গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৩

জয় চক্রবর্তী

উড়তে পারে হিয়া
অতগুলো প্লেট নিয়ে কিকরে এলো ছেলেটা ? দক্ষিণের জানালা জুড়ে একমুখ হাসি ! সেই ফোলা ফোলা বাইসেপ – ট্রাইসেপ ! চাইনিজ খাবারের গন্ধে ম-ম করছে সারা ঘর । হিয়ার চারপাশটা কেমন স্বপ্নময় হয়ে এল । চাইনিজের গন্ধ উথাল-পাথাল করতে লাগলো । চারপাশটা দুলতে দুলতে --- আবছা হতে হতে --- কখন যেন সব অন্ধকার হয়ে গেল । শুধু ছেলেটার কথা কটা কানে – মনে – সমস্ত শরীরে বিঁধতে বিঁধতে আচ্ছন্ন করে দিলো । গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল হিয়া ।

হিয়ার দক্ষিণের জানালাটা খোলাই থাকে । বিছানায় বসে ওই একটাই ক্যামেরা , যা দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখা যায় । এ বাড়ীর গেট , সামনের সদাব্যস্ত পথ , রিক্সা – অটো , ফুটপাথে চলমান নানান অভিব্যক্তির পথিক । ওই জানালাটাই হিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু । আরেক বন্ধু নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে জানালা থেকে সাত আট গজ দূরে --- ওর হুইল চেয়ার । ডাক্তার কাকু বলেছেন --- বাইরের খাবার একদম চলবে না । তাই জানালার ওপাশে ছেলেটা যখন চাউমিন – চিলিচিকেন বানায়, চোখ ফিরিয়ে নেয় হিয়া । মনোনিবেশ করে সঞ্চয়িতায়  --- রবীন্দ্রনাথই পারেন সব ভুলিয়ে দিতে ।

হিয়ার বয়স উনিশ ! নিউরো রুগী ! পড়াশুনা লাটে উঠেছে চিকিৎসার অত্যাচারে । ওর সঙ্গী শুধু দক্ষিণের জানালা , রবীন্দ্রনাথ আর ওই অভিশপ্ত হুইল চেয়ারটা ।

পরদিন সকালে, রোজকার মতো হুইল চেয়ারে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সকলের মতো হিয়াও হাজির । খবরের কাগজ মুখে নিয়ে বাবা শোনাচ্ছিলেন আজকের তাজা খবর --- “নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী সন্দেহে ধরা পড়লো এক চাইনিজ ফাস্টফুড বিক্রেতা । ছবি দেখেই বাবা বলল --- “ আরে ! হাসি হাসি মুখ ! সেই ফোলা ফোলা শরীর ! হ্যাঁ ! এতো আমাদেরই গেটের পাশের সেই --- সেই হকারটা !”

হিয়ার সকালটা , বলা নেই কওয়া নেই, এক আচম্বিত সূর্যগ্রহণে ছেয়ে ফেললো । কাল রাতের অন্ধকারটা দেখতে দেখতে ঝুপ করে নেমে এল চোখের সামনে । ছেলেটার কথাগুলো ফ্ল্যাশব্যাকে বেশ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল --- “ তুই হাইত তে পারিস লাই ! তুকে ডানা লাগাএন উরহাইন লিয়ে যাব । কিরে ! উড়তে পারবি , হিয়া , হামার সঙ্গে !!!”