অথ বৃন্দাবন কথা
হঠাৎ বাঁশীর সুরে চমকে ওঠে রাধা । ঘরের সব কাজ ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মোবাইলটার ওপর । বাঁশীর সুর স্তব্ধ
। রাধা ঠোঁট বাঁকায় । ঠিক যা ভেবেছিল !
কানুর মিসড কল ! মানে যমুনা পারের ডাক । রাধা কোন রকমে আলনা থেকে চুড়িদারটা গায়ে
গলাতে না গলাতেই কানুর খিলখিল হাসি । আবার চমক -
ধ্যাত ! কানুর এস এম এস ‘ওয়েটিং ফর ইউ অ্যাট কদমতলা’ । রাধা ওড়নাটা বুকের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত বেরোতে গিয়েও
থমকে দাঁড়ায় । একটা পলিপ্যাকে দুটো দু’লিটারের খালি কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল নিতে
ভোলে না । আসলে এসময়ে বৃন্দাবনে পানীয় জলের একটু ক্রাইসিস চলছে ।
কদম গাছের তলায় ঝাঁ চকচকে বাইকে আলো করে বসে আছে কানু ।
সঙ্গে জনা তিন চার বন্ধু বান্ধব । জিন্স – হলুদ টিশার্ট – সানগ্লাসে কানু সত্যিই
অনবদ্য । ও বন্ধুদের ফ্লুট বাজিয়ে শোনাচ্ছিল । বন্ধুরাও মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ।
আসলে ফ্লুট টা কানুর প্যাশন ! ওটা ও কখনও হাতছাড়া করে না । তাইতো রাধা রেকর্ড করে
ওর রিংটোন করে রেখেছে । ওর হাসি করেছে মেসেজ টোন ।
দূর থেকে রাধার ক্যাট ওয়াক চোখে পড়া মাত্র কানুর সুর গেল
কেটে --- ফ্যালফ্যাল করে সামনে চেয়ে রইল । বন্ধুরা সিচুয়েশন আন্দাজ করে যে যেদিকে
পারল ধাঁ --- । রাধা মুচকি হেসে বাইকের পেছনে বসলো । কানুর ঘোর কাটতেই বিদ্যুৎ
গতিতে যমুনার তীরে । এসময় যমুনার তীরে প্রচুর টুরিস্টের ভিড় । যমুনায় বোটিং – এর ব্যবস্থা
আছে --- ঘন্টা হিসেবে । কানু ঘাড় ঘুরিয়ে হেলমেটটা খুলে জিজ্ঞাসা করলো --- “বোটিং
?” রাধা কিছু না বলে শুধু ওর ডান কাঁধে রাখা আঙ্গুলগুলো দিয়ে কানুর ডান কানটা মলে
দিলো । কানু সম্মতি পেয়েই বাইক পারকিং এর দিকে এগিয়ে গেলো । ফেরার পথে রাধার
আঙ্গুলগুলো আর কানুর দান কাঁধে নয় --- ওর কোমর জড়িয়ে ছিল। যমুনা থেকে কদমতলা
---এতটুকু দূরত্বকে শতেক যোজন বানিয়ে দুজনেই কেন যেন একদম চুপচাপ। “কানুটা ভারি
নির্লজ্জ !” রাধার নীচের ঠোঁটটা জ্বালা করছিলো । “কানুটা ভারি হাভাতে !” সবটুকু
এখনই চাই ।
রাত্রে সবাইকে খাইয়ে নিজেও দুটি মুখে দিয়ে সবে রাধা
বিছানার দিকে---। কানুর খিলখিল হাসি! উফ ! আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে রাধা বিছানায়। কানুর এস
এম এস ---“আমার আর্জেন্ট টান্সফার অর্ডার এসেছে ! কাল সকালেই মথুরা ব্রাঞ্চে রিপোর্ট করতে হবে, খুব
ভোরে বেরিয়ে যাবো , ভাল থেকো” ।
কাল বোটিং এর সময়, অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দুটো খালি বোতল সমেত
পলিপ্যাকটা যমুনায় ভেসে গিয়েছিল । এখন ওটা ভাসতে ভাসতে কতদূর চলে গেছে কে জানে ।
যেহেতু খালি --- ডুববে না কোনদিন । ভাসবে অনন্তকাল -- যুগ যুগ পার হয়ে যাবে ।
“রাধ” ধাতু আরাধনায় বিরত হবেনা কোনদিন ।