খুব দরকার ছিল রাহুলের একটা
মেডিক্যাল সার্টিফিকেট । কিন্তু ১৫ই আগস্ট সারা ভারতে ছুটির দিন । এলাকায় ডাক্তার
পাওয়াই ভার । নানা ফার্মেসিতে ও ঘুরলো । কিন্তু সবাই ওকে বলল,’’আজ কাউকে
পাবেন না ।‘’ বেশ হতাশ হল রাহুল । শেষে খোঁজ পেলো এক
ডাক্তারবাবুর । স্মৃতিকণা ফার্মেসিতে বসেছে । রাহুল শুনেই ছুটে গেলো সেখানে ।
কিছুক্ষণ বাইরে বসে থাকার পর রাহুল
শুনল ডাক্তার প্রদীপ্ত রায় বসেছেন । সে শিশু-বিশেষজ্ঞ । প্রদীপ্ত নামে অনেককেই
চেনে রাহুল । তাই নামটা নিয়ে ওর ভাবার সময় ছিল না । ফার্মেসির এক ছেলে বলল রাহুলকে,’’অপেক্ষা করুন
। স্যারের সঙ্গে একটু কথা বলে আসি ।‘’ সে ছেলে রাহুলকে
বেশ চেনে । ও স্থানীয় কেদার স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ।
একটু পরেই ছেলেটি এসে রাহুলকে
স্মিত হেসে বলল,’’আরে,আপনার নাম করতেই স্যার লাফিয়ে উঠলো । আপনি
তো ডাক্তারবাবুর স্যার । তা উনি বললেন স্যারকে একটু অপেক্ষা করতে বল । আমি
রোগীগুলো দেখেই ডাকছি ।‘’ তার কথা শুনে রাহুল উল্লসিত ।
চোখের কোণে জল এলো । প্রদীপ্ত নামটা তখন ওর মনের মধ্যে আন্দোলিত করতে থাকলো খুব ।
তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো ।
শিক্ষক-ডাক্তার মুখোমুখি কিংবা পিতা-সন্তানের মধ্যে অনেকদিন পর দেখাদেখি ।
প্রদীপ্তকে দেখে এবার মধ্যবয়স্ক রাহুল নিজেই প্রায় লাফিয়ে উঠলো । মুখ-ভরা হাসি ।
হাসি আর থামে না । রাহুলকে প্রদীপ্ত এক-মুখ হেসে বলল,’’বসুন,স্যার । কতদিন যে আপনাকে দেখিনি । মনে পড়ে খুব আপনার মুখটা । এখনো বুঝি
সেই গো-বেচারা আছেন ? ছাত্ররা এখনো বিরক্ত করে আপনাকে ?’’
ছাত্রের কথায় রাহুল বেশ মজা পেলো । লজ্জাও পেলো খুব । আমতা আমতা
করে বলল,’’বুড়ো হতে থাকলে মানুষ তেজী হয় । জানিস তো ?’’
প্রদীপ্ত হেসে ফেলে ওর সঙ্গে সহমত হল ।
তারপর আর কি । রাহুলের কথামতো
প্রদীপ্ত একটা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট লিখে দিলো । রাহুল তা হাতে নিয়ে ওকে বলল,’’কত দিতে হবে
রে তোকে ?’’ শুনে ভারি লজ্জা পেলো প্রদীপ্ত ।
অস্ফুট-স্বরে বলে উঠলো,’’কি যে বলেন স্যার । এই প্রথম
বুঝি আমাকে পাপ কাজ করতে শেখাচ্ছেন ?’’ ওর কথা শুনে রাহুল
বাক্যহারা । চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো । হাতে পয়সা ছিল না । এক বন্ধুর কাছে থেকে
কিছু এনেছিল ফিজ দেবে বলে ।
হঠাৎ রাহুল প্রদীপ্তর মাথায় হাত
দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলো কীসব যেন । প্রদিপ্ত দাঁড়িয়ে উঠে রাহুলকে প্রণাম করে
বলল,’’এই আশিস অনেক-অনেক চাই,স্যার । অনেক পেন্ডিং
আছে কিন্তু ।‘’ তারপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের
সাগরে নিজেদের ভাসিয়ে দিলো ।
বাইরে এসে রাহুল মহানন্দে এক
প্যাকেট উইলস্ ফ্লেক কিনে বসলো । মনে মনে বলল,এ আমার ছেলের টাকায় কেনা । বৌ কিছু
বললে আচ্ছা করে শুনিয়ে দেবো না ? ইয়ার্কি পায়া হ্যায় ?
পরে অবশ্য রাহুলের বৌ সব শুনে খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো,’’ছেলের দেওয়া অমৃত তো । আমার কিছু বলার নেই । যত পারো ধোঁয়া ছাড়ো । এক
প্যাকেটের বেশী তো নয় ।‘’