গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

রমলা বৌদি 

রমলা বৌদি আমাদের পাশের বাড়িতেই থাকেন। সংসার বলতে শশুর  , শাশুডী এক ননদ । রমলা বৌদির   স্বামী আর এক মেয়ে  ৭ বছরের । বৌদির স্বামী সরকারী চাকরি করেন ।   মাস-গেলে ভালো মাইনে পান । পে কমিশনের দয়ায় ঘরের আসবাব পত্র ভালই হয়েছে । এরিয়ারের টাকা পেয়ে বৌদির স্বামী রতন দা,আমরা রতন দা বলেই ডাকি একটা নতুন স্কুটারও কেনেন । 
এই স্কুটার কেনার পর বৌদির হয়েছে যত রাগ । রতন  দা ফুর্তি করতে স্কুটার নিয়ে শনি রবিবার ছুটির দিনে বেড়াতে যেতে চান কিন্তু বৌদির চিন্তা মেয়ের বিয়ে নিয়ে ।  বলেন একটু একটু করে টাকা রেখে মেয়েটার জন্য কিছু সোনার গয়না গড়িয়ে রাখতে । টিভি থেকে দেখে ওই স্কিমের কথা বলেন রতন দাকে । 
রতন দা ও সবের ধার ধারেন না । বলেন,“কি হবে,ঘরে চোর ঢোকাবে ?”
‘হ্যাঁ যাদের ঘরে সোনা আছে তাদের ঘরে সব চোর ঢুকছে  ! আসলে দায়িত্ব জ্ঞান কিছু নেই তোমার ! মেয়েটা যে  বড হচ্ছে খেয়াল আছে ? আমার হয়েছে যত জ্বালা’। বৌদির গজ গজানি শুরু হয়। 
রতন দা তাস খেলতে বেরুন হাতে তাসের মুঠো নিয়ে । উনিও গজ গজ করেন,  “ঘরে থাকার উপায় নেই , আমার কোন স্বাধীনতা নেই কি ভাবে ? শালার নিকুচি করেছে । কৌপিন  পরে হিমালয়ে চলে যাব । তখন বুঝবে ঠ্যালা"   এই বলে রতন দা তাস খেলতে বেরিয়ে পড়েন হাতে তাসের প্যাকেট নিয়ে । 
চা খেয়ে যাও
চুলোয় যাগ তোমার চা !
রতন দার মা বলেন ও বৌমা ছেলেটা যে না খেয়ে গেল!সব সময় পুরুষ মানুষকে ওরকম বললে হয় !
রমলা বৌদি জানেন রতন দার রাগ শিবের রাগের মত । পার্বতী কে না দেখলে ভোলে বাবা যেমন  তাণ্ডব  নৃত্য করেন ঠিক সেইরকম  বৌ দিকে না দেখলে তার ভোলে বাবা হা হুতাশ করেন । 
মেয়েটা যে দিন দিন বড হচ্ছে । তার চিন্তায়  বৌদির  ঘুম হয় না । বৌদিকেও বলিহারি ! সাত বছরের মেয়ের জন্য চিন্তায় ঘুম নেই ।
রাত ১১ টায় রতন দা ফেরেন । এসেই মাকে বলেন খেতে দিতে ।
মা ,  রুটি তরকারি ভাজা এক বাটি গরম দুধ এগিয়ে দেন । রতন দা খেয়ে সটান ঘরে ঢোকেন । তখন বৌদির মধ্য রাত্রি । হবে নাই বা কেন সেই ভোর থেকে উঠে সংসারের সমস্ত কাজ করেন  বৌদি।  ঝি রাখেন না । ঝিয়ের কাজ অপছন্দ বলে ।
রতন দা সেই সকাল ৯ টায় ভাত মাছের ঝোল ভাজা চাটনি পোস্ত সব একেবারে রুটিন বাঁধার মতন খেয়ে যান । একটু এদিক ওদিক হলে রক্ষে নেই বৌদির । গঞ্জনা শুনতে  হয় কি রেঁধেছ ? এসব মানুষে খায় ?”
- ভালো না লাগলে রাঁধুনি রাখ, আমায় ক্ষান্ত দাও । মরণ আমার !
- বাডিতে ত ঝি ঢোকাবে না, কি করে সব পারবে শুনি ?
- হ্যাঁ বাডিতে নারায়ণ আছেন , আমি অনা-ছিষ্টি করি আরকি ?  পাপ আমার হবে তোমার কি
ওঃ কি সেকেলেরা বাবা । মুখে পান ঠুসে রতন দা বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে ।
সেই বিকাশ ভবনে পৌঁছে  কাজে লেগে যান । কাজ বলতে হাজির হওয়াটাই বিরাট কাজ । 
রমলা বৌদি টিভি তে দেখে জানেন হাজার টাকা করে মাসে মাসে সোনার দোকানে জমা দিলে বার মাসে যা হয় তাতে এক মাসের টাকা দোকানে বেশি দেয় অর্থাৎ ১৩ হাজার টাকা দেয় ।  গায়েই নাকি লাগে না । সেই কথাটাই রতন দা কে বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘরে এলেই ওই এক কথা । 
 রতন দা বলেন," তুমি ওই সব ফন্দিবাজি বুঝবে না ! ওরা তোমার আমার টাকায় ব্যবসা করবে আর দেওয়ার সময় কাঁচা কলা দেবে । তুমি যখন কিনতে জাবে সেই সময়ে সোনার দাম যা থাকবে সেটা দেবে ওরা ? বোকারা ওই ফাঁদে পা দেয় । আমার টাকা সস্তা নয়"।  
তোমার স্কুটারে তেল ভরার সময় টাকা টা সস্তা নয় । মেয়টা কি শুধু আমার ?
বন্ধ কর তো তোমার লেকচার । অনেক শুনেছি এবার কুরুক্ষেত্র হবে বলে রাখলাম আমার স্কুটার নিয়ে কথা বললে । আমি নিজের টাকায় কিনেছি তোমার বাবা কি দিয়েছেন ওটা ?
খবরদার আমার বাবা কে নিয়ে টানবেনা বলছি ।  কেন আমার বাবা কি দোষ করেছেন যে ওনাকে টানছো ! ভাল হবে না বলছি । বলে ফুঁপিয়ে কাঁদেন । এতো বড সংসারের সমস্ত কাজ করব তার ওপর গঞ্জনা । আমার আর ভাল লাগেনা। আমি গলায় দড়ি দেব বলে রাখলাম ।
ওঃ গলায় দড়ি দেবে ? বলি অত বড লাশ দড়ি সামলাবে কি করে ? ছিঁড়ে যাবে না ! মেয়েকে ছেড়ে গেলে ঘরে ভূত হয়ে ঘুরবে না !! আমায় তখন ওঝা ডাকতে হবে । 
মা ও ঘর থেকে চিৎকার করেন ‘ওরে তোরা থামবি । পাড়া পড়শি চলে আসবে তোদের ঝগড়া শুনে’ ।
রাতে কি হল কি জানি সত্যি রমলা বৌদি নাকি গলায় দড়ি দিয়েছিলেন । রতন দা শুয়ে পডেছিলেন । সেই সময় সিলিং ফ্যানে কাপডের গিঁট দিয়ে ঝুলে পডেন । রতন দার কথা কিন্তু ঠিক ফলে । দড়াম করে একটা  শব্দ হয় ঘরে । রতন দা হুড-মুড করে উঠে দেখেন গলায় ফাঁস নিয়ে সিলিং ফ্যান শুদ্ধ রমলাদি তলায় গডা গডি খাচ্ছেন আর কাঁদছেন ।
রতন দা থর থর করে কাঁপছেন । ও ঘর থেকে রতন দার মা এসে গলার ফাঁস খোলেন ।
আর রতন দা তাস খেলেন না । মেয়ের গয়না গড়িয়েছেন তবে মাসে মাসে নয় নিজের টাকা জমিয়ে । স্কুটার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন "রতন একটি সুবোধ বালক
রমলাদি হাসি মুখে সংসার করছেন । আর ঝগড়া নেই।