অবাক
প্রজাপতি
প্রজাপতি
উড়ে এলেই চোখ খুলে যায় সায়ন্তনীর। প্রজাপতির ডানায় কেমন মেরুন
রঙের পুঁথির গোল গোল দাগ।কিন্তু মানুষ কি করে প্রজাপতি হবে?মার
কথাগুলো পিং পং বলের মত নাচতে থাকে।তারপর ধীরে ধীরে শান্ত হয়। সায়ন্তনী চেয়ে
দেখে।কতো আগুন কতো ঝড় ঝাপটার মাঝেও প্রজাপতিরা ডানা ঝাপটায়।প্রশান্তির বৃষ্টি
নামে।জীবন তো রোদ বৃষ্টির বালুকা বেলা।কখনও রোদ তো কখনও বৃষ্টি।কারও কারও ভাগ্যে
আবার রোদের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে মুখ জ্বলে যায়।সেই জ্বলন প্রবেশ করে গভীর
অন্তরে।রাগি সূর্য স্পর্শ করে সায়ন্তনীর ত্বক।মিশ মিশে কালো চামড়া দিয়ে গড়িয়ে পড়ে
ঘাম।ঘাম না রক্ত?কিছুই
বোঝে না রকের রকবাজেরা।কেউ
কেউ তো বলেই বসে---"সামনেই কালি পূজা । এবার আর কালি ঠাকুর ক্লাবে না এনে সায়ন্তনীকেই ভাড়া
করি চল । একেবারে
জ্যান্ত কালি । চ্যানেলে
চ্যানেলে বলবে লাইভ কালি । লাইভ
কালির সঙ্গে কথা
। বিনদাস টি আর পি" । কথাগুলো
বুলেটের মতো ছুটে আসে। হৃৎপিণ্ডের এক ইঞ্চি দূরত্বে এসেই থমকে যায়।এক ঝাঁক
প্রজাপতি প্রহরীর মতোই পাপড়ি মেলে । বাই
বাই বুলেট । অসম্মানের
বুলেট ফিরে যায় রকবাজ জেন এক্সদের কাছে । মুচকি
হাসে সায়ন্তনী
। তার কালো পুরু ঠোঁটের অদৃশ্য শব্দগুলি বলে
---"তোমাদের অসম্মান আমি গ্রহণ করলাম না । তোমাদের
অসম্মান তোমাদেরই রইল" । স্মৃতির পাখা মেলে প্রজাপতি ।
স্মৃতির
শিয়রে কতো মুখ । অলকেশ,অনিন্দ্য,অরিত্র
। অ-এর অনুপ্রাস । অলকেশ বলেছিল ---"যারা মেয়েদের বুক দেখে তারা মুখ দেখতে পায় না" । সেই
অলকেশই আঁধারে আলিঙ্গনে সায়ন্তনীর বুকের আকৃতি বুঝেই আঁধারেই মিলিয়েছিল । কথা
রাখেনি । অনিন্দ্য
বলেছিল ---"কালো জগতের আলো" । সেই অনিন্দ্যও রাতের অন্ধকারেই
বুঝেছিল শরীরের সরগম । আর অরিত্র ! সেই
আঁধারের আয়োজনে নিপুণ আঙুলেই বুলিয়েছিল নাভির
চারপাশ । অঝোরে
নেমেছিল বৃষ্টি
। বলেছিল অরিত্র ---"জানো তো সায়ন্তনী সব কিছু পোড়ে । পোড়ে
না এই নাভিপদ্ম
। আর পোড়ে না স্মৃতি"। স্মৃতি
স্মৃতি আর স্মৃতি । স্মৃতি
কেন ভিড় করে ? কেনই
বা সবাই রাতের অন্ধকারে আমায় শিখিয়েছিল বাৎসায়নের মূল মন্ত্র ? দিনের আলোয় কেনই বা তারা মুখ
ফেরাল?পুরুষের
কাছে নারী শুধুই আমিষাশী?
শুধুই প্রবৃত্তির নিবৃত্তি ? নারীবাদীরা কতো আন্দোলন করে । কতো
কথা বলে । পুরুষ
থাকে পুরুষের জায়গায় । কিন্তু
নারী কেন নিজেকে সাজিয়ে দেয় ভোগ্য পণ্য হিসেবে ? কেন কোলকাতা শহরের অধিকাংশ
রিসেপশনিস্ট মেয়ে
? কোন্
যোগ্যতায় ? নারীবাদ
তা নিয়ে কোনো কথা বলেনা । কোনো বাদ
বা ইজম্ কি নিরপেক্ষ হয় ? একের
পর এক প্রশ্ন ।
প্রশ্নগুলো
ধীরে ধীরে বরশার ফলার মতো এগিয়ে
আসে সায়ন্তনীর কাছে । মুহূর্তেই প্রজাপতিরা যাবতীয় প্রশ্নচিহ্ন পাখায় নিয়ে
ছুঁড়ে দেয় আকাশের গায়ে । প্রশ্নগুলো ছড়িয়ে পড়ে অঞ্চল থেকে বিশ্বে । উত্তর
নেই । উত্তর
হয়ত উত্তর কালের
কব্জায় । পাড়ার
বাঁকা চোখ,চোখের
কাজলের কালি ছুঁয়ে ফেলে বাবা মাকেও । দুহাজার
তেরোর আধুনিকতা
ছাড়পত্র দেয় না সায়ন্তনীকেও । কেউ তো আর বলে না --- "সে যে যতই কালো হোক
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ"। বাবার রেফারেন্সেই সায়ন্তনী পাড়ি দেয় শান্তিনিকেতন
।
বাবার
অফিসের কলিগ মিঃ বোসের চেনা জানা পেইংগেস্টেই আশ্রয় নেয় সায়ন্তনী । এখানকার এন
জি ও-তে মাস মাইনায় কোনোরকমে চলে যায় । অন্তরঙ্গে কোনো রং না লাগলেও বহিরঙ্গের পরিবর্তন
হয় কিছুটা । সায়ন্তনী নীল সালোয়ার ছেড়ে এখন হলদে শাড়ি । আম্রকুঞ্জ ছাতিম তলার শুকনো
পাতারা হাওয়ায় ভাসে । ভাসতে ভাসতে ছোঁয় মাটি । তারা অদ্ভুত আকার নেয়।জড়ো হয় । সায়ন্তনী
স্পষ্ট দেখতে পায় শুকনো পাতা,রাধা চূড়া,কৃষ্ণ চূড়ারা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিলে তৈরী করে সম্পূর্ণ বাক্য ---
"ওয়েলকাম সায়ন্তনী। তোমাকে অভিবাদন ।"সায়ন্তনী তাকিয়ে দেখে
। কোলকাতার ভিটে মাটি মিত্র পাড়া তার নিজের পাড়া হয়েও মিত্র হোল না কোনোভাবেই।
অথচ এরা কি
অবলীলায় তাকে কাছে ডাকে । হঠাৎ লেখাগুলো ভেঙ্গে যায় । সায়ন্তনী চোখ
তোলে।দেখে ফ্যাকাশে মুখে একটা ছেলে । সায়ন্তনীর পেইংগেস্ট লাগোয়া যে বস্তি সেই
বস্তির ছেলেদের
একজন । নাম
হিল্টু । হিল্টুর সঙ্গী লালু । লালু একটা তরতাজা জ্যান্ত নেড়ির
বাচ্চা।মাঝে সাঝেই
পেইংগেস্টের সামনের বাগানে চলে আসে । হাড় ভাঙা শরীরেও লেজ নাড়ে ।
বিকেল
ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামে । তারপর রাত । তারারা ছড়িয়ে পড়ে আকাশ পথে । গ্রহ আর উপগ্রহের ফারাক বুঝতে চায় সায়ন্তনী---আমি
গ্রহ না উপগ্রহ ? নিজের
আলো না অন্যের আলোয় আলোকিত
? এমন
সময় এস এম এস বাজে।একি! এ যে অলকেশ!---"একবার দেখা হবে" ? ওয়েটিং
ফর ইউ । সায়ন্তনী মোবাইল বিছানার পাশে রাখে । আবার এস এম এস বাজে। এবার
অনিন্দ্য --- "মিসিং ইউ ডিয়ার।প্লিজ মিট মি । "টুং টাং শব্দ হয়।আবার টেক্সট
মেসেজ ---"হায় ব্ল্যাক
বিউটি অ্যাম অরিত্র । ওয়ান্ট টু মিট।"মিশে মিশে কালো কিছু আঙ্গুল ডিলিট করে একের পর এক মেসেজ । অলকেশ
অনিন্দ্য অরিত্র তিনজন আলাদা হলেও আসলে প্রবল যৌনতার তিন বিন্দু । মনের মোড়কে এরা
মধু খোঁজে । এস এম এস বেজেই চলে । সুইজ অফ করে সায়ন্তনী।তখনই আকাশ জুড়ে মিট মিট
করে কিছু তারা।সহজেই ফারাক বোঝে সায়ন্তনী। গ্রহ আর উপগ্রহের । আলেয়া নয়,আলোয়
আলোয় ভোরে ওঠে সে । অলকেশ অনিন্দ্য অরিত্র হারিয়ে যায় নিরুদ্দেশের গহ্বরে ।
মুখ তুলে দেখে সায়ন্তনী কাছেই দাঁড়িয়ে লালু । লালুর সেই পরিচিত লেজ নাড়া ---"লালু তুই
এতো রাতে ? আয়---"
। লালু মুখ ঘষে সায়ন্তনীর বুকে । পরম যত্নে চেটে দেয় সায়ন্তনীর স্তন । সেই স্তন
দিয়ে গড়িয়ে পড়ে দুধ । দুধ গড়িয়ে পড়ে লাল মেঝেতে । মেঝে থেকে দালানে । দুধের
স্রোত বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে গিয়ে ঢোকে বস্তি বাজারে । হাড় হাভাতের ব্যাটারা
দুধ সাগরে ডুব দেয়। আচমকাই বেজে ওঠে সানাই সুর । লালু
আর সায়ন্তনী পাশাপাশি । সেই সঙ্গে সেই মেরুন রঙের এক ঝাঁক প্রজাপতির সমাবেশ। তারা
নিত বরের মতো বাসর জমায়। প্রজাপতির সংখ্যা কমতে থাকে।---"তোমরা কোথায় যাচ্ছ"
? জিজ্ঞাসা
করে সায়ন্তনী।
প্রজাপতির পাখা দুটো টাটা দেওয়ার ভঙ্গী কোরে বলে ওঠে --- "আমাদের
যে কাজ শেষ সায়ন্তনী । তুমি তোমার মধ্যে তোমাকে ফিরে পেয়েছ" । কেপে ওঠে সায়ন্তনীর অভিমানী জিভ ---
"তা বোলে চলে যাবে"!--- "আমাদের যেতে হবে বন্ধু। সেবার
আয়লা, এবার
পিলিং---আয়লা,পিলিং,সুনামী
সবই একই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ । ওদের পাশে গেলে ওরাও খুঁজে পাবে, যেমন
তুমি পেলে তোমাকে । সময় নেই । চললাম"। সারি
সারি প্রজাপতি শোঁ শোঁ শব্দ করতে করতে ভোরের আলোয় মিশে যায় । মিশে যায় শিশিরের প্রতিটি বিন্দুতে ।
ফোটা
ফোটা শিশির ধুঁয়ে দেয় সায়ন্তনীর চোখ মুখ ঠোঁট। এমন কি সমস্ত বাগানময় পেইংগেস্ট ।