---‘ হুটহাট আবদার করলে হয় ! টুটুকে
কার কাছে রেখে নীচে নামি বলত ? এমনিতেই
ছিকেই ঝুলছি সারাক্ষণ ; তারওপর
ভোর থেকে লিফট ঘাওড়ামি শুরু করেছে ! চোদ্দতলা
ঠ্যেঙ্গিয়ে দিনে পাঁচ ওক্ত তোমার সাথে মিট করা সম্ভব না !’ ফোনের ওপার থেকে পুরুষকণ্ঠ মনে হল যেন নিরুৎসাহিত হতে হতে ক্রমশ জালাধানের
বাইরে বেরিয়ে গেল ।
সন্ধ্যা
ছয়টার কাছাকাছি দারুণ একটা চেনা ছন্দে অস্থির হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেয় টুটু ! সপ্তাহের
বিশেষ একটা দিন , বিশেষ
একটি অদৃশ্য উড়ানের ডানা যেন তাঁর সর্বাঙ্গে স্নেহচুম্বনের ছায়ার মত তাকে তোলপাড়
করে তোলে ! টুটু হাত বাড়িয়ে তার মা’কে ছুঁতে চায় ! ---- মা যেন তার কাছে দূরগ্রহের ডানাওয়ালা বন্দিনী দেবদত্তা !
সকাল-সন্ধ্যা ইয়ার
উড়ানের শব্দে ঝুলবারান্দার কাছে ছুটে ছুটে আসে টুটু । ওকে আটকানো, আর গ্রিলে
বসা পাখিদের তাড়ানো , তাদের উড়িয়ে দেওয়া, ‘ এই তোকে উড়িয়ে দিলাম যা !” --- এই হল সরস্বতীর সারাবেলার কাজ ! সরস্বতী এ শহরের সবচেয়ে উঁচু ফ্লাটের আনাড়ি আয়া ! ওর মনের গতি প্রকৃতি এমন , যেন গ্রাম
থেকে তুলে আনা একখামচা ত্যাঁদড় এঁটেল মাটির দলা ! শত সাবান
শ্যাম্পুতেও তনু ওর ভেতরের আঠালো ভাবখানা কাটাতে পারে না কিছুতেই ; এমনই একরোখা মনোভাব ওর ! সবসময় শূন্যে ঝুলতে ঝুলতে ওরও কেমন যেন
মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে ; তাই তো ওর মন পড়ে থাকে গেটম্যান রীতেশের কাছে ! দিনে দু’একবার ফিডিং বোতল , খেলনা গাড়ি, টয় ট্রেন
টুটু ছুঁড়ে ফেলে দিলে সরস্বতী খুশিই হয় ! তখন
সরস্বতী হাসিমুখে গড়গড়িয়ে সিঁড়ি ভাঙে । ওর কাছে লিফট তো আসলে বাবুদের সাথে বিলিতি বিলাসিতায় পাংগা নেবার
সামান্য একটা যন্ত্র মাত্র !
উইকএণ্ডে
তনু ঘরে ফেরে । অরিন্দমের ওন ওয়ার্ল্ড হাফইয়ারলি । অনুঢা সরস্বতী ওদের দাম্পত্য
জীবনের মাইক্রোওভেন সম্পর্ক দ্যাখে আর শুনিয়ে শুনিয়ে তার দেশ গাঁয়ের গল্প করে ।
একনিষ্ঠ শ্রোতা বলতে বছর দেড়েকের টুটু ,----‘ আমাদের মা কাকিরা দাওয়ার মেঝেয় গড়ে গড়ে বিছেন কাঁথা ফ্যালে ; আর বাপ খুড়োরা ছিলুম টেনে চোখ লাল করে কাছে এসে আদর করে ডাকে,--‘ কোই শোনছো ---! দূর ! দূর ! আদর নেই
সোহাগ নেই ; দু’দণ্ড একত্র বসে দুটো সুখ দুঃখের কথা নেই ! বোম্বেটো শহরে কী বিচ্ছিরি রকমের উড়াউড়ি সংসার ! আমি আগে জানলে রীতেশের কথায় দেশ ভুঁইয়ের মাটি থেকে কক্ষনও
পা কাড়াতুম নাকি !’ তনু
ইণ্ডিয়া এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেস , আর অরিন্দম সিঙ্গাপুর এয়ার লাইনসের পাইলট । পাখিরা খড়কুটোর
খোঁজে মাটিতে ড্রপ করে , আর ওরা
তার ঠিক বিপরীত । ওরা আসে খড়কুটো রাখতে । সংগ্রামী জীবনের সঞ্চয় রাখতে । হাওয়াই
মুলুকের এতবড় ফ্লাটখানিতে ছোট্ট টুটু সরস্বতী ছাড়া , সবই যেন নিষ্প্রাণ জঞ্জাল --- জড়ভারে
ভারাক্রান্ত আসবাব আর প্রসাধন !
---‘ তুই টুটুকে একা রেখে এতবার ল্যাণ্ড করিস ক্যান সরস্বতী ?’
---“ কে বলেছে ওই লিফটম্যান ছোটেলাল ?’
---‘ তুই কি জানিস , তোর পেছনে কতগুলো চোখ লাগান আছে !’
---‘ তবে ওই সিসিফুটেজের কাছেই জিজ্ঞেস কর না কেন ! ওর থেকেই তো আপডেট নিতে পার বৌদিমনি ! টুটুর খেলনাগুলো এখনও অব্দি মাটিতেই পড়ছে যে ! যেদিন থেকে ও গুলি উপরের---!”
---‘ জাস্ট শাট আপ ! তুই তো মারাত্মক উদ্ধত মেয়ে রে ! সরস্বতী তুই কি জানিস না , ও এখন হাঁটতে শিখছে ! একপা দু’পা করে ব্যালকনির কাছে সরে এলে কতবড় সব্বনাশ হবে তুই একবার ভেবে দেখেছিস ?”
---‘ কি জানি বাপু ! গাঁয়ের তালগাছের টোক্কায় উল্টানো বাসা দেখে দেখে এই পন্ত বয়েস আমার ; কোনদিন তো দেখিনি ওখান থেকে একটা পাখির ছা’ ঢুপ করে মাটিতে পড়েছে কোনকালে ! বরং দেখেছি , মা পাখি অনুমতি দেওয়ার আগেই , ছানাগুলো দিব্বি ক্যামন ফুরফুর করে ইদিক সিদিক উড়ে পালায় !”
---“ কে বলেছে ওই লিফটম্যান ছোটেলাল ?’
---‘ তুই কি জানিস , তোর পেছনে কতগুলো চোখ লাগান আছে !’
---‘ তবে ওই সিসিফুটেজের কাছেই জিজ্ঞেস কর না কেন ! ওর থেকেই তো আপডেট নিতে পার বৌদিমনি ! টুটুর খেলনাগুলো এখনও অব্দি মাটিতেই পড়ছে যে ! যেদিন থেকে ও গুলি উপরের---!”
---‘ জাস্ট শাট আপ ! তুই তো মারাত্মক উদ্ধত মেয়ে রে ! সরস্বতী তুই কি জানিস না , ও এখন হাঁটতে শিখছে ! একপা দু’পা করে ব্যালকনির কাছে সরে এলে কতবড় সব্বনাশ হবে তুই একবার ভেবে দেখেছিস ?”
---‘ কি জানি বাপু ! গাঁয়ের তালগাছের টোক্কায় উল্টানো বাসা দেখে দেখে এই পন্ত বয়েস আমার ; কোনদিন তো দেখিনি ওখান থেকে একটা পাখির ছা’ ঢুপ করে মাটিতে পড়েছে কোনকালে ! বরং দেখেছি , মা পাখি অনুমতি দেওয়ার আগেই , ছানাগুলো দিব্বি ক্যামন ফুরফুর করে ইদিক সিদিক উড়ে পালায় !”
গেল মাসে
একটা লক সিস্টেম চেইন কিনে এনেছে তনু । পৃথিবীর সব মায়েরা ইচ্ছা করলেই যে যশোদা
হতে পারে না , এটা এখন মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারে তনু ! তবু , তালগাছ দ্যাখা সরস্বতীকে দিয়ে বিশ্বাস নেই ! আজকাল
ফ্লাইট থাকলেই অস্থির হয়ে ওঠে তনুর চোখদুটো ; সরস্বতী
যেন রোজই শূন্যে উড়িয়ে দিচ্ছে তার ছোট্ট টুটুকে !
ইদানীং
দিল্লিতে দারুণ কুয়াশা ! ল্যাণ্ডিং , টেক অফেও দারুণ
বিভ্রাট দ্যাখা দিচ্ছে ! স্যাটেলাইট রিপোর্টে বারবার উঠে
আসছে শহরের ভ্রাম্যমান এক বিশেষ প্রজাতির দুঃসাহসী পাখির কথা ,---যারা
উড়ানের শব্দ শোনামাত্র অস্থির হয়ে ওঠে ! আর সেই শব্দ অনুসরণ করে রকেট গতিতে ছুটে চলে উইং’এর আগে আগে ! যতক্ষণ
পর্যন্ত ওদের ডানা প্রপেলারে না জড়াচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুতেই পথ ছাড়বে না ; এমন বেপরোয়া ওরা ! এখন
শূন্যে ভাসলেই তনুর ভেতরটা মাঝে মাঝে দোমড়ানো অভ্রের মত দলা হয়ে আসে ! তনুর মনে হয় , এসব ইনোসেন্ট পাখিগুলো নিশ্চই ওই উদ্ধত সরস্বতীর হাতগলে
প্রপেলারের সামানে উড়ে আসছে !