গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

তাপসকিরণ রায়

ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী--১৬

ভোপালের শিবপুরী ফোর্ট


ভোপালের শিবপুরী ফোর্ট। পোহরী তহসিলের শিবপুরে এর অবস্থান। এটা একটি প্রাচীন কেল্লা। বলা হয় দু হাজার বছরের আগের এটি একটি ঐতিহাসিক ফোর্ট। ফোর্টটি ভোপাল নগর থেকে বহুদূরে গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত। তদানীন্তন রাজা বীরখন্ডেরাও এটি তৈরি করিয়ে ছিলেন। রাজা বীরখন্ডেরাও ছিলেন খুব ভোগবিলাসী চরিত্রের লোক, তাঁর এই কেল্লায় প্রায়ই নর্তকীদের গান বাজনা ও নাচের জন্যে নিয়ে আসা হত। এখানে প্রতি রাতে বসত নাচ-গানের আসর। অন্য রাজ্য থেকেও এখানে মেয়েদের নিয়ে এসে ভোগ-বিলাসিতা চলত। এখানকার মজলিসে চলত চরম আনন্দ ফুর্তি। রাজা তাঁর সারাটা জীবন নারী, সূরা ও ভোগ-বিলাসিতার মধ্যেই জীবন কাটিয়ে গেছেন।
এই কেল্লা এক সময় লোকজনরা দেখতে আসত। তারা কেল্লা ঘুরে ফিরে দেখত, এখানে বিরাট বিরাট লন, ঘর,  দেওয়ালের সুন্দর কারুকাজ নকশি দেখতএর দেওয়ালগুলি দর্শনার্থীদের জন্যে রঙ করানো হয়েছিল। সাজ সজ্জাগুলিকে আবারও দেখার মত করে সজ্জিত করা হয়েছিল। লোক দেখত এখানকার মজলিশী নাচঘর ও তার সাজ সরঞ্জাম। দেখত রাজা বীরখন্ডেরাওয়ের বিরাট আয়োজন সজ্জার বহর। তারপর দীর্ঘ দিন কেটে গেছে এখানে আর কেউ আসে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানের পতিত জাগায় জন্মে গেছে জঙ্গল। এখন এ জাগা দিন ভর স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকে। দিনের পরে যখন রাত আসে তখন ধীরে ধীরে জেগে ওঠে এ হাবেলি, ভিতরের নাচ ঘরে জ্বলে ওঠে আলোক সজ্জা। কেল্লা আবার তার হাজার বছর অতীতে ফিরে যায়--আবারও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
এখনও নাকি রাতের মহফিল জমিয়ে বসে থাকেন রাজা বীরখন্ডেরাও ! রাত হলেই এখানের ফোর্ট  জেগে ওঠে ! সেই দু হাজার বছর আগের দিনগুলিতে  পৌঁছে যায় ! অতীতের সেই বাঈজীদের নাচ শুরু হয়। তাদের ঘুঙুরের বোল  ঝংকৃত হয়ে ওঠে, গানের গুঞ্জনের মাঝে মাঝে উচ্ছল পুরুষদের লিপ্সিত আওয়াজ জেগে ওঠে। আওয়াজে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে গমগম করে ওঠে সে কেল্লার প্রাসাদ মহল !
এক সময়ের লোকালয় আজ জন-মানবহীন হয়ে পড়ে আছে। শিবপুরি এরিয়াতে এখন জন সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রায় মাইল খানেক দূরত্বে রয়েছে জন- বসতি। এই বসতির বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায় যে এখানকার অলৌকিক ঘটনার কথা। তারা বলে, ওই কেল্লার কথা, এক কিলোমিটার দূর থেকেও তাদের কানে মাঝে মাঝে ভেসে আসে নাচ গানের আওয়াজ, ঘুঙরু পায়ে কে বা করা যেন নেচে চলেছে বলে মনে হয় ! অনেক লোকের জমায়েত আসরের হৈচৈ হল্লার আওয়াজও গভীর রাতে ওদের কানে ভেসে আসে !
স্থানীয় গ্রামের এক বৃদ্ধ গল্প করেছেন। একবার নাকি এক ফৌজি লোক এসেছিল কেল্লা দেখতে। তখন সেখানে চারদিকে ভীষণ জঙ্গল হয়ে গেছে। ভয়ে কেউ দিনের বেলাতেও দুর্গের ধারকাছ ঘেঁষে না। ফৌজি লোকটা এসে গ্রাম থেকে জল খেয়ে তারপর কেল্লার কথা জিজ্ঞেস করে ছিল। গ্রামের যে যা ঘটনা জানতো সবাই কিছু কিছু বলে ছিল তাকে। যাওয়ার সময় এ সব ঘটনাকে সে ফু মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলে ছিল, যত সব বাজে কথা, আজ রাতে আমি একা  ওখানে থাকব, দেখি কি দেখতে পাই. আমাকে ভূতেরা কি বলে ?
গ্রামের বয়স্কদের দু একজন তাকে বাধাও দিয়ে ছিল। কিন্তু কে কার কথা শোনে ! সে ফৌজি সিপাই সেদিন রাতেই গিয়ে ঢুকে ছিল সেই কেল্লায়। এরপর কদিন তার কোন খোঁজ খবর নেই। গ্রামের লোকরাও তার খবর জানার জন্যে আগ্রহে দিন কাটাচ্ছিল। তারপর সে ফৌজির লাশ দশ দিন পরে পুলিশ ওই কেল্লা থেকে পচাগলা অবস্থায় বের করে নিয়ে এসেছিল। শেষে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নাকি বলা হয়েছিল, হার্টফেল করে মারা গেছে। এও প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। এ ঘটনা যখন ঘটে তখন এই গল্প বলা বৃদ্ধের বয়েস নাকি পঁচিশ বছর ছিল।