গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

নীল গোলাপ

         কর্পোরেট দুনিয়ায় এই অল্পদিনেই শঙ্খশুভ্র সান্যাল একটি পরিচিত নাম কীভাবে সমস্ত অ্যাডভার্স সিচুয়েশন ওভারকাম করতে হয় কীভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল করে আবার ঝকঝকে পূনর্বিন্যসের মোড়কে সবকিছু নতুনভাবে মুড়ে দিতে হয় এইসব প্যাকেজিং তার মুখস্ত মার্কেটিং আজ হাতের নাগালে একটি বোতামের স্পর্শে খুলে যাচ্ছে বাজার মানুষকে অলস করে দাও শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সে যেন বাজার বাজার যেতে না পারে বাজারকে পৌঁছে দাও তার বাড়ির দরজায় আর ভাবনার মধ্যে যৌক্তিক বিন্যাসগুলো এলোমেলো করে দাও যাতে সে নিজে কিছু ভাবতে না পারে মার্কেট তাকে যা বোঝাবে এর বাইরে সে যেতে পারবে না শঙ্খশুভ্র এই দর্শনকে প্রসারিত করেছে তার জিও হকার নামে একটি কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে প্রেমকেও প্যাকেজিং এর আওতায় ফেলা যায় কী না এই নিয়ে এখন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে সে তার তীব্র বিশ্বাস পৃথিবীর কোন বিষয়ই বাণিজ্যিক পরিষেবার বাইরে নয় সীমা নামের মেয়েটি আসবে বিকেল পাঁচটায় ওকে সেভাবেই বলা আছে সীমার মনস্তত্ত্ব , ভালো লাগার পরিধি , পছন্দ এবং তাকে খুশি করার উপাদান সবকিছুই ডাটাব্যাঙ্ক থেকে দেখে নিয়েছে শঙ্খ সেইমতো প্রোগ্রামিং করা আছে ল্যাপটপে সমস্ত প্যারামিটার টু জেড ফলো করলে সীমা প্রেমে পড়বেই এবং সে শঙ্খ ছাড়া অন্য পুরুষের কথা জীবনে ভাবতেও পারবে না সীমা যথাসময়েই এল কম্পিউটার নির্দেশিত সংলাপ আবেগের তারতম্য অনুসারে ঠিক মেপে বুঝেই বলে চলল শঙ্খ পছন্দের গান শোনাল , খাবার এল সীমা খুব খুশি বলল- তাহলে চল আমি তোমাকে প্রেম দেখাই , শঙ্খ প্রেমের মুর্ত রূপ দেখল - হাই শাঙ্খো ,আই আম প্লিজড , লাভ ইউ এন্ডলেস বলে আকাশের দিকে হাত বাড়াল দিগন্তপ্রসারী শঙ্খশুভ্র বুঝল কম্পিউটার কাজ করছে পরদিন রনিতা , তারপর অসীমা , পামেলা , রুমেলা ......

যাকে যেরকম সময় দেওয়া ছিল এল কারো সাথে কারো দেখা হওয়ার কথা নয় ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু বলে শঙ্খ এক একজন নারীর সাথে কাটাতে লাগল সকাল বিকাল সন্ধ্যে, রাত অদ্ভুত সুন্দর প্রোগ্রামিং কী অপূর্ব ! প্রেমও এবার যন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে তিনদিন পর বিকেলে একটি শপিং মলের সামনে এসে দাঁড়াল শঙ্খ তিনফুট দূরে ওই যে ফুচকা খাচ্ছে ওই মেয়েটা হ্যাঁ ওই তো সীমা কিন্তু ওর তো আজ দিল্লী যাওয়ার কথা সেরকমই তো বলেছিল সেদিন পাশের ছেলেটি তার মুখে একটা ফুচকা গুঁজে দিতে দিতে কি বলছে ফিসফিস করে - কাল সন্ধ্যায় এসো কিন্তু সারারাত মস্তি হবে ... ছিঃ, কোন মরালিটি নেই একরাশ মনখারাপ নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায় একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হল তার এসব জায়গায় সে কখনও আসেনি প্রথম পা রাখল রুমেলাকে দেখে সে চমকে উঠল পর্দা ঢাকা কেবিনের আলোছায়ায় কার ঠোঁটের আলিঙ্গনে ধরা দিচ্ছে সে লোকটাকে নয় রুমেলার দিকেই অপলক চেয়ে আছে শঙ্খ বিরক্তি নিয়ে সে বেরিয়ে আসে এরপর কোথায় যাবে সে ? মনটা দুমড়ে মুচড়ে চৌচির হয়ে গেছে সারারাত ঘুম এলনা ভোর হতেই সে বেরিয়ে পড়ল বনপথ পেরিয়ে নির্জনতার দিকে জঙ্গলের পর জঙ্গল নদীপথও সে পেরিয়ে এল পায়ে হেঁটে দেখল এক যুবতীকে জ্যোৎস্না ঠিকরে বেরুচ্ছে তার গা থেকে একজন যুবক ধরে আছে তার হাত তুমি নীল গোলাপ দেখেছ অরুন্ধতী ? অরুন্ধতী মেয়েটি বলল- কিছুই তো দেখা হয়নি আমার - সত্যিকারের ভালোবাসো নীল গোলাপ ফোটায় দেখবে ? - কীকরে দেখব আমার তো চোখ নেই ছেলেটি তার গালের উপর হাত রাখল এবার বিন্দু বিন্দু নীল জল - এই রঙ নীল গোলাপ হয়ে ফুটে উঠছে আমার শরীরে , দেখো মেয়েটি আবার মাথা নাড়লআমি দেখতে পাচ্ছি না ছেলেটি বললতুমি কেঁদো , না আমার দুটো চোখ দুজনে ভাগ করে নেব কথাগুলোর কম্পন শঙ্খকে তোলপাড় করল সে বুঝতে পারল এই শব্দগুলো কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করা নয় বুকের সেই জায়গা থেকে উঠে আসছে যেখানে সত্যিই নীল গোলাপ ফোটে