এই বিশাল জনসমুদ্রে বুদবুদের মত
ইতস্ততঃ কিছুটা যেন উদ্দেশ্য হীন অমিতাভ। আসলে রঞ্জাবতী ছাড়া সে দিশাহীন ও
উদ্দেশ্যহীন। বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। অজ্ঞাত কারনে ফোন সুইচড
অফফ। গত দুবছর ধরে সাতাশ তারিখে এটাই তার রুটিন। বিয়ে হয়ে চলে যাবার আগে অবধি
এবং তার পরে ও। মোট সাতবার এই বই মেলায় এসেছে। সেই ম্যাপ দেখে শুরু করা স্টল
সিলেকশন সব ওই রঞ্জাই করত। অমিতাভ শুধু ওর পাশে পাশে ঘুরত আর ও যা বলত তাতেই হ্যাঁ
হ্যাঁ করে মাথা নেড়ে সঙ্গ দিত। আসলে ওর কতৃত্বটা বেশ উপভোগ করত। টুকটাক বই দেখার
পাশাপাশি ভিড়ের ভিতর ওর হাঁটা, ওর তাকান, ওর বুকের অগোছালো ওড়না, কিছুক্ষণ পরপর তা যথাস্থানে রাখা,স্টলের ভিতর ঢুকে বই দেখা,হাতে বই নিয়ে পাতা উল্টান, দোকানের কর্মচারী সাথে কথা,বই দেখার সময় কপালের পাশ বেয়ে
গড়িয়ে আসা চূর্ণ চুল এ সবই আসলে দেখত সে। প্রতিক্ষিত বই হঠাৎ ওর নজরে পড়লে
মুখের আভা পাল্টে যাওয়া,,ওর
ফিসফ্রাই তে কাসুন্দি মাখিয়ে প্রথম কামড় বসানো। ধোঁয়া ওঠা কফি ফুঁ দিয়ে একটু
একটু করে খাওয়া।বই মেলার বাইরে মাটিতে বসা স্টল গুলোর সামনে হুমড়ি খেয়ে মণি
মানিক্য খোঁজা,
মনের মত
জিনিস পেলে খুশিতে জ্বলজ্বলে চোখ। সে গুলো ব্যাগ শুদ্ধু ওর পিছন পিছন বয়ে বেড়ানো
ছিল অমিতাভর কাজ। সব থেকে ভাল লাগত ওর বই দেখার সময় ওর ঘাড়ের ওপর দিয়ে উঁকি
মেরে দেখতে চাওয়া বা পাশে দাঁড়িয়ে ওর মনযোগী মনের আর অমনোযোগী শরীরের স্পর্শ
নেওয়া। ওর শরীরে মেশান সুগন্ধীর গন্ধ খুব চেনা তার।
রঞ্জা বই য়ে মগ্ন আর অমিতাভ
রঞ্জায়। কোন স্টলে কি ভাল বই দেখেছে, কোন সেলিব্রিটিকে দেখেছে, সে কি করছিল তার ব্যাখ্যা দিত রঞ্জা। তার
নানান প্রশ্নের সামনে বেকুব বনে যাওয়া আর তাতে ওর তাচ্ছিল্য র হাসি হেসে লুটিয়ে
পড়া দেখত অমিতাভ হাসি মুখে। আসলে সবাই ওখানে বই দেখতে যেত আর সে যেত রঞ্জাকে
দেখতে। তবে কি সে কোনদিন রঞ্জা কে আগে দেখে নি?দেখেছে। বহুবার দেখেছে । কিন্তু বইযের পটভূমিতে ওকে দেখা টা
অদ্ভুত আলাদা। ও আনন্দ তেই আসবে ভেবে অমিতাভ জান লড়িয়ে আনন্দর দেওয়ালে পিঠ
ঠেকিয়েে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ ভিড়ের ভিতর রঞ্জা হেঁটে আসছে। ওড়না আর চুল ঠিক করতে
করতে । একরাশ উদ্বেগ নিয়ে গলা ছেড়ে ডাকতে যেতেই থমকে গেছিল সে।রঞ্জা নয় অন্য
কোন মেয়ে । এ বারেও কি দেখা হল না তাদের? স্মৃতি টুকু কাঁধের ঝোলায় নিয়ে পা ঘষতে ঘষতে এসে পড়ল
আনন্দর স্টলের সামনে, অমিতাভ
এ বার ও----- হরেক
রকম গত কয়েক বছরের স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাজির হল চোখের সামনে। চলচ্চিত্র মত
চলতে শুরু করল অমিতাভ কে পিছনে ফেলে রঞ্জাবতীর হাত ধরে....