গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

মনজিৎ কুমার দাস

প্রথমা


 অতনু এবারই প্রথম মা বাবা, ভাই বোন ছেড়ে এক টানা দু'মাস বাড়ির বাইরে থাকা । স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে পড়া ভাগ্যে জুটতো না শেষমেষ লজিংটা না পেলে । মা বাবা ছেড়ে অতনু একদিনের জন্য কোথায় থাকে নি । স্বাভাবিক কারণেই অতনুর মনটা খারাপ । তারপর বাড়িটাতে লোকজনের সংখ্যাও তেমন নয় । অতনুর ছাত্রী দু'জন ছাড়া ওদের বাবা মা আর একটা দাদা ।পুরনো একতলা একটা দালান । সাকূল্যে তিনটা কুঠুরি । দক্ষিণ দিকের শেষ কুঠুরিতে অতনুকে থাকতে হবে সেটা সে প্রথম যে দিন ওখানে আসে সেদিনই বুঝেছিল ।বাইরের দিকে বেশই বড় সাইজের পাল্লা বিহীন একটা জানালা ।পূর্ব পশ্চিম আড়া আড়ি লোহার শিক না থাকলে সহজেই যে কেউ বাইরে থেকে ভিতরে ঢুকে পড়তে পারে । খাটের নিচের মেঝে ভাঙ্গা, সাপপোকা থাকাও বিচিত্র নয় ! দিনেবেলায় অস্বতিতে না থাকলেও অতনু মনটা রাতের বেলায় ভয়ে কুকড়ে থাকে । সকালে ছাত্রী দুটিকে পড়িয়ে কলেজে ছুটতে অতনু হিমশিম খায় । মাইল পাঁচেক বাসে আর মাইল দেড়েক হেঁটে তবেই কলেজের নাগাল পাওয়া । ছাত্রীদুটোর কাছে অতনু রীতিমতো একজন মাস্টার ।ওরা দু'বোন । বড়টির নাম প্রথমা আর ছোটটির নাম দ্বিতীয়া হওয়া স্বাভাবিক হলেও আসলে কিন্তু তা নয় । পায়েল প্রথমার চেয়ে বছর চারেকের ছোট ,প্রথমা পাঁচ ক্লাশে পড়ে, অতনুর মনে হয় তার বড় ছাত্রীটি শরীর স্বাস্থে আরো দু'ক্লাস উপরে পড়লে মানাতো । অতনু অজপাড়া গ্রামের ছেলে,মেয়েতো দূরে কথা কোন ছেলেকেও সে আজ পর্যন্ত পড়ায়নি । পায়েলকে পড়াতে বেগ পায় না । প্রথমাকে পড়াতে গিয়ে অতনু হিমশিম খায় । সে বুঝতে পারে তার পড়ানো প্রথমার ভাল না । সে ভেবে পায় না কেন মেয়েটি তাকে আর তার পড়ানোকে এমন দৃষ্টিতে দেখে ! একটা কথা অতনুর মনে দাগ কাটে । একদিন তার সমবয়সী একটা ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কাদের বাড়িতে লজিং থাকে । অতনুর মুখ থেকে তার লজিং মাস্টারের নাম শুনে ছেলেটি ফুটকি কেটে যা বলেছিল তার অর্থ ও বাড়িতে যারা লজিং থাকে তারা তো ওই বাড়ির জামাই হয় । অতনু যাচাই করে দেখে ওই ছেলেটির কথাটা মিথ্যে নয় । অতনু ভাবে , ওই বাড়ির জামাই হবার কথা নয় তার । মেয়েটি ফর্সা হলেও তার মুখশ্রী অতনুর মনকে টানে না । আর অন্যদিকে প্রথমা তাকে তোয়াক্কাই করে না । বহু বহু বছর পরে অতনুর মনে পড়ে প্রথমার মুখটা যাকে সে তার জীবনের প্রথম ছাত্রী হিসাবেই পেয়েছিল ।