উড়তে পারে হিয়া
অতগুলো প্লেট নিয়ে কিকরে এলো ছেলেটা ? দক্ষিণের জানালা
জুড়ে একমুখ হাসি ! সেই ফোলা ফোলা বাইসেপ – ট্রাইসেপ ! চাইনিজ খাবারের গন্ধে ম-ম
করছে সারা ঘর । হিয়ার চারপাশটা কেমন স্বপ্নময় হয়ে এল । চাইনিজের গন্ধ উথাল-পাথাল
করতে লাগলো । চারপাশটা দুলতে দুলতে --- আবছা হতে হতে --- কখন যেন সব অন্ধকার হয়ে
গেল । শুধু ছেলেটার কথা কটা কানে – মনে – সমস্ত শরীরে বিঁধতে বিঁধতে আচ্ছন্ন করে
দিলো । গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল হিয়া ।
হিয়ার দক্ষিণের জানালাটা খোলাই থাকে । বিছানায় বসে ওই
একটাই ক্যামেরা , যা দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখা যায় । এ বাড়ীর গেট , সামনের সদাব্যস্ত
পথ , রিক্সা – অটো , ফুটপাথে চলমান নানান অভিব্যক্তির পথিক । ওই জানালাটাই হিয়ার
সবচেয়ে বড় বন্ধু । আরেক বন্ধু নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে জানালা থেকে সাত আট গজ দূরে ---
ওর হুইল চেয়ার । ডাক্তার কাকু বলেছেন --- বাইরের খাবার একদম চলবে না । তাই জানালার
ওপাশে ছেলেটা যখন চাউমিন – চিলিচিকেন বানায়, চোখ ফিরিয়ে নেয় হিয়া । মনোনিবেশ করে
সঞ্চয়িতায় --- রবীন্দ্রনাথই পারেন সব
ভুলিয়ে দিতে ।
হিয়ার বয়স উনিশ ! নিউরো রুগী ! পড়াশুনা লাটে উঠেছে
চিকিৎসার অত্যাচারে । ওর সঙ্গী শুধু দক্ষিণের জানালা , রবীন্দ্রনাথ আর ওই অভিশপ্ত
হুইল চেয়ারটা ।
পরদিন সকালে, রোজকার মতো হুইল চেয়ারে ব্রেকফাস্ট টেবিলে
সকলের মতো হিয়াও হাজির । খবরের কাগজ মুখে নিয়ে বাবা শোনাচ্ছিলেন আজকের তাজা খবর
--- “নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী সন্দেহে ধরা পড়লো এক চাইনিজ ফাস্টফুড
বিক্রেতা । ছবি দেখেই বাবা বলল --- “ আরে ! হাসি হাসি মুখ ! সেই ফোলা ফোলা শরীর ! হ্যাঁ
! এতো আমাদেরই গেটের পাশের সেই --- সেই হকারটা !”
হিয়ার সকালটা , বলা নেই কওয়া নেই, এক আচম্বিত সূর্যগ্রহণে
ছেয়ে ফেললো । কাল রাতের অন্ধকারটা দেখতে দেখতে ঝুপ করে নেমে এল চোখের সামনে ।
ছেলেটার কথাগুলো ফ্ল্যাশব্যাকে বেশ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল --- “ তুই হাইত তে পারিস
লাই ! তুকে ডানা লাগাএন উরহাইন লিয়ে যাব । কিরে ! উড়তে পারবি , হিয়া , হামার সঙ্গে
!!!”