গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শিখা কর্মকার

কুখ্যাত প্রিয় বন্ধু


কলেজে পৌঁছেই  দেখি আবার মারপিট চলছে সেই আগের মত। শহরের কিছু দাদা, যাদের আসার কোন দরকার নেই,  এখানে বসে  থাকার কোন কারন নেই,  তারা সবাই দেখি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত । ক্লাসে ঢোকার আগেই, এস এফ আই দল বলে গেল কানে কানে, “আজকে আবার একটা মারামারি হবে, আগে থেকে কেটে পড়” । কংগ্রেস বলে গেল, “এই সপ্তাহে আর আসিস না। লাশ পড়তে পারে। পরের দিন এলে আমাদের হয়ে নোটগুলো কপি করে রাখিস”।
আমার মতো যারা অনেকেই কোন পার্টিতেই সক্রিয়ভাবে নেই, আমাদের সেই দলটা ধীরে সুস্থে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম । বাস-স্ট্যান্ডে দেখা হল আরও দশজনের সঙ্গে।
“কলেজ আবার বন্ধ?”

“হ্যাঁ, কিন্তু তোরা সবাই দল বেঁধে কোথায় চললি?”
“আজ তিনটে ইউনিভার্সিটির লাস্ট ডেট অ্যাপলিকেশন জমা দেবার, তাই আমরা যাচ্ছি । মেলে পাঠালে যাবে কিনা তার ঠিক নেই। তোর তো রেজাল্ট ভালো হবেই, কোথাও না কোথাও সুযোগ পাবি, আমাদেরই তো চিন্তা, তাই আজকেই না গেলে...”
মনে মনে ভাবলাম,  “আমি জানতাম এই দিনটা আসছে, কিন্তু আজই? আরও একমাস সময় আছে শুনেছিলাম, আজ  আমি অত টাকা নিয়ে বের হইনি, কি করে...।“

আমি ওদেরকে কিছু না বলে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভাবছি কি করা যায় । এরা আবার প্র্যাঙ্ক করছে না তো । কলেজের ব্রেন, সবকিছুতেই অনেকে ডেঁপোমি করে।
দেখলাম তিনজন নতুন প্রফেসরও বাড়ী ফিরে যাবার জন্য আমাদের বাস-স্ট্যান্ডের দিকে আসছেন। তিনটেই কম বয়সী, বেশ হিরো হিরো দেখতে, খুব ফ্রেন্ডলী আর সাহায্য করতেই চায়, সেই পুরনো প্রফেসরদের মতো অতো কোষ্ঠকাঠিন্য ভেতরে নিয়ে কথা বলেননা।  তারা প্রসারিত হাসি হেসে, দু একটা কুশল জিজ্ঞাসার পর আমাকে ডক্টর ঘোষ  জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি বিদ্যাসাগরে, শান্তিনিকেতনে আর প্রেসিডেন্সীতে তোমার অ্যাপলিকেশন জমা দিয়ে দিয়েছ তো ?”
“দিইনি। কেন? ওদের তো একমাস দেরী আছে লাস্ট ডেটের । আমার তো অনেক সময় আছে”। ডক্টর ঘোষ আগ বাড়িয়ে বলে উঠলেন,
“আমার বাবা ওই বোর্ডে আছেন, তিনি বলেছেন, আজই  তোমাদেরকে জানিয়ে দিতে যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন অ্যাপলিকেশন জমা করে  আসা হয় । নইলে পরে হলে ইউনিভার্সিটিতে ঢোকার কোন চান্স পাবেনা। তিনি তার ফোন-নাম্বারও দিয়েছেন, দরকার হলে তাঁকে একটা ফোন করে নিও। এই যে...”

আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। মন নার্ভাস হয়ে ভেতরে বলছে, “এই লো মাদা, এবার কি করি, আমাকে তাহলে তো এখুনি বেরোতে হয়, টাকাপয়সা বা ফোন আনিনি সঙ্গে, বাড়িতে বলে আসিনি। কি করি”। আমাকে ঘামতে দেখে প্রফেসর ঘোষ  বললেন,
“কি ব্যাপার? অন্য কিছু হেল্প লাগবে?”
তাকে আর কি করে টাকার কথা বলি। মাথা নেড়ে না বলে, একটা বন্ধুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি ধার দিতে পারবে কি না সে। দিল সে যথেষ্ট,  যা হোক, কিছু ধার পাওয়া গেল।
বাসে উঠে দেখি বাস ভরে গেছে কলেজের স্টুডেন্টে আর কন্ডাক্টরের মুখ ব্যাজার। আমরা হইহই করে গল্প করতে করতে চললাম। বাড়ির কথা ভাবছিলাম বারবার, কিন্তু খবর দেবার কোন উপায় ছিলনা। তারপরে সবাই তো বলছে, বিকেলের আগেই ফেরা যাবে, বাড়িতে জানবেও না । মা দুর্গাকে স্মরণ করছি মনে মনে আর বাস ছুটছে ধুলো উড়িয়ে ।

দুঘণ্টা বকে  পরে সবাই একটু ঝিমিয়ে পড়ল তখন বাইরের দিকে তাকিয়ে কচি ধানের ক্ষেত আর ইলেকট্রিকের তারে কাজললতা পাখী দেখতে দেখতে যাওয়া, যত রোদ চড়ছে, ঘুম-ঝিমুনিটা বেশ জাঁকিয়ে আসছে ।  হঠাতবাসটা কিসে লেগে থেমে গেল। ড্রাইভার,  কন্ডাকটর, হেল্পার সব বাসের তলায় গিয়ে কি সব করে এসে কয়েকবার স্টার্ট দিতে চেষ্টা করে ফেল করে আমাদের জানিয়ে দিল, “বাস আর যাবেনা আজ”।
আমরা তখন মাঝপথে, যদ্দুর চোখ যায় ভিজে থাকা প্যাচপ্যাচে রাঙামাটির পথ, পাশে শুধু ধানের ক্ষেত । একটা দোকান নেই, কিছু নেই কোথাও । অনেকগুলি কলেজের বন্ধু দেখি ধানের মাঠের আল হয়ে যেতে শুরু করেছে, তাদের কেউ না কেউ আত্মীয়স্বজন আছে এই সব গ্রামে । আর যা অন্যান্য লোকজন আছে তারাও বেরিয়ে গেল। তখন পড়ে রইলাম অনিমেষ আর আমি। আমার মত তারও কোন আত্মীয়স্বজন কেউ কোথাও নেই, তাই কোথাও যাবার প্রশ্ন ওঠেনা ।

চলে যাবার আগে আমাদেরকে বাসের একজনভদ্রলোক বলে দিল যে এখান থেকে তিনমাইল দূরেই নাকি  একটা বড় বাসস্ট্যান্ড আছে, সেখানে গেলে অন্য বাস ধরে আমরা যেতে পারি গন্তব্যস্থলে। সেখানে হেঁটে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। পৌঁছেও সেখানে একঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দেখিএকটা বাস এল, কিন্তু সেটা এতো ভিড় যে স্ট্যানডে আমরা দাঁড়িয়ে আছি দেখেও সে বাস না দাঁড়িয়ে ঝাঁ করে বেরিয়ে গেল। পরেরটাও তাই। তার পরের বাসটা দয়া করে আমাদের নিয়ে গেল আরও দু ঘণ্টার মতো । তারপরে তারও  নাকি ব্রেকডাউন হল, সেও আর যাবেনা । ড্রাইভার দেখি তার জালি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে আলপথে পাড়ি দিল, সঙ্গে হেল্পার আর কন্ডাক্টর, তিনজনে মিঠে পান চিবুতে চিবুতে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে কখন ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল । শুধু একজন রইল বাসে। সে বাসের লম্বা সীটেই ঘুমোবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। বাকী লোকজনও আর একটা কথাও না শুধিয়ে যে যেদিকে পারল হাঁটা দিল।

“মনে হচ্ছে এটা এদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু আমরা কি করে কলেজ বন্ধ হবার আগে গিয়ে ফর্ম জমা দেব আর কি করে সন্ধের আগে বাড়ী ফিরবো ?” অনিমেষের  ফর্সা মুখ তখন দুশ্চিন্তায় লাল। আমার তো কথাই নেই, বেঁচে ফিরলেও বাড়ীতে কচুকাটা করবে, বললেও হয়তো বিশ্বাস করবেনা।   খুব ভাগ্য ভালো যে একটা অটো-রিক্সা আসছিল ওই সময়। সে দাঁড়াতে  তাকে কলেজের কথা বলতে সে বলল, “চলুন তালে”।

যাচ্ছি তো যাচ্ছি । সে এমন এক পথ দিয়ে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে যে কেউ এসে আমাদের খুন করে দিলেও কেউ জানতে পারবেনা। ম্যাপে মিলছে না সেই পথ। তাকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল, “ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে একটা ভুল বাঁক নিয়ে ফেলেছি, এই একটু পরেই বড় রাস্তা আসছে।“ আয়নার মাধ্যমে দেখি সে প্রায়ই আমার দিকে কি রকম একটা লালসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আর দুটি চোখ তার লাল ব্যোম । আমার বুকের ভেতরে একটা হিম স্রোত বয়ে গেল।

 বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল, বড় রাস্তা আর আসেনা, বরং আরও সরু আর ছোট হচ্ছে পথ, আরও বেশী জঙ্গুলে। দুই একটা সাপ পেরিয়ে যাচ্ছে পাশ হয়ে, কুরচি গাছে ফুল, আকন্দের  ঝোপে ঘন হয়ে আছে মাকড়সার বাসা ।  পেয়ারা গাছের ডাঁসা পেয়ারা ঠোকরাচ্ছে টিয়ার ঝাঁক । সূর্য তখন হেলতে শুরু করেছে।  আমার খুব ভয় লাগছে। আমি আর অনিমেষ চোখাচোখি করলাম। সেও একটু ভয় পেয়েছে বোঝা গেল। সে বুদ্ধি করে অটোওয়ালাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “আজ সন্ধেতেই কাকুর সাথে দেখে হবে, জানিসই তো সে এই অঞ্চলের পুলিশদের বড়বাবু, ওর সঙ্গে ডিএমের খুব চেনা জানা, ফেরার ব্যবস্থা কাকুই করে দেবে।" তখন দেখি অটো আরও স্পীডে ছুটছে। দশ মিনিট এমন করে যেতে যেতে, আরও একটু এগোতেই মানুষের গলার সাড়া পেলাম। দেখি, একটা চায়ের দোকানে কিছু লোকজন চা খাচ্ছে । অটোওলাকে বললাম “আমরা একটা করে চা নেবো, এক সেকেন্ড দাঁড়াও” । সে চাইছিলনা দাঁড়াতে এক্কেবারেই কিন্তু আমরা জোর করাতে বাধ্য হল।  তাকে দাঁড় করিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে যারা সব বসেছিল তাদেরকে যখন কলেজের কথা জিজ্ঞেস করলাম তখন দেখি অটো-রিক্সা পাঁইপাঁই  করে দৌড় দিল। টাকা পর্যন্ত নিলনা।  আমি আর অনিমেষ চোখে চোখে কথা বললাম। ওর দিকে আমার এতক্ষণে ভালো করে তাকানোর ফুরসত পেলাম। ওর মুখটা রোদে আর চিন্তায় বদলে গিয়েছিল, এখন দিকে আরও অনেক বেশী লাল, কেমন যেন অস্বাভাবিক রকমের লাল আর অদ্ভুত  ফুলো ফুলো ।
“তোর কি শরীর খারাপ লাগছে অনি? কি ব্যাপার বলতো? তোকে তো এমন দেখতে লাগেনা এমনিতে । কি ব্যাপার...?” আমার কথা শেষ হবার আগেই দেখি সে হড়হড় করে বমি করতে শুরু করেছে। ভাগ্য ভালো সে তখন দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে একটা ঝোপের কাছে গিয়ে বমি করছে।  দোকানে বসে ছিল কয়েকটা আমাদেরই বয়েসি ছেলে। অনিমেষের অবস্থা দেখে ছুটে গিয়ে একজন তাকে ধরে থাকল তার যতক্ষণ না বমি করা শেষ হল। তারপর ঠাণ্ডা জল দিল মুখ আর হাত-পা ধুতে।

“আপনিই দুটো চা খেয়ে নিন দিদিভাই, ও মনে হচ্ছে এখন খেতে পারবেনা”। দোকানী আমার সামনে এক ইঞ্চি উচ্চতার দুটি ভাঁড় রেখে গেল, তাতে দুদাগ ওষুধের পরিমানের চা, আর দুটো রাশিয়ান নারকেল বিস্কুট । আমিও খেতে পারলাম না। তবু দাম দিলাম। অনিমেষের  দিকে তাকালাম; সে বেচারী এখন কাঁপতে শুরু করেছে। আমি যে এখন কি করি। আমারও কান্দু কান্দু অবস্থা। ওরা অনিমেষকে ধরাধরি করে এনে বেঞ্চে শোয়াল আর পাশের গ্রামের অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করল যততাড়াতাড়ি পারে আসার জন্য ।

“কি হয়েছে ওর, আপনারা  কি জানেন” ? আমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম।
“আজকাল এখানে কি একটা পোকা কামড়ে দিলে এই রকমের অ্যালার্জি হচ্ছে, আর হলে পরে, যদি তারা ঠিক সময়ে হাসপাতালে না যাচ্ছে বা ওষুধ না পড়ছে তাহলে তারা মারা যাচ্ছে । কাছেই হাসপাতাল, ওরা আসছে, গিয়ে দুটো ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলে আর ভয়ের কিছু নেই। হয়তো অটোতে আসতে আসতে কামড়েছে । শুধু বুঝতে পারছিনা ব্যাটা আপনাদের কেন ওই বুনো পথে নিয়ে যাচ্ছিল । কলেজ তো ওদিকে নয়, একটা তিন বছরের বাচ্চাও জানে এই অঞ্চলে । ওর কিছু খারাপ মতলব ছিল মনে হচ্ছে, তাই আমাদের দেখে পালিয়ে গেল।“
আমার তখন অনিমেষের অবস্থা দেখে হাত পা অবশ হয়ে আসছে। ওরা সবাই গল্প করছে গত মাস থেকে আজ পর্যন্ত কটি সোমত্ত যুবক যুবতী মারা গেছে অ্যালার্জি  পোকাটির কামড়ের ফলে  ।  অনেককেই রাতে ঘুমোবার সময় নাকি কামড়ে ছিল, তারা বুঝতে পর্যন্ত পারেনি,  ভেবেছিল সকালে উঠে হাসপাতাল যাবে তার আগেই ফক্কা...। আমি অনিমেষের দিকে তাকাতে পারছিনা, ওর মুখ এখন বীচের ভলিবলের মত ফুলে গেছে, ছেলেটাকে আর চেনা যাচ্ছেনা । সেও যেন আমাকে আর চিনতে পারছে না, কাঁপুনিটা বাড়ছে ।

দশমিনিট লাগলো এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছতে কিন্তু মনে হচ্ছিল আমি সেখানে সারা জীবন অপেক্ষা করছি। অনিমেষকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি তারা আমাকে উঠতে দিলনা, বাড়ির লোক না হলে নাকি...।

ওরা তাকে নিয়ে চলে গেল, আমার হাতে একটা কাগজে তাদের হাসপাতালের নাম,  ঠিকানা, আর  ফোননাম্বার দিয়ে। তখন চারটে কুড়ি বেজে গেছে, কলেজের অফিস বন্ধ হবে পাঁচটায় । আমি আর আশা করছিনা যে যাবো কি কোন কাজ হবে। ভাবছি আমি কেমন করে বাড়ি ফিরবো । আমি বাড়ি গিয়ে অনির মাকে কি বলবো, কি করে মুখ দেখাবো । আমাকে চিন্তিত দেখে যে ছেলেটি সারাক্ষণ চুপ করে বসেছিল আর সবাই তাকে শুধিয়ে শুধিয়ে তবে কাজ করছিল সে খুব নরম গলায় ধীরভাবে বলল,
 “কি এত ভাবছেন? এতদুর যখন এসেই পড়েছেন, অ্যাপলিকেশনটা না হয় জমা দিয়ে যান” ।
“কিন্তু আমি তো জানিনা সেই ইউনিভার্সিটিটা বা কলেজটা কোথায় বা কি করে যাবো ...”
“আরে আসুন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়টা খুবই কাছে।  এই পুটকিদা স্কুটারটা বার করনা ভাই।“
দেখি পুটকি নামের এক বেশ মোটাসোটা লম্বা চওড়া লোক কোথা থেকে একটা কালো লেদারে আবৃত এক নতুন ঝকঝকে স্কুটার গড়িয়ে নিয়ে এল। সেটা যেখুব দামী স্কুটার তা দেখেই বুঝলাম।
“এই যে অভিদাদাবাবু। আর কিছু লাগবে”?
“না গো । মায়ের জন্য দুটো নারকেল দোকান থেকে কুরিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসতে পারলে ভালো হয়। পুজো আছে মায়ের, আর ফুল।“
“সে চিন্তা করবেন না অভিদাদাবাবু, সে আমি দিয়ে আসবো । আর কিছু?”
“না, পুটকিদা, আর কিছু লাগবে না, মা চিন্তা করলে বোল এক বন্ধুর সাথে কথা বলছি, একটু পরেই আসছি”। 
“আর আপনি আসুন, চলুন ওই ইউনিভার্সিটিতে যাই” ।
“কিন্তু ...”
‘আরে চলুন, তারপর ওখান থেকেই একটা ভালো ব্যবস্থা করে দেবো বাড়ী ফেরার... এখানে বসে থাকলেও কিছু করা যাবেনা । বাসুদা তো আধ ঘণ্টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেবে। তখন যত শেয়াল বা অন্য বুনো জীবজন্তু আসতে শুরু করবে। যাওয়া ছাড়া আপনার কোন উপায় নেই।  ঠিক আছে? সাবধানে চড়ে বসুন, আর এই যে হেলমেটটা পরুন ।”

আমার দুচোখ জলে ভরে এল কৃতজ্ঞতায় । আজ এদের জন্যই অনিমেষ হয়তো বেঁচে যাবে প্রানে, হয়তো আমি বাড়ি ফিরতে পারবো নিরাপদে আজ রাতেই।
তখনো  কুড়ি মিনিট বাকী ছিল কলেজের অফিস বন্ধ হবার, কিন্তু সবাই সব বন্ধ করে চা আর শিঙাড়া খাচ্ছে আর জমিয়ে গল্প করছে ক্যান্টিনে বসে।
    অভি নামে এই ছেলেটি স্কুটার রেখে কাছে যেতেই সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে বলে,
“কি ব্যাপার ? এদিকে আজ যে? কাজ ছিল?”
সে সবিনয়ে বলে, “আরে আপনারা বোধ হয় আজকের মতো অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন, আপনাদের কাছেই তো এলাম এই ছোটবেলার বন্ধুকে নিয়ে, তা যদি বলেন, কাল আসবো না হয়।“

তারা সবাই হাঁ হাঁ করে উঠে বললেন, “না না সেকি অফিস তো বন্ধ হয়নি। কেউ আসেনি বলে একটু চা খেতে এয়েচি,  এই যে মামনি এদিকে এসো, কি কি চাই বল ।“ দু মিনিটের মধ্যে আমার আর অনিমেষের সব কাগজ জমা দেওয়া, ভালো প্রফেসরদের ক্লাসে নাম লেখানো, স্কলারশিপের জন্য আবেদন, নবীন বরনের কার্ড হাতে নিয়ে ফেরা, ফটো তুলে, কেটে তা ফর্মে সাঁটিয়ে দেওয়া...সব ঝটপট করে হয়ে গেল। মনে মনে ভগবানকে যে কত ধন্যবাদ দিচ্ছি। ফেরার পথে সে বলল,
“আপনাকে আমি দেখেছি কোথায় যেন । কোথায় বলুন তো ? আপনি কি লেখালেখি করেন? গেছেন কখনো কফিহাউসে, জীবনানন্দ হলে বা..”
“গেছি তো সবগুলোতেই। আপনিও লেখেন নাকি? কি লেখেন?”
“ওই দুএকটা কবিতা আর গল্প এই আর কি, তেমন কিছু না। আপনাদের গ্রুপের ছবি দেখেছি ম্যাগাজিনে আর আনন্দবাজারে, অনেক ফেমাস লেখকদের সঙ্গে ওই সুনীলবাবু,মহাশ্বেতাদেবী...তাইনা”।আমি ওই নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে খুব নম্র ভাবে অনুরোধ করলাম,
“আমাকে একটু ঠিকঠাক বাসে বা ট্রেনে উঠিয়ে দেবেন যেটা আর ভাঙবেনা বা আমাকে মাঝপথে অসহায়ের মত ফেলে চলে যাবেনা ?” একটু চেনাজানার কথা উঠতেই সাহস করে বলে ফেলি।
“সেতো নিশ্চয়ই । তার আগে যে আপনাকে আমার হয়ে দুটি কাজ করতে হবে”।
“কি কাজ?”
“আমার এই লেখক অটোগ্রাফ বইয়ে সাইন করতে হবে। আর আমার সঙ্গে বসে একটু চা খেতে হবে।“

সে বলতেই বুঝলাম সারাদিন ধরে না খাওয়াতে,এই ছোটাছুটিতে আর ভয়ে আমি প্রায় মরে যাচ্ছি । তার স্কুটারে করেই গেলাম ট্রেন-ষ্টেশনে, সেখানের মধ্যে সবচাইতে ভালো রেস্টুরেন্টে সে আমায় নিয়ে গেল। সেখানেও একই ব্যাপার, একেবারে রাজার আদর। শুধু চা নয়, আমি পুরো ডিনার খেলাম। এতো খিধে ছিল বুঝতে পারিনি। দোকানী কিছুতেই টাকা নেবেনা, বলবে না পর্যন্ত কত টাকার বিল হয়েছে। কি যে ব্যাপার কিছু বুঝছি না। তবু  চারশোটাকা জোর করে দিলাম। আর জানলাম যে ওখান থেকে দুর্গাপুর যাবার  ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ।
“ঈস, আমি তো জানতাম না এখান থেকে ট্রেন যায় । জানলে কে অত কষ্ট করে প্রান হাতে নিয়ে...”
“অনেকেই জানেনা, এটা নতুন ট্রেনলাইন। এখনো কি সব এক্সপেরিমেন্ট চলছে। সে যাই হোক, চলুন”। সে স্কুটার জমা দিয়ে আমার পাশে এসে বসল ।
“আপনিও সঙ্গে যাবেন ? তাহলে তো খুবই ভালো হয়।“ আমি গদগদ। সে উত্তর না দিয়ে হাসপাতালে ফোন করে অনির খবর নিল।  মনে মনে বলি কি গাম্ভীর্য নিয়ে থাকেরে বাবা, এই তো একফোঁটা ছেলে। সে যাই হোক  সে সঙ্গে থাকাতে সব কাজ কিন্তু পটাপট হচ্ছে সেটা আমি লক্ষ্য করছি।
“ও, রুগী নাম্বার ৭২১ ভালো আছে? কাল সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে? আর বিল? বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন রুগীর সাথে? ধন্যবাদ।“
“আপনার বন্ধু ভালো আছে, ঘুমোচ্ছে । ওর মুখের লাল রঙ আর ওই ফুলে যাওয়াটা অনেক কমে গেছে। কাল সকালে বাড়ি ফেরত যেতে পারবে। ভাগ্যিস নেমেছিলেন নইলে তাকে আর হয়তো বাঁচানো যেতনা” ।

শুনে বুক থেকে যেন একটা বিশাল ভার নেমে গেল। তার বদলে আমার দুচোখ ভরে গেল জলে, বাঁধ না মেনে তারা গড়িয়ে পড়ল ট্রেনের সীটে, কিছু উড়ে গেল উল্টো দিক থেকে আসা বাতাসে।  তখন রাত নেমে গেছে, অন্ধকারে ট্রেন ছুটছে দুর্গাপুরের দিকে । কম পাওয়ারের একটা বাতির নীচে দুজন সদ্য চেনা যুবক যুবতী ।  যা চাইনা তাই হচ্ছে, এই নিরালায় অন্ধকারে ট্রেনে করে যাচ্ছি। এখানে কিছু না হলে বাড়িতে জানলে খুব বকুনি আছে কপালে।
ওই নীরবতার ভেতর অভি হঠাত  নেশাগ্রস্তের মত ঘোরলাগা গলায় বলল, “কাঁদলেও আপনাকে যে কি সুন্দর দেখতে লাগে, আপনি হয়তো জানেন না। আর অন্য সময় তো তুলনাই নেই। কারোকে কিছু বলার আগেই  আপনার জন্য সারা পৃথিবী কাঁধে গামছা নিয়ে পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত, আপনি কি তা জানেন ম্যাডাম”?

এমন ড্রামাটিক ভাবে সে জোক করল যে না হেসে পারা গেলনা। সুপার এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট চার ঘণ্টা লেগেছিল দুর্গাপুরে পৌঁছতে । সহজ সরল গল্পগাছায় কখন যে সেই সময়টুকু পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। অভি শুধু যে রসিকতা করতে পারে আর ওর কথা সবাই মেনে চলে তা শুধু নয়,  ওর মধ্যে কি অপূর্ব  যে একটা সুন্দর মনের মানুষ আছে তা বেশ বুঝেছিলাম। ট্রেন থেকে নামতেই ষ্টেশনে দেখা হয়েছিল প্রফেসর ঘোষের  বাবার সঙ্গে। দুজনেই দুজনের ফটো আগে থেকে দেখেছি বলে, আর প্রফেসর আমাদেরকে একটু আভাস দিয়ে রেখেছিলেন বলে খুব সহজে চিনতে পেরেছিলাম।  উনি আমার যাত্রার অ্যাডভেঞ্চারের কথা শুনে অবাক হয়ে  বলেছিলেন, “তুমি যে বেঁচে আছো কি করে,সেটাই আমি ভাবছি। ওই বাসগুলো প্রতিদিনই  বাস বোঝাই করে  যাত্রী নিয়ে গিয়ে অমনি অসহায় ভাবে তাদের ফেলে চলে যায় । ওদের শাস্তি হওয়া উচিত।তা কে তোমাকে সাহায্য করলো কলেজে পৌঁছতে”?

অভি  তখন জলের বোতল কিনছে পাশের দোকান থেকে। আমি তাঁকে দেখাতেই প্রফেসরের বাবা হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। আর কথা বললেন না আমার সঙ্গে। আমি তাঁর ব্যবহারে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। তিনি এমন স্ট্যাচু হয়ে গেলেন যে আর নড়লেন না বা আর কোন কথাই বললেন না, একটু অপেক্ষা করে আমি চলে গেলাম।

সেদিন অভিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিয়ে বাড়িতে এসে শুনি এখানে নাকি একটা বড় ভুমিকম্প হয়ে গেছে,আর তার উত্তেজনায় বাড়ির লোক ভুলে গেছে আমাকে জেরা করতে। ওদের হয়তো মনে পড়বে কাল, কিন্তু সে এক নতুন দিন । কাল অনিকে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে, আর বাড়ির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

পরের দিন অনিমেষের বাড়িতে গিয়ে সব বলে ঠিকানা দিয়ে আসার সময় অনির মায়ের আমার হাত দুটি ধরে সে কি কান্না। তিনি চা আর  প্রসাদী লুচি-মিষ্টি না খাইয়ে ছাড়লেননা ।  বললেন, “অভি ফোন করেছিল কাল রাতেই, বলেছিল যে সে তাকে নিজে ট্রেনে করে নিয়ে এসে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাবে । ওরা এলো বলে।“
বলতে বলতেই খগেন কাকুর মানে অনির ছোটকাকার গলায় হইচই, “অনি এয়েচে, অনি এয়েচে।“

অভি আজ হিরো । সে আমাকে সুস্থভাবে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে গেছে। অনির জীবন রক্ষা করেছে। আমাদেরকে সাহায্য করেছে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় সব কাগজপত্র জমা দিতে। যখন খিধেয় মরছিলাম, খাইয়েছে। আর কি চাই। তার ওপর সে সুপুরুষ আবার কবিতা লেখে। বুঝতে পারছিলাম না কেন খুব ভালো লাগছে, পৃথিবীটা এত সুন্দর লাগছে।

অনিমেষের মা দুপুরে অভিকে না খাইয়ে ছাড়বেননা। গল্প করতে করতে শুনলাম অভির নাকি ছোটবেলায় এক্সিডেন্টের ফলে মা বাবা দুজনেই মারা যায় । দুই বছর
বয়স তখন, তাকে পথের ধারে একলা কাঁদতে দেখে কেউ একজন তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যায় । সে সাতদিন পরে এসে দেখে কেউ আসেনি বাচ্চাকে নিতে, তো সেই কাছে রাখে আর আশা করে তার বাড়ীর লোক কোনোদিন এসে নিয়ে যাবে । এখন কুড়িবছর কেটে গেছে...অভি এখনো ভাবে হয়তো কেউ কোনদিন তাকে ফেরত নিয়ে যাবে । যে তাকে তুলে এনেছিল সে উপায় না দেখে নিজের বাচ্চার মতো করে তাকে বড় করে তুলেছে। অভির ইচ্ছে যে ওই কাছাকাছি জায়গায় একটা ফ্রী কম্পিউটার-সেন্টার খুলবে যেখানে গ্রামের সবাই এসে সব শিখতে পারবে। কাছে একটাও লাইব্রেরী নেই, এর মাধ্যমে যদি মানুষের কাছে দরকারী তথ্য মেলে।

এইসব কথাবার্তা হতে হতে দরজার বেল বাজলো আর আমাদের কলেজের  প্রফেসর ঘোষএসে ঢুকলেন। অনির মা তা জেনে আবার দৌড়লেন তার জন্য  চা জলখাবার আনতে । প্রফেসর ঘোষ  এসেছেন আমার সঙ্গে দুটি কথা বলে চলে যেতে । তিনি আমাকে বললেন, “ খুব প্রাইভেট আর ভীষণ দরকারী কথা, বাইরে না গেলে বলতে পারবোনা আমি যা বলতে এসেছি।“
বাড়ির বাইরে যেতেই তিনি রাগত ভাবে বললেন, “তুমি কি এই অভিকে চেন? কেন তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছ?”
“না, ওইখানেই চায়ের দোকানে আলাপ। ও তো ভীষণ হেল্পফুল ছেলে। বলতে পারেন ওর জন্যই আমরা দুজনেই প্রানে বেঁচে ফিরে এসেছি। প্রশ্রয় দেবো কেন? “
“আমার বাবা সেদিন ওকে তোমার বন্ধু হিসেবে দেখে শক পেয়ে গেছিলেন, আর কথা বলতে পারেননি” । 
“তাই তো  মনে হল, কিন্তু কেন”?
“ও ওই অঞ্চলের একটা খুব কুখ্যাত গুণ্ডা পরিবারের ছেলে। ও যাকে বাবা বলে, সে পারেনা এমন কোন কাজ নেই। পারলে যতটা সম্ভব দূরে থেকো, তোমাদেরই মঙ্গল হবে তাতে। এটুকু বলার জন্য আমার আসা আজ।“
“অভি কি কিছু করেছে কোনদিন ? পুলিশের কাছে রিপোর্ট আছে তেমন?”

কেমন যেন জেদ চেপে গেল আমার। বুকের ভেতরে কোথায় গিয়ে ধাক্কা মেরে কে যেন একটা আশার চারাগাছকে খুন করে দিচ্ছে। আর কি ভীষণ যে কষ্ট হচ্ছে যেন আমি নিজেই ভুমিকম্পের ফলে বাড়ির তলায় চাপা পড়ে গেছি, নিঃশ্বাস নিতেও পারছিনা। আমার প্রিয় প্রফেসরের কথা আমার এখন বিশ্বাস হচ্ছেনা। যদিও জানি উনি উলটোপালটা কিছু বলবেন না, বানিয়েও বলবেননা   ।

“না, ওর নামে কিছু নেই । তবে তেমন কারণ আছে বলেই ওদের দেখলে ওই অঞ্চলের সবাই ভয়ে কাঁপে । তুমি বুঝতে পারনি কেন সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ হয়ে গেল?  তুমি আর অনিমেষ আমার স্টুডেন্ট, হয়তো ওই কলেজে ভর্তি হবে, হয়তো বন্ধুত্ব হবে ওদের সাথে, তাই আগে থেকে সাবধান করে দিতে চেয়ে এটুকু জানিয়ে গেলাম”।

যখন ফিরে এলাম অনিমেষের বাড়িতে ওই দশমিনিটের মধ্যেই প্রসাদ সঙ্গে নিয়ে অভি নাকি ব্যস্ততার অজুহাতে চলে গেছে। প্রফেসরকে আর তার বাবাকে দেখেই সে বুঝতে পেরেছে যে আমরা সব জেনে ফেলেছি। তখন আমি ভাবছি আর কি দেখা হবে ওর সঙ্গে? আমি কি সাহস পাবো কখনো  তার সাথে বন্ধুত্ব করার। সে কি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে কবিতার ক্লাসে? যে অটোওয়ালা আমাদেরকে প্রায় মেরে ফেলতে বা বিপদে ফেলতে যাচ্ছিল তার নাম কেউ জানেনা, যে ক্লার্কগুলো অফিসে বসে  সময়ের কাজ সময়ে না করে সবার কাছে ঘুষ নেয়, বা ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়, তারা কুখ্যাত নয়, যে বাস কোম্পানি বাস বোঝাই লোক নিয়ে গিয়ে মাঝ মাঠে ফেলে চলে যায়, তারা কেউ খারাপ নয়।  কুখ্যাত  হল তারা, যারা আমাকে আর আমার বন্ধুকে দরকারে সাহায্য করেছে, বাড়ি পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে গেছে। এমনও  হতে পারে যে অভির পালিত বাবা হয়তো ভালো নয়, কিন্তু অভিও যে খারাপ তা কি করে সবাই জানে? অভির বাবাও যদি তেমন খারাপ হতো তাহলে সে একটা গৃহহীন বাচ্চাকে পড়াশুনা শিখিয়ে বড় করে তুলতো না। হয়তো কেউ চায় ওর বাবার অপপ্রচার হোক, কিন্তু কেন? অনি সুস্থ হলে আমরা দুজনে গিয়ে এই রহস্যের কারণ কি তা খুঁজে বার করব। অনি ভালো হয়ে উঠুক, ওর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। তারপরে কি হবে, বা কি করবো আমরা ভবিষ্যৎই বলতে পারে।  আমি কিন্তু লোকের উড়োকথা শুনে পিছিয়ে যাবো না, আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো ।