(১)
চা বাগান
ছাড়িয়ে জঙ্গল এলাকায় ঢোকার মুখে জরিন বাগানের নিজস্ব রাস্তা। দীর্ঘ একটা হর্ণ দিয়ে
বাসটা থামে। দুতিন জন নামে। কেউ ওঠে না। হেলপার বাসের জোরে দুটো
থাপ্পর লাগায়। বাস চলতে শুরু করে। দুপাশে পাহাড়। সবুজ গাছ-গাছালী অন্ধকারে ঢেকে আছে। ঝিঁ ঝিঁর মিলিত কলতান। পিচ ঢাকা কালো পথে ছুটে
চলেছে বাস। চমৎকার লাগছে তপুর কাছে। দীর্ঘদিন পর শমসেরনগর যাচ্ছে। অথচ এক সময়
প্রায় সপ্তাহেই একবার যেতো। গৌরাদা, সাধনদা, সায়েক,
দীপংকরদের সাথে আড্ডা হতো শমশেরনগর বাগান মাঠের সুবজ ঘাসে।
কিংবা কালীবাড়ীর দেয়াল ঘেরা চত্তরে। আজ সব স্মৃতি হয়ে আছে। যে রাস্তা দিয়ে এই
মুহূর্তে সাই সাই করে বাস ছুটছে এই রাস্তা বছর দুয়েক আগেও ছিলো কাঁচা। কিছু জীপ,
মাইক্রোবাস চলতো ধুকে ধুকে। যখন তখন আটকে যেতে
কাদায়। কতো বদলে গেছে। এক সময়ের গভীর ভানুগাছ পাহাড় এখন হালকা হয়ে গেছে। অবৈধ গাছ
কাটার ফলে ফরেষ্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেট ভরেছে কিন্তু মূর্খগুলো জানে না এই দেশের পরিবেশের কত বড়
ক্ষতি করছে তারা দিনের পর দিন।
শ্যামলী
রেস্ট হাউজের পাশে এসে বাস থামে। বড় সাইজের বোঝা নিয়ে হাচড়ে পাচড়ে ওঠে এক লোক। বাস
আবার চলতে শুরু করে। ভানুগাছ চৌমুহনীতে আসতেই বাস প্রায় খালি হয়ে যায়। শামসের
নগরের যাত্রী তপু সহ গোটা কয়েক। দুচারজন ওঠে। বাস আবার চলতে শুরু করে। শংকরদার কথা
খুব মনে পড়ে তপুর। কমলগঞ্জের সাংস্কৃতিক অংগনের চেনামুখ। অনেকগুলো সংকলনের সম্পাদক,
বাংলার বানীর কমলগঞ্জ প্রতিনিধি। নিজের কাজের প্রতি নিবেদিত
প্রায়। কাউকে বুঝি এদেশ থাকতে দেবে না। শংকরদা আর্থিক কারণে দেশ ছাড়া। মেধাবী
ছাত্র প্রিয় বন্ধু মোহন এখন কেমন আছে কে জানে। কলেজ জীবনের সোনালী দিনগুলোতে তপু
মোহন এতো কাছাকাছি ছিলো যে তখন কেউ কল্পনাও করেনি কত বড় বিচ্ছেদ অপেক্ষা করছে ওদের
জন্য। প্রথম দিকে পত্র যোগাযোগ ছিলো। একসময় ক্ষীণ হতে হতে এখন আর পত্র লিখা হয় না
দুজনের কারোরই। তপু শুনেছে বাবার লাইব্রেরী দেখা শুনা করেই সময় কেটে যায় মোহনের।
ধলাই ব্রীজ পার হয়ে শমসেরনগরের দিকে ছুটতে থাকে বাস। কামুদপুর এসে মাত্র তিনজন
ছাড়া সবাই নেমে যায়। বাস চলতে শুরু করে আবার। একটু পরেই শমসেরনগর কালী বাড়ীর পাশে
এসে থামে বাস। রাত নটা তিন। তপু বাস থেকে নেমে শীলুদের দরোজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে
ছিটকিনি খুলে দরজার একটা পাল্লা ফাক করে মুখ বের করে কেউ। তপু তাকায়। শীলু।
ঃ দাদা মনি।
ঃ হ্যা।
ঃ ভিতরে এসো।
তপু ভিতরে পা রাখে।
(২)
তপুর
মামাতো বোন কাঞ্চন। কাঞ্চনটা অন্য দশটা মেয়ে থেকে আলাদা। আর এ জন্যই তপুর কাছে খুব
প্রশ্রয় পায় কাঞ্চন। সেবার ফুলদার বিয়েতে অসুস্থ শরীর নিয়েই তপুকে যেতে হলো। না
হলে কাঞ্চন বিয়েতে নেই। অবশ্য অসুস্থতা সত্ত্বেও কোন সমস্যা হলো না তপুর। কাঞ্চন
ব্যস্ত থাকলেও ওর প্রিয় বান্ধবী শীলু সঙ্গ দিলো ওকে। কাঞ্চনের দাদামনি শেষে শীলুরও
দাদামনিতে পরিণত হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানাদির ফাকে তপু জানলো শীলুর বাবা মা ভাইবোন
সম্পর্কে। বিয়ের পর একদিন কাঞ্চন বেড়াতে নিয়ে গেলো শীলুদের বাসায়। সেই থেকে
কাঞ্চনদের ওখানে যতোবার গিয়েছে তপু শীলুদের বাসায় একবার ঢু মারতে হয়েছে।
দীর্ঘদিনের পরিচয় গভীর ঘনিষ্টতায় পরিনত হয়েছে। তপু শীলুদের পরিবারের একজনের মতই
হয়ে গেছে। সময় গড়িয়ে গেছে অনেক। শীলুর বাবা মারা গেলেন। তিন বোনের বড়জনের বিয়ে হয়ে
গেলো। শীলু আর ওর বড় বোন লীলা গ্রাজুয়েশন করে স্থানীয় গালর্স স্কুলে চাকরি নিলো।
এক ভাই, মা আর দু বোনের সংসার ভালোই
চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটলো দুর্ঘটনা। শীলুদের একমাত্র ছোট ভাই
রতন জন্ডিসে আক্রান্ত হলো। নানান চিকিৎসার পরও কিছু হলো না। লিভার সিরোসিসে মারা
গেলো রতন। খরব পেয়ে তপু গেলো। মাসীমা পাথর হয়ে আছেন। লীলা শীলা শুকিয়ে অর্ধেক। কেউ
ভাবেনি এরকম হঠাৎ করে চলে যাবে রতন। বুঝালো তপু। কিন্তু কিছুটা শান্ত হলে
কর্মস্থলে ফিরলো তপু। নিয়মিত খোজ খবর রাখতো। শীলু ও চিঠি লিখতো। মাস খানেক আগে
একটা চিঠি পায় তপু। চিঠি পড়ে চমকায়। একটা সমস্যা ঘনিয়ে ওঠেছে শীলুদের সম্পত্তি
নিয়ে। শীলুর বাবা মৃত্যুর পূর্বে রতনের নামে সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি লিখে দিয়ে
যান। শর্ত থাকে যতোদিন শীলু লীলার বিয়ে হচ্ছে না ততোদিন এই সম্পত্তি রতন হস্তান্তর
কিংবা বিক্রী করতে পারবে না। মাসীমার মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত সম্পত্তির এক
তৃতীয়াংশের মালিক মাসীমা। মামীমার মৃত্যুর পর লীলা শীলার বিয়ের পর সম্পূর্ণ
সম্পত্তির মালিক হবে রতন। কিন্তু রতন মারা যাবার পর শীলুদের সৎ ভাইরা গ্যাঞ্জাম
পাকাচ্ছে (শীলুর বাবা দুটো সংসার করেছিলেন প্রথম পক্ষে দুই ছেলে, শীলুরা ২য়
পক্ষের সন্তান)। ওরা শীলুদের সম্পত্তি দাবী করছে। জোট বাধছে শহরের বখাটে আর
টাউটদের নিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার শহরের
গন্যমান্য ব্যক্তিরা অসহায় মেয়ে দুটোর পক্ষ ছেড়ে ঐ পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বড়
অসহায় অবস্থায় পড়েছে শীলুরা। তপু চিঠি পেয়ে ভাবে যেমনি হোক তাদের এই দুঃসময়ে পাশে
গিয়ে দাড়াবে। কিন্তু তপুর চাকরি তাকে সময় দেয় না। তপু চিঠি লিখে যতো তাড়াতাড়ি
সম্ভব সে আসবে। ওরা যেন ভেঙ্গে না পড়ে।স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতেও বলে তপু।
ইতিমধ্যে একমাস চলে গেছে। তপু আর কিছুই জানে না। ওর বিশ্বাস ঈশ্বর অসহায়দের
সাহায্য করেন। লীলা শীলুরা এ বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবে। গতকাল বাড়ী ফিরেই সিদ্ধান্ত
নেয় তপু প্রথম কাজ শীলুদের সাথে দেখা করা। আজ তাই শীলুদের বাসায় চলে এসেছে তপু।
(৩)
ঃ কেমন আলো দাদামনি।
ঃ ভালোই। তোরা কেমন?
ঃ আছি। অনেক দূর থেকে যেন উত্তর
দেয় শীলু।
ঃ মাসীমা আর লীলা কোথায়।
ঃ ওপরে।
ঃ তোদের কি খবর বলতো। আমিতো সাথে
সাথে আসতে পারিনি। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
ঃ এসেছো যখন সব শুনবে। বসো। আমি
মা আর মেঝদি কে বলে আসি।
শীলু
সিঁড়ির দিকে চলে যায়। তপু রুমের দেয়ালে চোখ রাখে। মেসো ছিলেন শ্রমিক নেতা। সারাটা
জীবন কাটিয়েছেন চা শ্রমিকদের মাঝে। শ্রমিকদের দুঃখে কষ্টে এই মানুষটাই সবার আগে
ছুটে গেছেন। কিন্তু এদেশ এ মহান মানুষটির মুল্যায়ন করেনি। দেয়ালে মেসোর কটি ছবি।
এর মধ্যে কবি দিলওয়ার এর একটি কবিতা যা মেসোকে উৎসর্গ করেছেন কবি।
সিঁড়িতে
পায়ের শব্দ শোনা যায়। লীলা নেমে আসে। শুকিয়ে গেছে অনেক। তবুও মুখে হাসি লেগে আছে।
এই মেয়েটিকে দেখে অবাক হয় তপু। ঝড় ঝঞ্ঝা সব কিছুতেই স্থির অবিচল এই মেয়ে। যেন
সংগ্রাম করতেই জন্ম ওর। বি.এ কমপ্লিট
করছে। প্রস্তুতি নিচ্ছিল এম.এ এর কিন্তু এর মধ্যেই এই দুর্ঘটনা।
ঃ কেমন আছে তপুদা?
একটু বিষন্নতা খেলা করে লীলার কণ্ঠে।
ঃ ভালো। তোমাদের খবরাখবর বলো।
ঃ চলছে। হাসে লীলা।
ঃ তুমি বদলালে না।
ঃ লাভ নেই। যাক এসেছেন যখন সব
বলবো। শীলু চা আনছে। চা খান। তারপর কথা বলি।
শীলু দু কাপ চা রাখে ছোট
টেবিলটাতে দুজন দু কাপ চা তুলে নেয়। একটা হালকা চুমুক দিয়ে লীলা শুরু করে।
রতন মারা
যাবার পর ওর মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতায় দাদারা যোগ দেয়। অনুষ্ঠানাদির পর একদিন
বড়দা জানায় বাবার দলিলের শর্তের কথা ওরা জানে। রতন না থাকায় এখন ওরা এ সম্পত্তির
মালিক। মূল বিল্ডিং এর সামনের দোকানগুলো এই মুহূর্তে দাবী করে তারা। লীলা শীলা
স্থম্ভিত হয়ে যায়। যুগপৎ ক্ষোভ এবং দুঃখ জমে দাদাদের লোভ দেখে। লীলা তারপরও বাঝায়
যে ওরা চিরদিন থাকবে না এ সংসারে। বিয়ের পর দাদারাই হবে এর মালিক। মা কে দাদারাই
দেখা শুনা করবে। সম্পত্তিও ওরাই ভোগ করবে। এই মুহূর্তে লীলা শীলু অসহায়। দোকান
গুলোর সামান্য আর আর স্কুলের বেতনে চলতে হচ্ছে। কিন্তু দাদারা ওসবে পাত্তা দেয় না।
সোজাসুজি না হলে বাকা পথ ধরবে জানালে লীলার
রোখ চাপে। লীলা জানায় তাদের যা ইচ্ছে তা তারা করতে পারে।
এরপর থেকে পিছু লেগেছে দাদারা। নানা ধরনের কথাবার্তা রটাচ্ছে বাজারে। দল গড়ছে।
রাতে দরজায় কারা জানি ধাক্কা দেয় ঢিল ছুড়ে। স্থানীয় থানায় নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন
করেছে লীলারা। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার যারা সার্বক্ষণিক ওদের সহায়তা করতো। সুখে
দুখে এগিয়ে আসতো আজ তারা ঐ পক্ষে। বাসায় তো কেউ আসেই না। রাস্তায় ওদের দেখলে
অন্যদিকে তাকায়। তাদের এই অসহায় অবস্থায় লীলার স্কুলের হেড মাস্টার সহায়তা করছেন।
কিন্তু লীলা জানে হেডমাস্টার স্বার্থ ছাড়া কিছুই করেন না। কিন্তু এই মুহূর্তে তার
সহায়তা নিতে হচ্ছে। মাঝখানে দুপক্ষে দুটো মামলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনে এবং
সহকারী জেলা প্রশাসক ও জড়িয়েছেন। লীলা জানে না কবে তারা মুক্তি পাবে এই ঝামেলা
থেকে।
লীলা
থামে। ওকে ক্লান্ত বিমর্ষ মনে হয়। প্রচুর দৌড়তে হচ্ছে ওকে। একে ওকে ধরতে হচ্ছে।
মামলা চালাতে হচ্ছে। অথচ এমন একজন পুরুষ মানুষ নেই। যে সার্বক্ষণিক সহায়তা করবে।
তপুর
নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। মনে হয় এদের কাছে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ওর চাকরি আছে।
আছে ওদের নিজেদের নানান সমস্যা। বুকের ভেতর একটা কষ্ট চেপে বসে তপুর।
(৪)
রাত প্রায়
সাড়ে দশটায় ওঠে দাড়ায় তপু। কাঞ্চনদের ওখানে যেতে হবে। কাল সকালে আবার আসবে জানিয়ে
শীলু লীলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় নামে তপু। নিরব হয়ে এসেছে বাজার। প্রায়
সবগুলো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। স্টেশন পেরিয়ে নামা বাজারে পৌছে তপু। মাথার ভেতর
লীলার কথাগুলো ঘুরছে। ঘরের ভেতর যে ব্যাপারটা শেষ হতে পারতো আজ তা জেলা প্রশাসন
পর্যন্ত গড়িয়েছে। আর এর পেছনে কাজ করছে ক্ষোভ, জেদ, আবেগ। নানা লোক নানা ধরণের ফায়দা
লুটছে এ থেকে। সর্বোপরি ক্ষতি হচ্ছে অবিবাহিতা মেয়ে দুটোর। নানা রটনা ওদের
ভাবিষ্যতকে কন্টক পূর্ণ করছে।
তবুও তপু
ভাবে লীলার সাহস আছে। লীলা ছাড়া অন্য কেউ এই সমস্যায় স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারতোনা।
তপু লীলাকে কাল বুঝাবে পুরো ব্যাপারটা। একটা সমোঝোতায় আসা যায় নাকি চেষ্ট করতে
বলবো। না হয় তপু নিজে দাদাদের সাথে আলাপ করবে। ওদের মতামত গতিবিধিও জানা দরকার।
একটা সমাধান খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন। না হলে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে লীলারা। না এটা
হতে দেয়া যায় না।
হাইস্কুল
পার হয়ে মাটির রাস্তায় নামে তপু। সামনেই বিশাল গোরস্থান। ছোট ছোট ঝোপঝাড়ে পূর্ণ।
লালমাটির ছোট ছোট টিলার ওপর বাড়ী ঘর। রাস্তার বাঁক পেরোতেই খোলা মাঠ। এক পাশে
গম্বুজওলা মসজিদ। আকাশে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ ত্রয়োদশীর বেশ বড় সড় চাঁদের সাথে
লুকোচুরি খেলছে । তপু পশ্চিম দিকে হাঁটছে। কাঞ্চনের বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় দুবছর।
গৌরাদা প্রায় পাচ ছয় বছর ধরে দেশের বাইরে। মামার বাড়ীটা খালি। মামা মামি ফুলদা আর
ফুল বউ। অন্য দুটো ভাই একজন সিঙ্গাপুরে। অন্য জন সিলেটে থেকে পড়াশুনা করছে। অথচ এক
সময় কি জমজমাট ছিলো এ বাড়ী। ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বুক চিরে বেরিয়ে আসে।
ডাক্তারবাড়ী পার হয় তপু। টুকলুদির কথা মনে পড়ে। অসাধারণ সুন্দরী ছিলো টুকলুদি।
বিয়ের পর চলে গেছে কলকাতা। টুকলুদির স্বামী কোলকাতায় বড় চাকরী করে। টুকলুদি কি আদর যে করতো
তপুকে। তপুর চিবুক ছুয়ে বলতো মনে রাখিস তপু তোকে অনেক বড় হতে হবে। কতটুকু বড় হতে
পারলো তপু?
হাতের ডান
পাশে খুকুদের বাড়ী। সেই ছোট খুকু এখন ক্লাশ টেনে পড়ে। খুব সুন্দর হয়েছে খুকু। এক
সময় খুকুকে দেখলেই নীরেন চক্রবর্তীর একটা কবিতা আওতাড়াতো তপু। কবিতাটা আসলেও
সুন্দর-
খুকু ঘরে একটা জানলা চাই
বাইরে একটা মাঠ
ওঠোনে একটি মাত্র কাঠ
গোলাপের
চারা
আস্তে সুস্থে বড় হোক
কিছু নেই তাড়া
একদিন সকালে নিশ্চয়ই দেখবো
যে তার
ডালে ফুল ধরেছে।
খুকু
আর কিছু তো চাইনি
আমি
চেয়েছি এই
টুকু.....
কবিতা
শুনে খিলখিল করে হাসতো খুকু। কাল খুকুকে একবার দেখে যেতে হবে। বড়পুল পেরিয়ে বটতলার
পাশ কাটায় তপু। পুকুর পাড়ে বিশাল মন্দির অশত্থ গায়ে জড়িয়ে নির্বাক দাড়িয়ে আছে।
পাকা ঘাটলার পাশের বড়ই গাছটার নীচু ডালটা সেই দশ বছর আগের মতোই পানি ছুয়ে আছে।
শ্রীবাস, গৌরাদা আর তপু কতো লাফিয়েছে এই
ডালে চড়ে। কতো দিন যে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার কি ইয়ত্তা আছে। ঘাটলা পেরিয়ে
সুপারি গাছের সারির ভেতর দিকে বাড়ীর দিকে হাঁটে তপু। হিমুদার বাড়ীতে বোধ হয় নারায়ন
সেবা। কীর্তন হচ্ছে।
তপু ফুলদার রুমের দরোজায় দাড়িয়ে
হাঁক ছাড়ে।
ঃ ফুল বৌদি,
ও ফুল বৌদি।
ঃ কোন গুন্ডারে এই রাত দুপুরে
ষাড়ের মতো চেচাচ্ছে।
ঃ আরে দরোজা খুলেই দেখো না তোমার
প্রিয় বর দরোজায়।
দরোজা খুলে দেয় ফুল বউ। চাঁদের
আলোতে ফুল বউ এর হাসি মাখা মিষ্টি মুখটা চমৎকার লাগে তপুর কাছে। ফুল বউ হাসে। ,
ঃ আয় ভিতরে আয়।
ও ঘর থেকে মাসীমা সাড়া দেন।
ঃ কে রে তপু নাকি।
ঃ হ্যা মাসীমা। ফুল বৌর হাত ধরে
মামাীমার রুমের দিকে হাঁটে তপু।
কাঞ্চন,
গৌরাদার শূন্যতার মধ্যেও একটা বিষন্ন ভালোলাগায় ভরে যায়
তপুর মনোজগত।