টর্চার
কৃশানু আমার বন্ধু । ঠিক বন্ধু না বলে আমাকে ওর ফ্যান বলাই
ভালো। এমন মেধাবী ছেলে জীবনে দেখেনি। যেমন মেধা তেমন সাহস । শরীরেও অসুরের শক্তি।
স্বভাবে কিছুটা বোহেমিয়ান। ক্লাস ইলেভেন থেকেই মদ আর গাঁজার সঙ্গে বন্ধুত্ব।
চেহারাটাও হলিউডের অ্যাকশন হিরোর মতো। যা কিছু পড়াশোনা গভীর রাতে। দিনে আড্ডা অথবা
ঘুম। তবুও ডিসট্রিক্টে ফার্স্ট হল। খড়গপুরে আই আই টি পড়তে গিয়ে র্যাগিং করতে আসা এক
সিনিয়র দাদাকে প্রচণ্ড মারধোর করে পালিয়ে আসে। একটা বছর নষ্ট করে ফিজিক্সে অনার্স
নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে পড়তে যায়। কিন্তু সেখানেও রকমারি হুজ্জতিতে জড়িয়ে পড়ে।
কৃশানুও অনিকেতকে ভয় পায়! ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত হই। মনে মনে অনিকেতের একটা ছবি কল্পনায় তৈরি করে নিই। এমন পারসোনালিটির সঙ্গে পরিচিত হতেই হবে। অনিকেতকে আমাদের ঠেকের আড্ডায় আনার জন্য কৃশানুকে রিকোয়েস্ট করি। কৃশানু আঁতকে ওঠে – ‘ওকে মালের ঠেকে! তুই কি পাগল হলি’ ?’ আমি বললাম – ‘এখানে কেন আনবি ? কাল বিকেলে হ্যাপিদার চায়ের দোকানের আড্ডায় নিয়ে আয়’।
পরের দিন হ্যাপিদার দোকানে অনিকেতকে দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক। রোগা হাড়-সর্বস্ব চেহারা। চোখের নীচে অপুষ্টির গভীর কালি। কেমন বোকা বোকা ভীতু ভীতু হাবভাব। স্মার্টনেসের সামান্য চিহ্ন নেই। কৃশানুকে একা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলি – ‘এই কাঁকলাসের ভয়ে তুই কাত ? একে দেখেই তোর সব ভোল্টেজ ডাউন’?
এক
বছরের মধ্যেই সেখানকার পাঠ চুকিয়ে মালদার এই লোকাল কলেজে গ্যারেজ হল। এখানেও হঠাৎ
পড়া বন্ধ করে এল আই সি –তে
ক্ল্যারিকাল পোস্টে জয়েন করে। শুভানুধ্যায়ীরা প্রতিভার এই চরম অপচয়ে দুঃখিত।
আমাদের আনন্দের সীমা নেই। প্রতি মাসে ওর বেতনের পর আমাদের মজলিশের স্ট্যান্ডার্ড
বেড়ে যায়। মানে বাংলার বদলে লক্ষ্মণের দাদা, আর চানাচুরের বদলে পকোড়ার চাট। কিন্তু
সাত-আট মাস পর থেকেই ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। ওর নেশার মাত্রা ক্রমশ
কমে এলো । মাঝেমধ্যে ওকে কিছুটা জোর করেই আমাদের ঠেকে বসাতাম। আমাদের ঠেকে ওর
অফিসের এক এজেন্টও থাকত। তাকে বারবার সতর্ক করে বলত এই মদ খাওয়ার খবর যেন অফিসে
অনিকেতের কানে না যায়। অনিকেতের বাড়ি জলপাইগুড়ি। কৃশানুর সমবয়সী। একই দিনে এল আই
সি- তে জয়েন করেছে।
কৃশানুও অনিকেতকে ভয় পায়! ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত হই। মনে মনে অনিকেতের একটা ছবি কল্পনায় তৈরি করে নিই। এমন পারসোনালিটির সঙ্গে পরিচিত হতেই হবে। অনিকেতকে আমাদের ঠেকের আড্ডায় আনার জন্য কৃশানুকে রিকোয়েস্ট করি। কৃশানু আঁতকে ওঠে – ‘ওকে মালের ঠেকে! তুই কি পাগল হলি’ ?’ আমি বললাম – ‘এখানে কেন আনবি ? কাল বিকেলে হ্যাপিদার চায়ের দোকানের আড্ডায় নিয়ে আয়’।
পরের দিন হ্যাপিদার দোকানে অনিকেতকে দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক। রোগা হাড়-সর্বস্ব চেহারা। চোখের নীচে অপুষ্টির গভীর কালি। কেমন বোকা বোকা ভীতু ভীতু হাবভাব। স্মার্টনেসের সামান্য চিহ্ন নেই। কৃশানুকে একা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলি – ‘এই কাঁকলাসের ভয়ে তুই কাত ? একে দেখেই তোর সব ভোল্টেজ ডাউন’?
কৃশানু
করুণ মুখে বলে ‘আমার চরিত্রটাই নষ্ট করে দিল। আমি নেশা করছি শুনলেই ভীষণ কষ্ট পায়।
আমার সঙ্গে কথা বন্ধ করে গুম মেরে বসে থাকে, রিসেসের সময় টিফিন করতেও যায় না। টর্চার,
টর্চার, মারাত্মক টর্চার। এই টর্চার যে কি ভয়ানক
তুই বুঝবি না’। আমাকে টর্চার করার মতো কোনো বন্ধু নেই ভেবে জীবনে এই প্রথম
কৃশানুকে আমার হিংসে হল।