গল্প নয়
এ পাড়ায় ইন্দর এসেছে অল্পদিন হল। অন্যদের সঙ্গে এখনও আলাপ হয়নি, পরিচয় হয়নি। রাস্তার গায়ে একটে অশথ গাছ সারাদিন পাতায় পাতায় শীতের ধুলো মেখে দাঁড়িয়ে থাকে বড়ো উদাসীন। ইন্দর তার একটা ডালে উঠে পা ঝুলিয়ে বসে। মায়ের কথা মনে পড়ে। মনে পড়লে ডান হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের জল মোছে।
গাছের নিচে তিনটি বাচ্চা এক্কা দোক্কা খেলে। মাবাবাও আছে। বাচ্চাদের
চোখে চোখে রাখে। ইচ্ছে হলে আদর করে। ইচ্ছে হলে শাসন করে। একসঙ্গে থাকে।
ইন্দর সব লক্ষ করে। একেকদিন চমৎকার চাঁদ ওঠে। একটু বেশি রাতে গাছের
তলে পাঁচজন মিলে পা ছড়িয়ে বসে অনেকক্ষণ সুর করে কাঁদে।
বাচ্চাগুলোর বাবাও ইন্দরকে এর মধ্যে খেয়াল করেছে। একবার সেও গাছের ডালে
উঠে ইন্দরের পাশে এসে বসে। ইন্দরকে বলে--- সবসময় কাঁদো কেন?
- বাবামাকে ছেড়ে এলাম।
- নিজে?
- নিজেই।
-আত্মহত্যা?
- আত্মহত্যা।
- কেন?
গাছের ডালে মৌমাছির চাক। মৌমাছিরা উড়ে বেড়ায়। ইন্দর সেগুলিকে তাড়ায়
লম্বা হাত দিয়ে। তারপর বলে--- মেলা টাকা ধার করলাম চাষের জন্যে, জল হল না। জমিন জ্বলে
গেল। তখন একদিন…
কিছুক্ষণ দুজনের কারো মুখে কথা নেই।
ইন্দর এবার জিজ্ঞেস করল--- তুমি দিব্যি আছো বউ নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে।
কি হয়েছিল তোমার?
- দাঙ্গা। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দিল।
আবার দুজন চুপ। হুটার বাজিয়ে মন্ত্রীদের গাড়ি গেল বড় সড়ক ধরে।
- তোমার বাড়ি কোথায়?
- অমরাবতী।
- তোমার?
-আহমেদাবাদ।