গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

পাপড়ি গুহ নিয়োগী

সম্পর্ক
    

সুদীপ্ত আমার খুব ছোটবেলার বন্ধু। এত বছর বাদে গ্রামের বাড়িতে এলাম, আর ওর কাছে যাব না, তা কি হয়! ও ফোনে বলে দিয়েছে, “এসেই কিন্তু যাই যাই করবি না, একেবারে দুপুরের খাওয়া খেয়ে বিশ্রাম করে বিকেলে যাবি। সে জন্যই তো রবিবার আসতে বললাম।
মাসিমা খুব অনুনয় করে বললেন, “তুই আমার একটা কাজ করে দিবি, মা?”  মাসিমার চোখে জল। বললেন, তোর বন্ধুকে এবার একটা বিয়ে করতে বল না। ... ওকে তুই একটু বোঝা। এখনো সময় আছে। একটা বউ বাড়িতে থাকবে না? আমি আর কদিন, একা একটা গোটা জীবন কাটানো যায় ? ছেলেটা এভাবে বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়াবে সারাদিন!
আমি সুদীপ্তর ঘরে গেলাম। ওকে বললাম, “কি রে, তুই বিয়ে টিয়ে করবি না?ও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর একটা চামড়ার ব্যাগ নিয়ে মেঝেতে উপুড় করে ছড়িয়ে দিল ভেতরের সব জিনিস। দেখলাম, কতগুলো ভাঙা কাঁচের চুড়ি  লাল, নীল নানা রঙের, কয়েকটা পুতুল।একে একে দেখলাম, ব্যবহার করা কলম, পুরোন বই -- আরে ওগুলো তো সব আমারই। আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম।
সুদীপ্ত মেঝের ওপর স্থির দাঁড়িয়ে আছে। আমিও দাঁড়িয়ে রইলাম বাক্যহীন। অনেক্ষণ বাদে বললাম, “আমাকে কোনদিন বলিস নি কেন, সুদীপ্ত?” ও কিছু বললো না। বাড়ি ফেরার পথে অন্যমনষ্কভাবে ভাবতে লাগলাম, কিছু কিছু সম্পর্ক নিজের অজান্তেই কিভাবে যেন কত বড় হয়ে ওঠে!