবাহে বাধা, দাম্পত্য কলহ, শত্রু দমন, ইত্যাদি সব সমস্যার
সমাধান ও মনোস্কামনা পূর্ণের জন্য অব্যর্থ। এই অবস্থায় আমার বিশ্বাস অবিশ্বাস
মূল্যহীন। তার মানসিক শান্তির জন্য ও মৃতপ্রায় স্বামীর পুনঃজীবনের জন্য আর এক
বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শাস্ত্রী মহাশয়ের কাছে যেতেই হ’ল। তাঁর পারিশ্রমিক ডাক্তারের
পারিশ্রমিকের থেকেও অনেক বেশি। পারিশ্রমিকের পুরো টাকা জমা দিয়ে তাঁর কাছে বসলাম।
শাস্ত্রী
মহাশয় হাতের লেখার নমুনাটি হাতে নিয়ে, নাম, জন্ম তারিখ, জন্ম সময় ও সমস্যাটা ঠিক
কি জানতে চাইলেন। তাঁকে জানালাম আমার বন্ধুটির নাম ফাল্গুনী, সে বড় অসুস্থ, তীব্র
পেটের যন্ত্রণায় সে কাহিল, ডাক্তার
একপ্রকার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। এখন আপনিই শেষ ভরসা।
অনেকক্ষন
ধরে হাতের লেখার নমুনাটি বিভিন্ন ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে তিনি চোখ বুজলেন।
কিছুক্ষণ পরে জলদ গম্ভীর গলায় তিনি জানালেন বন্ধুটির জরায়ুতে গভীর সমস্যা দেখা
দিয়েছে, এই রোগ সারানো ডাক্তারের কর্ম নয়, কারণ এই রোগ কোন ওষুধ বা অস্ত্রোপচারে
সারানো সম্ভব নয়। একমাত্র মা কালীর মন্ত্রপুত বিশালাক্ষী কবজ ধারণই এই রোগমুক্তির
উপায়। দাম বারোশ’ টাকা, সামনের বুধবার পাওয়া যাবে।
বুঝলাম
ফাল্গুনী নামটাই জরায়ু বিভ্রাটের কারণ, তাই আজ সঙ্গে অত টাকা নিয়ে আসি নি, পরের
দিন দিয়ে যাব বলে সঙ্গের বন্ধুটিকে নিয়ে কোনমতে ফিরে আসলাম। নিয়মিত চিকিৎসায়,
বন্ধুটিও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে আগের জীবন ফিরে পেল।
আজ একটি সাহিত্য সভা থেকে একই গাড়িতে
নকুলেশ্বর বাবুর সাথে ফেরার পথে এতদিন পরে লোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের কথা মনে পড়লো।
নকুলেশ্বর বাবুকে সবাই এক কথায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসাবে চেনেন। আজকের মতো প্রায়ই
তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে বই-এ ঠাসা
কাচের আলমারিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সাহিত্য নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে কথা সাহিত্যিক অনিলা দেবীর প্রসঙ্গ এসে
পড়ায়, তিনি তাঁর সেই গম্ভীর গলায় জানালেন অনিলা দেবী অত্যন্ত বলিষ্ঠ লেখিকা। তাঁর
লেখা অনেক বই তিনি পড়েছেন, খুঁজলে বাড়ির আলমারিতে এই বিখ্যাত লেখিকাটির কিছু বই
এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে।