বর্ণালী
বনানী এখন আগের মতই কথা বলে। সুমিষ্ট স্বরে। থেমে থেমে, কেটে কেটে নিজের
কথা বলতে পারে।
বনানী এখন আগের মত হাসতে পারে। ওর মুক্তঝরা হাসি। যে হাসি দেখতে ক্লাসের
কণিকা ওকে কাতুকুতু দিত বা টিউশনিতে শ্যামল অনুরোধ করত "বনা, একবার হাস না প্লিজ।"
বনানী এখন একাই নিজের কাজ করতে পারে। নিজেই স্নান করে। নিজের জামা-কাপড়
কাচে। বারান্দার তারে মেলে দেয়। শুকিয়ে গেলে তুলে এনে গুছিয়ে রাখে আলনায়।
বনানী এখন একলা ঘরে শুতে পারে। ক্লাস সেভেনে ওঠার পর মা যে ঘরটা দিয়ে
বলেছিল "একদিন তোর নিজের ঘরে চলে যাবি। যতদিন আছিস, এই ঘরটাই তোর ঘর।" বনানী
বুঝেছিল, ছেলেমেয়ে বড় হলে মা-বাবার কাছে শুতে নেই। হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল মায়ের কথা।
বনানী এখন বন্ধুদের সাথে স্কুল যেতে পারে, টিউশনি যেতে পারে। হই হুল্লোড়
করতে পারে। টিফিন কেড়ে খেতে পারে, আম আচার কিনে বন্ধুদের ভাগ করে দিয়ে আঙুলগুলো পরম
মমতায় চাটতে পারে।
বনানী এখন রোদ্দুর দেখতে পারে, বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি দেখতে পারে। সবুজ
স্নাত গাছপালা তাকে স্নিগ্ধ করে। বনানীর হৃদয় কারো অপেক্ষায় অপেক্ষমান থাকতে পারে।
কিন্তু বনানী সন্ধ্যার পর আর বাইরে যেতে পারে না। ভয় পায়। আজও বুঝতে
পারে না কেন সেদিন ওই পশুগুলো ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।