গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

অনুপম দাশশর্মা

ভাঁওতা নেই এমন ভুতের গপ্পে কিন্তু......

  
ঠাকুর্দা ছিলেন অবিভক্ত ভারতের আর অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার কীর্তিপাশা অঞ্চলের অধিবাসী ও কবিরাজ বৈদ্য। তৎকালীন সরকার কর্তৃক শংসাপত্রও এখনো রয়েছে বাড়িতে। দেশভাগের পর কলিকাতায় সপরিবারে চলে আসার পরেও তাঁর কবিরাজী চিকিৎসা বহাল ছিল। আমার বাড়ি এলাকায় "কবিরাজ বাড়ি" নামেই বহুল পরিচিত। তো, আমার পিতৃদেবের মুখে ঠাকুর্দার অনেক জীবন-গল্প শুনেছিলাম। . শুনেছিলাম দূরের গ্রামে কোন রোগীর চিকিৎসা করে হেঁটে ফেরার পথে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতায় পড়ার কথা। বাবা বলেছিলেন তাঁর বাবা সেই সন্ধের সময় দুজন সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে যখন মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে ফিরছেন, তখন যেন স্পষ্ট দেখছেন আর একটু এগোলেই বাড়ী এসে যাবে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে রান্নাঘরে জ্বলছে কেরোসিনের কুপি। উনি হাঁটছেন পা চালিয়ে অথচ যেন কিছুতেই বাড়ীর কাছে আসা যাচ্ছে না। কিন্তু সেই দেখা যাচ্ছে কুপির টিমটিমে আলো। এভাবে আর একটু এগোতেই হঠাৎ হুড়মুড় করে পথ যেন নীচে নেমে গেল। আচমকা চারপাশ দিয়ে হৈ হৈ মানুষের চীৎকার। দশ বারোজন লোক মশাল বাগিয়ে আলো ফেলতেই তারা দেখল পুকুরে ফাঁদ পাতা জায়গায় আটকে পড়েছে তিনজন। একজন মুখ বাড়িয়ে বলে উঠল, আরে কবিরাজ মশাই ! আপনি এখানে... . ধরাধরি করে তিনজনকে ওপরে তোলা হল। জানা গেল ঠাকুর্দা নিজের বাড়ী ছেড়ে পেরিয়ে পাশের গ্রামের শেষে চলে এসেছেন। আর সেই পুকুরে ফাঁদ পাতা হয়েছিল মাছধরাদের ধরা হবে তাই। রাতে ঠাকুর্দার ধুম জ্বর। . পরদিন সকালে একটু সামলে উঠে ঠাকুর্দা ফিরেছেন তাঁর বাসায়। বাবাকে বলেছিলাম তাহলে কি করে এমন ব্যাপারটি ঘটেছিল। বাবা অম্লান মুখে জানিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসক বাবা আলোভুতের কব্জায় পড়েছিল। . এমন আরেকটি ঘটনা। . কলকাতায় ঠাকুরদা এসে প্রথমে একটি দ্বিতল বাড়ী লিজ নিয়েছিলেন। সেই সময়ের কলকাতায় প্রায়সব বাড়ীর প্রধান ফটকের বাইরে চওড়া রক থাকতো। গরমকালে ঠাকুর্দা তার বাড়ীর বাইরের রকে মশারী খাটিয়ে দিব্য নিদ্রা যেতেন। তো, তেমন এক তপ্ত রাতে ঠাকুর্দা যখন দারুণ ঘুমে বিভোর হঠাৎই খসখস শব্দে ওঁনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিরক্তি ভরা ঘুম মাখানো চোখ মেলতেই দ্যাখেন.... একটা আবছা মূর্তি সাদা কাপড়ে দাড়িয়ে মশারী দু'হাতে তুলে ধরেছে। আর সেই মূর্তিমানের গলা থেকে উপরে মাথা নেই। ঠাকুর্দা এক ঝটকায় উঠে বসে নিজের কাঁধ থেকে পৈতেটা তর্জনীতে তুলে সামনে উঁচু করতেই সেই মূর্তি বেমালুম গায়েব। . জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি বাবাকে, এই ভুতের কি বংশ পরিচয়? বলেছিলেন তাহার শুভনাম "স্কন্ধকাটা ভুত" !