কর্পোরেট দুনিয়ায় এই অল্পদিনেই শঙ্খশুভ্র সান্যাল একটি পরিচিত নাম । কীভাবে সমস্ত অ্যাডভার্স সিচুয়েশন ওভারকাম করতে হয় । কীভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল করে আবার ঝকঝকে পূনর্বিন্যসের মোড়কে সবকিছু নতুনভাবে মুড়ে দিতে হয় । এইসব প্যাকেজিং তার মুখস্ত । মার্কেটিং আজ হাতের নাগালে । একটি বোতামের স্পর্শে খুলে যাচ্ছে বাজার । মানুষকে অলস করে দাও শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে । সে যেন বাজার বাজার যেতে না পারে । বাজারকে পৌঁছে দাও তার বাড়ির দরজায় । আর ভাবনার মধ্যে যৌক্তিক বিন্যাসগুলো এলোমেলো করে দাও যাতে সে নিজে কিছু ভাবতে না পারে । মার্কেট তাকে যা বোঝাবে এর বাইরে সে যেতে পারবে না । শঙ্খশুভ্র এই দর্শনকে প্রসারিত করেছে তার জিও হকার নামে একটি কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে । প্রেমকেও প্যাকেজিং এর আওতায় ফেলা যায় কী না । এই নিয়ে এখন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে সে । তার তীব্র বিশ্বাস পৃথিবীর কোন বিষয়ই বাণিজ্যিক পরিষেবার বাইরে নয় । সীমা নামের মেয়েটি আসবে বিকেল পাঁচটায় । ওকে সেভাবেই বলা আছে । সীমার মনস্তত্ত্ব ,
ভালো লাগার পরিধি , পছন্দ এবং তাকে খুশি করার উপাদান সবকিছুই ডাটাব্যাঙ্ক থেকে দেখে নিয়েছে শঙ্খ । সেইমতো প্রোগ্রামিং করা আছে ল্যাপটপে । সমস্ত প্যারামিটার এ টু জেড ফলো করলে সীমা প্রেমে পড়বেই এবং সে শঙ্খ ছাড়া অন্য পুরুষের কথা জীবনে ভাবতেও পারবে না । সীমা যথাসময়েই এল । কম্পিউটার নির্দেশিত সংলাপ আবেগের তারতম্য অনুসারে ঠিক মেপে বুঝেই বলে চলল শঙ্খ । পছন্দের গান শোনাল ,
খাবার এল । সীমা খুব খুশি । বলল- তাহলে চল আমি তোমাকে প্রেম দেখাই ,
শঙ্খ প্রেমের মুর্ত রূপ দেখল । -
হাই শাঙ্খো ,আই আম প্লিজড ,
লাভ ইউ এন্ডলেস ।বলে আকাশের দিকে হাত বাড়াল দিগন্তপ্রসারী । শঙ্খশুভ্র বুঝল কম্পিউটার কাজ করছে । পরদিন রনিতা , তারপর অসীমা ,
পামেলা , রুমেলা ......
যাকে যেরকম সময় দেওয়া ছিল এল । কারো সাথে কারো দেখা হওয়ার কথা নয় । ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু বলে শঙ্খ এক একজন নারীর সাথে কাটাতে লাগল সকাল বিকাল সন্ধ্যে, রাত । অদ্ভুত সুন্দর প্রোগ্রামিং । কী অপূর্ব !
প্রেমও এবার যন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে । তিনদিন পর বিকেলে একটি শপিং মলের সামনে এসে দাঁড়াল শঙ্খ । তিনফুট দূরে ওই যে ফুচকা খাচ্ছে ওই মেয়েটা । হ্যাঁ ওই তো সীমা ।কিন্তু ওর তো আজ দিল্লী যাওয়ার কথা । সেরকমই তো বলেছিল সেদিন । পাশের ছেলেটি তার মুখে একটা ফুচকা গুঁজে দিতে দিতে কি বলছে ফিসফিস করে - কাল সন্ধ্যায় এসো কিন্তু । সারারাত মস্তি হবে ... ছিঃ, কোন মরালিটি নেই । একরাশ মনখারাপ নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায় । একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হল তার । এসব জায়গায় সে কখনও আসেনি । প্রথম পা রাখল । রুমেলাকে দেখে সে চমকে উঠল । পর্দা ঢাকা কেবিনের আলোছায়ায় কার ঠোঁটের আলিঙ্গনে ধরা দিচ্ছে সে । লোকটাকে নয় । রুমেলার দিকেই অপলক চেয়ে আছে শঙ্খ । বিরক্তি নিয়ে সে বেরিয়ে আসে । এরপর কোথায় যাবে সে ? মনটা দুমড়ে মুচড়ে চৌচির হয়ে গেছে । সারারাত ঘুম এলনা । ভোর হতেই সে বেরিয়ে পড়ল বনপথ পেরিয়ে নির্জনতার দিকে । জঙ্গলের পর জঙ্গল । নদীপথও সে পেরিয়ে এল পায়ে হেঁটে । দেখল এক যুবতীকে । জ্যোৎস্না ঠিকরে বেরুচ্ছে তার গা থেকে । একজন যুবক ধরে আছে তার হাত । তুমি নীল গোলাপ দেখেছ অরুন্ধতী ?
অরুন্ধতী মেয়েটি বলল- কিছুই তো দেখা হয়নি আমার । -
সত্যিকারের ভালোবাসো নীল গোলাপ ফোটায় । দেখবে ? - কীকরে দেখব আমার তো চোখ নেই । ছেলেটি তার গালের উপর হাত রাখল এবার বিন্দু বিন্দু নীল জল । -
এই রঙ নীল গোলাপ হয়ে ফুটে উঠছে আমার শরীরে ,
দেখো । মেয়েটি আবার মাথা নাড়ল –
আমি দেখতে পাচ্ছি না । ছেলেটি বলল – তুমি কেঁদো ,
না আমার দুটো চোখ দুজনে ভাগ করে নেব । কথাগুলোর কম্পন শঙ্খকে তোলপাড় করল । সে বুঝতে পারল এই শব্দগুলো কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করা নয় । বুকের সেই জায়গা থেকে উঠে আসছে যেখানে সত্যিই নীল গোলাপ ফোটে ।